সোমবার, ২২ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

জলাশয় খাল নালায় ছাড়া হচ্ছে ব্যাঙ

মশা নির্মূলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নয়া কর্মসূচি

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

নগরবাসীকে মশার আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য জীববৈচিত্র্যের ভারসাম্যকে কাজে লাগিয়ে এবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) খাল, জলাশয়, নালা ও ড্রেনে ব্যাঙ ছাড়া হচ্ছে। এরই মধ্যে ডিএসসিসির ১০টি অঞ্চলে ১০ হাজার ব্যাঙের পোনা ছাড়া হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, বড় হয়ে উঠলে ব্যাঙ জলাশয়ে থাকা মশার লার্ভাগুলো খেয়ে ফেলবে। নগরবাসী মশার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাবে।

এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাসের বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, এরই মধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে ১০ হাজার ব্যাঙের পোনা ডিএসসিসির ১০টি অঞ্চলে ছাড়া হয়েছে। ভালো ফলাফল পেলে উদ্যোগটি এগিয়ে নেওয়া হবে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দূষিত পানিতে ব্যাঙের বাঁচার কোনো সম্ভাবনা নেই। যদি অল্প কিছু ব্যাঙ বেঁচেও যায় সেগুলো খুব বেশি লার্ভা খেয়ে সুফল বয়ে আনতে পারবে না। পৃথিবীর কোনো দেশে এমন নজির নেই।

জানা গেছে, ডিএসসিসির নানান উদ্যোগে যখন কোনোভাবেই মশা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না, তখন এবার নতুন করে নগরীর পুকুর-ডোবাসহ জলাশয়গুলোতে ব্যাঙ অবমুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে মাত্রাতিরিক্ত দূষণের শিকার পুকুর ও জলাশয়ের পানিতে এই ব্যাঙ কতদিন বাঁচবে- তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। কারণ এর আগে এসব পুকুর ও জলাশয়ে অবমুক্ত করা হাঁস ও মাছ বেশি দিন বাঁচেনি। তারও আগে গাপ্পি মাছ, হাঁস চাষের মাধ্যমে মশা নিধনের চেষ্টা করলে কিছুদিন যেতে না যেতেই সেই মাছ ও হাঁস উধাও হয়ে যায়। পুকুর ও জলাশয়ের পানি অতিরিক্ত দূষণের কারণে সেগুলো মারা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, এবার মশা মারার জন্য দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ধরে নিয়ে আসা ব্যাঙ নগরীর বিভিন্ন পুকুর ডোবা ও জলাশয়ে ছেড়ে দেওয়া হবে। আর যেগুলো ছাড়া হয়েছে সেগুলোর জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে বড় হয়ে ওঠার।

জলাশয়ে ব্যাঙ ছাড়ার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কমিটির সদস্য ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর চিত্তরঞ্জন দাস বলেন, মশা নিধনে আমরা ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। সে অনুযায়ী জীববৈচিত্র্যের ভারসাম্য রক্ষা, নতুন ওষুধের ব্যবহারসহ নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে ডিএসসিসির আওতাধীন খাল, জলাশয়, নালা ও ড্রেনে কয়েক হাজার ব্যাঙের পোনা ছাড়া হয়েছে।

এদিকে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের (সিজিএস) চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট কীটতত্ত্ববিদ ড. মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, পৃথিবীর কোথাও ব্যাঙ দিয়ে কখনো মশা নিয়ন্ত্রণ হয়নি, হবেও না।

 ব্যাঙের খাবার হচ্ছে অন্য কিছু। আর বড় ব্যাঙ মশার লার্ভা খায় না।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার বলেন, এই দূষিত পানিতে ব্যাঙের বাঁচার কোনো সম্ভাবনা নেই। আর যদি অল্প কিছু সংখ্যক ব্যাঙ বেঁচেও যায়, তাহলে তারা খুব বেশি লার্ভা খেয়ে সুফল বয়ে আনতে পারবে না। এ ছাড়াও এটি কোনো স্থায়ী সমাধান হিসেবে কখনই কাজ করবে না।

সর্বশেষ খবর