বুধবার, ১৭ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

বাজার নিয়ন্ত্রণে ২০০ রাইস মিল মালিক

চিকন ও মাঝারি চাল বস্তাপ্রতি বেড়েছে ১৫০ টাকা

নজরুল মৃধা, রংপুর

বাজার নিয়ন্ত্রণে ২০০ রাইস মিল মালিক

উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় বোরো ধান কাটা মাড়াই শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অটো রাইস মিল মালিকরা সিন্ডিকেট করে চালের মজুদ গড়ে তুলে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করেছে। মিল চাতাল মালিক, চাল ব্যবসায়ী, খুচরা বিক্রেতা ও কৃষকদের অভিযোগ- উত্তরাঞ্চলের প্রায় ২০০ অটো রাইস মিল মালিক নিজেদের ইচ্ছামতো চালের দাম নিয়ন্ত্রণ করছে। অটোরাইস মিলগুলো লাখ লাখ মণ ধানের মজুদ করে বাজার নিজেদের আয়ত্তে রেখেছে। গত এক সপ্তাহে চিকন ও মাঝারি মানের চালের দাম বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) বেড়েছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। সাধারণ ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, সরকার এখনই যদি এই মজুদদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয় তা হলে এই সিন্ডিকেটটি চালের বাজার অস্থিতিশিল করে তুলবে। তবে অটো রাইস মিল মালিক সমিতি মনে করছে ধানের দাম বেশি হওয়ায় চালের দাম বেড়েছে।  রংপুরের মাহিগঞ্জ, দিনাজপুরের পুলহাট, বগুড়া, নওগাঁ ও রাজশাহী থেকে প্রতিদিন শত শত ট্রাক চাল ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়। এসব মোকামে গত এক সপ্তাহ থেকে অটো রাইস মিল মালিকরা চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। বর্তমানে চিকন ও মাঝারি মানের চাল প্রকারভেদে ৫০ কেজি ওজনের বস্তা ২ হাজার ৩০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ এক সপ্তাহ আগে এই চাল এক থেকে ১৫০ টাকা কম দরে পাওয়া যেত। রংপুরের আবু পাটোয়ারী, লিখন চৌধুরী, রহিম পাঠান, মহিদ চৌধুরীসহ বেশ কজন আড়তদার জানান, তারা বিভিন্ন মোকাম ঘুরেও অটো রাইস মিলগুলোর কারণে চাল সংগ্রহ করতে পারেননি। অটো রাইস মিলের মালিকরা বাজার থেকে একতরফাভাবে ধান সংগ্রহ করে নিজেদের ইচ্ছামতো  চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। কৃষকদের কাছে ধান নেই।  তারা জানান, পুরো উত্তরাঞ্চলে হাতে গোনা  কয়েকজন বড় ব্যবসায়ী ও অটো রাইস মিল মালিক সারা দেশের চালের ব্যবসাকে নিয়ন্ত্রণ করছে। বড় ব্যবসায়ীদের কাছে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে বাধ্য হয়ে তারা তাদের মিল চাতাল বন্ধ করে দিয়েছে। তারা আরও জানান, অটো রাইস মিল মালিক ও বড় বড় ব্যবসায়ীরা ধানের জন্য আগাম ব্যাপারিদের টাকা দিয়ে কৃষকদের কাছ থেকে ধান কিনে গুদামজাত করে বাজার নিজেদের ইচ্ছামতো নিয়ন্ত্রণ করছে। রংপুর সদরের চাষি অমল চন্দ্র, কাউনিয়ার আফজাল হোসেন, নীলফামারীর কিশোরগঞ্জের আবদুর রহিমসহ  অনেকে জানান, তারা ধান গোলায় তোলার পরপরই বিক্রি করে দিয়েছেন। তাদের কাছে এখন কোনো ধান নেই। ফলে এখন ধানের দাম মণপ্রতি এক থেকে দেড়শ টাকার বাড়লেও তাদের কোনো লাভ হচ্ছে না। ধানের বাড়তি মূল্যে লাভবান হচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীরা। রংপুর চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম চালের দাম বৃদ্ধির জন্য সরাসরি অটো রাইস মিলগুলোকে দায়ী করে বলেন, অটো রাইস মিল মালিকরা আগে থেকে ধানের মজুদ গড়ে তুলে বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। ফলে অটো রাইস মিলগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিতে না পেরে ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা অসহায় হয়ে পড়েছে। এ অবস্থা বেশ কয়েক বছর থেকে চললেও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক লাইক আহমেদ ধানের মূল্য বৃদ্ধির কারণে চালের দাম বেড়েছে বলে মনে করেন। তিনি বলেন, ভালো মানের ধান ৯০০ থেকে ১০০০ টাকা প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর