বৃহস্পতিবার, ১ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

আরডিএ মার্কেট ভাঙার প্রক্রিয়া শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

রাজশাহী মহানগরীর প্রাণকেন্দ্রের আরডিএ মার্কেট অবশেষে ভেঙে ফেলার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। মার্কেটটি ভেঙে নতুন করে নির্মাণে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) প্রস্তুত করা হচ্ছে। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এই কার্যক্রম শুরু করেছে। সাহেববাজারে অবস্থিত তিনতলা এই মার্কেটটিতে এখন ২ হাজার ২০০টি দোকান রয়েছে। কিন্তু আগুন লাগলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢোকারও জায়গা নেই।

২০১৯ সালের এপ্রিলে মার্কেটটিকে ‘খুবই ঝুঁকিপূর্ণ’ ঘোষণা করে ফায়ার সার্ভিস। মার্কেটের প্রবেশপথে ব্যানারও টাঙানো হয়। কিন্তু দুই ঘণ্টার মধ্যেই ব্যানারটি উধাও হয়ে যায়। চরম ঝুঁকির মধ্যেই ব্যবসায়ীরা এখনো ব্যবসা করে আসছেন।

আরডিএ ১৯৮৮ সালে এখানে ১৩৭ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীকে দোকান দেয়। সংস্কারের পর ২০০৬ সালে আবার দোকান বরাদ্দ শুরু হয়। এরপর ব্যবসায়ীর সংখ্যা বাড়ছেই। শহরের সবচেয়ে বড় এই মার্কেটে এখন প্রায় ২ হাজার ২০০টি দোকান আছে। বড় বড় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থাকলেও মার্কেটটিতে সুযোগ-সুবিধার কিছুই নেই।

গত বছরের ডিসেম্বরে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ১৩তম বৈঠকে আরডিএ মার্কেট ভেঙে ফেলার সুপারিশ করা হয়। বৈঠকে আরডিএর চলমান প্রকল্পের সার্বিক কাজের অগ্রগতি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে আরডিএ মার্কেট ভেঙে নতুন করে নির্মাণের জন্য সিটি করপোরেশনের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। এরপর আরডিএ প্রক্রিয়া শুরু করলেও সিটি করপোরেশনের সঙ্গে এখনো আলোচনা হয়নি।

আরডিএ সূত্রে জানা গেছে, মার্কেটটি ভেঙে নতুন করে নির্মাণের জন্য ডিপিপি প্রস্তুত করা হচ্ছে। ডিপিপি অনুমোদনের পর কাজে আরও গতি আসবে। ইতিমধ্যেই নগর সংস্থার সঙ্গেও আলোচনা সেরে নেওয়া হবে। মার্কেটের ব্যবসায়ীদের অন্যত্র সরিয়ে সিটি করপোরেশনের সঙ্গে সমন্বয় করেই দ্রুত কাজটি করতে চায় আরডিএ।

মার্কেটটি ভাঙার প্রক্রিয়া শুরু হলেও কিছুই জানেন না সাধারণ ব্যবসায়ীরা। অন্তত ১০ জন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা এ ব্যাপারে কিছুই শোনেননি। একজন ছাড়া অন্যসব ব্যবসায়ী দাবি করেছেন, মার্কেটটি তারা ঝুঁকিপূর্ণও মনে করেন না। তাদের কোনো সমস্যাও নেই।

মার্কেটের জামাল ক্রোকারিজের মালিক ও ক্রোকারিজ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবু জামাল তাপস বলেন, ‘মার্কেট ভাঙা হবে এমন কিছুই তো শুনিনি। এই মার্কেটে ব্যবসা করতে কোনো সমস্যাও দেখি না।’

মার্কেটের রয়েল স্টোরের ব্যবস্থাপক আল-আমিন শেখ বলেন, ‘মার্কেট ভাঙা পড়বে এরকম কিছু শুনিনি। মার্কেট কমিটির লোকজন হয়তো বলতে পারবে। আমরা কিছুই জানি না।’

আরডিএ মার্কেটের প্রবেশমুখের সানন্দা গার্মেন্টের মালিক গোড়াচাঁদ বসাক ঝুঁকির বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘মার্কেটে সব ছোট ছোট দোকান। আগুন লাগলে বাজে অবস্থায় চলে যেতে পারে।’ অবশ্য তিনিও শোনেননি মার্কেট ভাঙা হবে। তিনি বলেন, ‘আমাদের পুনর্বাসন বা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না করে মার্কেট ভাঙা ঠিক হবে না। মার্কেট ভাঙার আগে যেন এটি নিশ্চিত করা হয়।’

আরডিএর পুনর্বাসিত সাধারণ ব্যবসায়ী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক ইয়াসিন আলী বলেন, ‘সাহেববাজার প্রধান সড়ক ছিল আমাদের বাপ-দাদার পৈতৃক সম্পত্তি। ওই সড়ক সম্প্রসারণের সময় আমাদের আরডিএ মার্কেটে পুনর্বাসন করা হয়। এখন মার্কেট ভাঙতে হলে আমাদের পুনর্বাসন করতে হবে।’

আরডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী ও জোন-৩ এর অথরাইজড অফিসার আবদুল্লাহ আল তারিক বলেন, ‘মার্কেট ভাঙা পড়লে তো ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসন করতেই হবে। আমরা একটা ডিপিপি প্রস্তুত করছি। সেটি অনুমোদনের পর সিটি করপোরেশনের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী কার্যক্রম শুরু হবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর