সরকার ঘোষিত ১১ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটির মধ্যেই পোশাক শ্রমিকদের অমানবিকভাবে কর্মস্থলে ফিরতে বাধ্য করায় মালিকদের তীব্র সমালোচনা করেছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট খাতের ও অন্যান্য মন্ত্রী এবং জনপ্রতিনিধিদের অনেকেই পোশাকশিল্পের মালিক হওয়া সত্ত্বেও তারা বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এবং শ্রমিকের স্বার্থ সুরক্ষায় কার্যত ব্যর্থ।
গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, মালিকপক্ষের জাতীয় স্বার্থ পরিপন্থী এই অবিবেচনাপ্রসূত স্বার্থপর আচরণে লাখ লাখ শ্রমিক এবং কার্যত গোটা দেশেই করোনাভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ভয়াবহ ঝুঁকিতে পড়েছে। চাকরি বাঁচাতে শ্রমিকরা যেভাবে পায়ে হেঁটে কাজে যোগ দিতে বাধ্য হয়েছেন তা শ্রমিকের নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা অধিকারের চূড়ান্ত লঙ্ঘন বলে মনে করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক। ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, কভিড-১৯-এর বিস্তার ঠেকাতে সরকার ছুটির মেয়াদ বাড়িয়ে দিল। বিশ্বজুড়ে যখন সব ধরনের কার্যক্রম স্থবির হয়ে গেছে, উৎপাদিত পণ্যও রপ্তানির সুযোগ নেই, সেই পরিস্থিতিতে কারখানা খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তের মাধ্যমে শ্রমিকদের কর্মস্থলমুখী করে, তাদের এবং কার্যত পুরো দেশকে কা-জ্ঞানহীনভাবে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দেওয়াটা চরম স্বার্থপরতা ও ষড়যন্ত্রমূলক সিদ্ধান্ত। এর দায় কারখানা মালিক থেকে শুরু করে মালিকদের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএ যেভাবেই ব্যাখ্যা করুক না কেন, কোনো অবস্থাতেই তা এড়াতে পারেন না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রপ্তানি খাতের শ্রমিকদের বেতনভাতা অব্যাহত রাখতে এ খাতের জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকার তহবিল ঘোষণা করলেন। তারপরও এ খাতের নেতারা শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার অধিকার লঙ্ঘন করে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করে জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী অবস্থান নিলেন। শ্রমিকদের প্রথমে কর্মস্থলে ফিরতে বাধ্য করা হলো, তারপর তীব্র সমালোচনার মুখে প্রায় মধ্যরাতে মালিকদের সংগঠন বিভ্রান্ত আহ্বান জানালো কারখানা বন্ধ রাখার। যে শ্রমিকরা এত কষ্ট করে ঝুঁকি নিয়ে ঢাকায় ফিরলেন মধ্যরাতে তারা কোথায় যাবেন, একবারও কি ভেবেছেন মালিকপক্ষ! এদিকে গতকাল রবিবারও বেশ কিছু কারখানা খোলা রাখার খবর পাওয়া গেছে। তৈরি পোশাক শিল্পের মালিকরা প্রমাণ করে দিলেন যে, তাদের নিজেদের স্বার্থের সামনে শুধু শ্রমিকই নয়, পুরো দেশের কল্যাণ ও নিরাপত্তার কোনো অর্থ বহন করে না।