মঙ্গলবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

বিদ্যুৎ বিভ্রাটে বেহাল চিকিৎসাসেবা

শেবাচিমে বন্ধ থাকে লিফট ও অপারেশন

রাহাত খান, বরিশাল

বিদ্যুৎ বিভ্রাটে বেহাল চিকিৎসাসেবা

ঘন ঘন বিভ্রাটে প্রায়ই বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকে শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (শেবাচিম)। এ সময় অপারেশন থিয়েটারেও বন্ধ থাকে সব অপারেশন কার্যক্রম। বিশেষ করে বিদ্যুতের কারণে লিফট বন্ধ থাকায় মুমূর্ষুসহ অপারেশনের রোগীদের হাসপাতালের বিভিন্ন তলায় ওঠানো নামানোর ক্ষেত্রে চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হয় স্বজনদের। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লিফটের জন্য অপেক্ষা করতে হয় তাদের। এ ছাড়া বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় প্রচণ্ড গরমে মেডিকেলের সব ওয়ার্ডে সৃষ্টি হয় ত্রাহি দশা। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন রোগীর স্বজনরা। তারা মেডিকেলে ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ওয়ার্ড মাস্টার বলেন, পুরনো একটি জেনারেটর থাকলেও সেটি কার্যক্ষমতা হারিয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে মেডিকেলে বিদ্যুৎ সরবরাহের দুটি ফেজ এবং শক্তিশালী জেনারেটর দেওয়ার দাবি জানান তিনি। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ ও উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন জেনারেটর চেয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কাছে আবেদন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচ এম সাইফুল ইসলাম। তবে সংশ্লিষ্টদের কোনো উদ্যোগ দেখছেন না তিনি।

সরেজমিনে গতকাল দুপুরে শেবাচিমে গিয়ে দেখা যায়, গেটের লিফটের সামনে ট্রলিতে শোয়ানো অবস্থায় অপেক্ষমাণ অন্তত ১০ জন রোগী। তাদের কেউ সিজারিয়ান অপারেশনের রোগী বা কারও পা ভাঙা। ট্রলিতে রোগীকে শুইয়ে রেখে দাঁড়িয়ে আছেন স্বজনরা। ঝুঁকিপূর্ণ রোগী হওয়ায় সিঁড়ি দিয়ে তাদের ওপরের বিভিন্ন তলায় নিয়ে যেতে পারছিলেন না স্বজনরা। ঘণ্টাকালেরও বেশি সময় ধরে লিফট বন্ধ। নিরুপায় হয়ে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে ছাড়া যেন কোনো কিছুই করার ছিল না তাদের।

ভুক্তভোগী স্বজন মোর্শেদা বেগম বলেন, জরুরি অপারেশনের জন্য পাঁচ তলার ওটিতে যেতে হবে। বিদ্যুৎ না থাকায় লিফট বন্ধ। এক ঘণ্টারও বেশি সময় লিফটের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। কখন বিদ্যুৎ আসে সেই অপেক্ষায়।

মোসাম্মৎ সুইটি নামে এক রোগীর স্বজন বলেন, রোগী নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে আছি। লিফট বন্ধ। তাই রোগী ওপরে উঠাতে পারছেন না। হাসপাতালে সার্বক্ষণিক বিদ্যুতের ব্যবস্থা থাকা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি। বিদ্যুৎ না থাকলে পঞ্চম তলার অপারেশন থিয়েটারের গুরুত্বপূর্ণ অপারেশন বন্ধ থাকে বলে জানান। নবজাতক ও শিশু ওয়ার্ড এবং গাইনিসহ সব ওয়ার্ডে ভেঙে পড়ে চিকিৎসাসেবা। হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার আবুল কালাম বলেন, অপারেশন থিয়েটারে সিজারিয়ান কোনো রোগীর অপারেশন করা অবস্থায় বিদ্যুৎ চলে গেলে অবর্ণনীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া জরুরি রোগী নিয়ে লিফটের সামনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকা বেদনাদায়ক। হাসপাতালে একটা জেনারেটর আছে। তার শক্তি কম। তা দিয়ে লিফট ওপরে উঠতে পারে না। অপারেশন থিয়েটারেও জেনারেটর দিয়ে বিদ্যুৎ দেওয়ার ব্যবস্থা নেই। জরুরি ভিত্তিতে শক্তিশালী জেনারেটর এবং মানবিক কারণে মেডিকেলে ২৪ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানান তিনি। এই মেডিকেল কলেজের সাবেক ছাত্র ও বর্তমানে হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচ এম সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি যখন এই মেডিকেল কলেজের ছাত্র ছিলাম, তখন দেখেছি এক ফেজে বিদ্যুৎ না থাকলে অন্য ফেজে চলে আসত। এই মেডিকেলে বিদ্যুতের দুটি ফেজ ছিল। কেন একটি ফেজ কাটা হয়েছে, কারা কেটেছে কিছুই জানি না। কয়েক মাস আগে দায়িত্ব নেওয়ার পর দুটি ফেজের মাধ্যমে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। একটি শক্তিশালী জেনারেটর চেয়ে গণপূর্ত বিভাগকেও চিঠি দিয়েছেন বলে জানান এই পরিচালক।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর