বুধবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

নওগাঁর বরেন্দ্র অঞ্চলের ঐতিহাসিক দিবর দিঘি

বাবুল আখতার রানা, নওগাঁ

নওগাঁর বরেন্দ্র অঞ্চলের ঐতিহাসিক দিবর দিঘি

নানা ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থান ও প্রাচীন নিদর্শন সমৃদ্ধ রাজশাহী বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বড় জেলা নওগাঁ। এর উত্তরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, দক্ষিণে নাটোর ও রাজশাহী জেলা, পূর্বে জয়পুরহাট ও বগুড়া জেলা এবং পশ্চিমে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা। আত্রাই,  ছোট যমুনা, নাগর, তুলসীগঙ্গা, পুনর্ভবা এ জেলার প্রধান নদী। বরেন্দ্রের উঁচু-ঢালু পথ ধরে চলতে চলতে দেখা মিলবে মৌর্য, গুপ্ত ও পাল থেকে শুরু করে মুঘল আমলের প্রত্নস্থানগুলো। তাদের মধ্যে বরেন্দ্র অঞ্চলের একটি ঐতিহাসিক স্থান হলো দিবর দিঘি। স্যার আলেকজান্ডার কানিংহাম ও স্যার বুকানন হ্যামিলটনের পরিদর্শন করা ঐতিহাসিক দিবর দিঘিতে স্থাপিত প্রাচীন স্থাপত্য পুরাকীর্তির অনুপম নিদর্শন এবং হাজার বছরের বাংলা ও বাঙালির শৌর্য-বীর্যের প্রতীক। দিঘির মাঝে আজো দন্ডায়মান অজানা ইতিহাসের বিজয় স্তম্ভ যা দেখার জন্য দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিন শত শত দর্শনার্থী দিবর দিঘিতে ভিড় জমান। ইতিহাসসমৃদ্ধ দিবর দিঘি বরেন্দ্রভূমি পত্নীতলা উপজেলার দিবর ইউনিয়নের দিবর গ্রামে অবস্থিত। দিঘিটিকে ঘিরে লোকমুখে অনেক গল্পকাহিনি প্রচলিত রয়েছে। প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের ইতিহাস ও জনশ্রুতি আছে, জনৈক বিষু কর্মা নামক এক বীর জিনের বাদশাহর হুকুমে এক রাতে বিশাল আকৃতির এই দিঘি খনন করেন। দিবর নামে পরিচিত এই বৃহৎ জলাশয় ও জলাশয়ের মাঝখানে অবস্থিত স্তম্ভটি একাদশ শতাব্দীর কৈবর্ত্য রাজা দিব্যক তার ভ্রাতা রুদ্যোকের ছেলে প্রখ্যাত নৃপতি ভীমের কীর্তি হিসেবে পরিচিত।

 পাল রাজা দ্বিতীয় মহিপালের (১০৭০ খ্রি.-১০৭১ খ্রি.) অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে বরেন্দ্রভূমির অধিকাংশ পদচ্যুত সেনাপতি বরেন্দ্রভূমির ধীবর বংশদ্ভুত কৃতীসন্তান দিব্যকের নেতৃত্বে পাল শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন এবং পরবর্তীতে দ্বিতীয় মহিপালকে হত্যা করেন। পরে সর্বসম্মতিক্রমে দিব্যককে বরেন্দ্রভূমির অধিপতি নির্বাচন করা হয়। কিছুদিন পরে দিব্যক মৃত্যুবরণ করলে প্রথমে রুদ্যোক ছেলে ভীম সিংহাসনে আহরণ করেন। তিনিই একমাত্র কৈবর্ত্য বংশীয় রাজা যিনি প্রায় ২৫-৩০ বছর বরেন্দ্রভূমি শাসন করেন। পরে দ্বিতীয় মহিপালের ভ্রাতা রামপাল ভীমকে পরাজিত ও নিহত করে রাজ্য পুনরুদ্ধার করেন। তবে কোন কৃতী কৈবর্ত্য রাজা বিজয় স্তম্ভটি নির্মাণ করেছিলেন তা আজ অবধি সঠিকভাবে জানা যায়নি। স্যার আলেকজান্ডার কনিংহামের মতে মৌর্যদের পরে এ ধরনের কোনো পাথরের কাজ বাংলায় আর নির্মিত হয়নি। সে ভিত্তিতে প্রত্নতত্ত্ববিদ আবদুল কাদের জাকারিয়ার মতে, বিজয়স্তম্ভটি খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকে নির্মাণ করা হয়েছিল। প্রায় ৩০ ফুট লম্বা একটি অখ- পাথর কেটে  তৈরি এই স্তম্ভের ৯টি কোণ আছে। এর এক কোণ থেকে অপর কোণের দূরত্ব ১২ ইঞ্চি। এই বিজয় স্তম্ভের উপরিভাগে পর পর তিনটি বলয়াকারে স্মৃতি রেখা আছে যা স্তম্ভের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে। এর শীর্ষদেশ নান্দনিক কারুকার্যখচিত মুকুটাকারে নির্মিত। পানির উপরিভাগে স্তম্ভের উচ্চতা ১০ ফুট, পানির ভিতর ১০ ফুট এবং মাটির নিচে সম্ভবত আরও ১০ ফুট আছে। এই ঐতিহাসিক স্তম্ভটি দেখতে আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রায় প্রতিদিনই এখানে ছুটে আসেন শত শত দর্শনার্থী।

সর্বশেষ খবর