বুধবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

চট্টগ্রামে করোনার কবলে ঝুঁকিপূর্ণ রাইজার পরীক্ষা

যে কোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম মহানগরের পাথরঘাটার ব্রিকফিল্ড রোডের বড়–য়া ভবনে গত বছর ১৭ নভেম্বর গ্যাসের রাইজারের ভয়াবহ বিস্ফোরণে সাতজন মারা যান, ১০ জন আহত হন। এ ঘটনায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটি মহানগরের গ্যাসের ঝুঁকিপূর্ণ লাইন ও রাইজারগুলো নিয়মিত বিরতিতে পরীক্ষা করার সুপারিশ করে। কিন্তু গ্যাস নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল) করোনার কবলে পড়ে। ফলে থেকে যায় মহানগরের অধিকাংশ ঝুঁকিপূর্ণ রাইজার। প্রসঙ্গত, নারায়ণগঞ্জে একটি মসজিদে ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর ঝুঁকিপূর্ণ গ্যাসের বিষয়টি আবারও সামনে আসে। কেজিডিসিএল সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে মহানগরে ৫ লাখ ৯৭ হাজার ৯৮৫টি আবাসিক সংযোগ আছে। এসব সংযোগে ২ হাজার ৮০০ কিলোমিটার সরবরাহ লাইন আছে। গ্যাস সরবরাহ, সংযোগ ও নিয়ন্ত্রণে আছে প্রায় ১ লাখ ৪৫ হাজার রাইজার। পাথরঘাটার দুর্ঘটনার পর গ্যাসের রাইজারগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ কাজে পরীক্ষায় শতাধিক প্রকৌশলী ও ৪০ জন মেরামত কর্মীর সমন্বয়ে এলাকাভিত্তিক টিম গঠন করা হয়েছিল। পাথরঘাটায় ৬টি টিম ৮২৬টি রাইজার পরীক্ষা করে ১৩টি রাইজার বড়–য়া ভবনের মতো আবদ্ধ অবস্থায় (ভবনের অভ্যন্তরে) পায়, ২৬টি রাইজার পায় ঝুঁকিপূর্ণ, ২০টি লিকেজ অবস্থায়। এ সময় লিকেজগুলো তৎক্ষণাৎ মেরামতের পর ঝুঁকিপূর্ণ লাইন-রাইজার অপসারণে মালিকদের নোটিস দেয় কেজিডিসিএল। তা ছাড়া গত মার্চে দ্বিতীয় দফায় শুরু হয় বিশ্বরোড, কৈবল্যধাম, এ কে খানসহ আশপাশের এলাকায়। এসব এলাকায় ৬টি টিম ১ হাজার ৩৫টি সংযোগ পরীক্ষা করে লিকেজ পায় ৩০টি লাইন এবং ১টি ইন্ডাস্ট্রিয়াল ও ৪টি কমার্শিয়াল অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়।

 গত ১৬ মার্চের পর করোনা সংক্রমণের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ গ্যাস লাইন-রাইজার পরীক্ষার কাজ বন্ধ ছিল। তবে এখন আবার কাজ শুরু হয়েছে বলে জানা যায়।

নাম প্রকাশ না করে কেজিডিসিএলের এক কর্মকর্তা বলেন, পাথরঘাটার ঘটনার পর মহানগরের রাইজারগুলো পরীক্ষার কাজ শুরু হয়। কয়েকটি এলাকায় তা হয়েছে। পরে করোনার কারণে বন্ধ থাকে। এখন আবার শুরু হয়েছে। বিস্ফোরণ এড়াতে উন্মুক্ত স্থানে রাইজার ও গ্যাসলাইন স্থাপনের বিষয়টি নিশ্চিত করতে কাজ চলছে।

জানা যায়, পাথরঘাটার ভয়াবহ গ্যাস বিস্ফোরণের ঘটনায় জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি ১৩ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন দেয়। তদন্ত প্রতিবেদনে পাঁচ সুপারিশের মধ্যে ছিল- ভবন নির্মাণে বিল্ডিংকোড না মানা, সিডিএ অনুমোদিত নকশাবহির্ভূত নির্মিত ভবন দ্রুত পরিদর্শনের উদ্যোগ নেওয়া, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের আওতাধীন লাইন ও রাইজারগুলো নিয়মিত বিরতিতে পরীক্ষা করা এবং পরীক্ষার পর ‘গ্যাসের লাইনটি পরীক্ষিত’ একটি সার্টিফিকেট দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ, গ্যাসলাইন থেকে নিঃসরণ চিহ্নিতকরণ এবং সতর্কতা অবলম্বনে সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ ও গ্যাস সম্পর্কিত যে কোনো সমস্যা ও গ্যাস নিঃসরণের আশঙ্কা ইত্যাদি অভিযোগে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে একটি ‘হটলাইন’ চালুর উদ্যোগ গ্রহণ।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর