শুক্রবার, ১০ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

উইঘুর উচ্ছেদে পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটাতে চায় চীন

পশ্চিমা গণমাধ্যমের সংবাদে আশঙ্কা

প্রতিদিন ডেস্ক

চীনের কমিউনিস্ট শাসকরা সে দেশের মুসলিম উইঘুর সম্প্রদায়ের লোকজনের ওপর জুলুমের মাত্রা দিন দিন বাড়িয়ে চলেছে। সেখানকার মুসলমানরা তাদের ধর্মীয় আচরণ পালনে বাধা পাচ্ছে। দাড়ি রাখা, বোরকা পরা বা নামাজ আদায় করলেই নেমে আসছে রাষ্ট্রীয় অত্যাচার। সন্তান ধারণের অধিকারও কেড়ে নেওয়া হয়েছে তাদের। এখন উইঘুরদের উচ্ছেদ করতে তাদের বাসভূমির কাছে পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটাতে চাইছে চীন। এ আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে পাশ্চাত্যের বিভিন্ন গণমাধ্যমে।

বেইজিংয়ের কড়া নিরাপত্তার জাল ভেদ করে নির্যাতনের প্রামাণ্য দলিলগুলো বাইরের দুনিয়ায় চলে এসেছে। তাই দাবি উঠেছে রাষ্ট্রপুঞ্জের হস্তক্ষেপের। আমেরিকা ইতিমধ্যেই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে চীনের বিরুদ্ধে। চীন অবশ্য আর্থিক সহায়তার নামে ঋণের ফাঁদে বহু মুসলিম দেশের মুখ বন্ধ রাখতে সক্ষম হয়েছে। তাই কমিউনিস্ট শাসনে ইসলামের ওপর এত বড় আঘাত সহ্য করেও নীরব মুসলিম দুনিয়া। চীনের পূর্ব তুর্কিস্তান এলাকা হচ্ছে উইঘুর সম্প্রদায়ের মুসলিমদের বাসভূমি। এখন চীনা কমিউনিস্ট পার্টি এর নাম বদলে করেছে ‘জিনজিয়াং প্রদেশ’। ১ কোটি ১০ লাখ মানুষের বসবাস এখানে। এর বেশির ভাগই উইঘুর সম্প্রদায়ে মুসলিম। বিবিসি, সিএনএন, নিউইয়র্ক টাইমসের মতো পাশ্চাত্যের প্রথিতযশা গণমাধ্যমে উঠে এসেছে সেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ছবি। ডিটেনশন ক্যাম্পে আটকে রেখে উইঘুরদের ওপর চলছে অকথ্য অত্যাচার। ধর্মাচরণের শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদ- দিতেও হাত কাঁপছে না কমিউনিস্ট প্রশাসনের। প্রতিনিয়ত লঙ্ঘিত হচ্ছে মানবাধিকার। কবিরাও নিস্তার পাচ্ছেন না চীন সরকারের বর্বরতার হাত থেকে। সম্প্রতি বন্দীদের নিয়ে কবিতা লেখার অপরাধে গ্রেফতার হয়েছেন বিখ্যাত মুসলিম কবি কুই চুই হাউজিন।

‘চরিত্র সংশোধনাগার’। ডিটেনশন ক্যাম্পগুলোর চীন সরকারের দেওয়া নাম। উইঘুরদের নিরাপত্তার স্বার্থেই নাকি গড়ে তোলা হয়েছে এ সংশোধনাগার। আসলে উইঘুরদের জঙ্গি তকমা লাগিয়ে আটকে রাখার চৈনিক ছলনা। উইঘুররা কখনো কোনো সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেনি। চীনের ভিতরেও কোনো অশান্তি তৈরির ইতিহাস নেই তাদের বিরুদ্ধে। তবু তাদের আটকে রাখা হয়েছে বন্দীশিবিরে। অবশ্য জিনজিয়াং প্রদেশটাই বলতে গেলে একটি জেলখানা।

মুসলিম নির্যাতনের খবর দেশের বাইরে যেতে না দিতে রয়েছে মোবাইল ও ইন্টারনেট সংযোগে বিধিনিষেধ। সেখানে প্রবেশ নিষেধ বিদেশি সাংবাদিকদের। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন ও অন্যান্য ওয়াচডগের রিপোর্ট, জিনজিয়াং প্রদেশে ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক পরীক্ষা ও বিস্ফোরণ চালানোর পরিকল্পনা করছে চীন। উল্লেখ্য, ১৯৬৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত গোটা চল্লিশেক বড় ধরনের বিস্ফোরণের সাক্ষী জিনজিয়াং।

বিশ্লেষকরা বলছেন, চীন সরকারের জুলুম-অত্যাচার থেকে বাঁচার লক্ষ্যে জিনজিয়াংয়ের প্রায় ২৫ লাখ অধিবাসী দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। তারা জানিয়েছে, ইসলামী সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ ধ্বংস করতে চীন সরকার মুসলিম যুবকদের বৌদ্ধ মেয়েদের বিয়ে করতে অর্থের প্রলোভন দেখাচ্ছে। মুসলিম গর্ভবতী নারীদের অবৈধভাবে গর্ভপাত করানো হচ্ছে। ডিটেনশন ক্যাম্প থেকে মুক্তি পাওয়া মহিলাদের অভিযোগ, ইনজেকশন দিয়ে তাদের রজঃস্রাব বন্ধ করে দেওয়া হয়। কাউকে কাউকে আবার জোর করে খাওয়ানো হয় জন্মনিয়ন্ত্রক বড়ি। সম্প্রতি চীন থেকে রপ্তানি করা পরচুলাসহ প্রায় ৮ লাখ ডলার মূল্যের ১৩ টন চুলজাত সামগ্রী আটক করেছে মার্কিন শুল্ক দফতর। কাস্টমস কর্তৃপক্ষের দাবি, উইঘুর মুসলমানদের মাথার চুল জোর করে কেটে নিয়ে তৈরি করা হয়েছে এসব সামগ্রী।

সিএনএনসূত্রে এ খবর প্রকাশ্যে আসে। উইঘুরদের চুল, দাড়ি রাখা বা বোরকা পরার অধিকারটুকুও নেই। করোনা অতিমারীর মধ্যেও তাই বিভিন্ন মহল থেকে মুসলিমদের ওপর চীনের ঘৃণ্য অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় উঠছে। দাবি উঠছে, গোটা ঘটনা নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করে দেখুক রাষ্ট্রপুঞ্জ। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এক বিবৃতিতে বলেছেন, এ ভয়ঙ্কর পদক্ষেপ এখনই বন্ধ করা হোক। মানবঘাতী অত্যাচারের বিরুদ্ধে সরব হোক সব দেশ। ইতোমধ্যেই উইঘুর মানবাধিকার অ্যাক্ট, ২০২০ পাস করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এ আইনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয় চীনের জিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুর ও অন্যান্য মুসলিমের ওপর নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে।

সর্বশেষ খবর