বুধবার, ৩ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

ইপিসি গ্লোবাল হাতিয়েছে গ্রাহকের ২ কোটি টাকা, এমডিসহ গ্রেফতার ৩

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর বাড্ডা থেকে ইপিসি গ্লোবাল লিমিটেড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ (এমডি) তিনজনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। তারা হলেন- এমডি মো. শাহিন মিয়া, চেয়ারম্যান মো. জুয়েল ও পরিচালক (অর্থ) মো. সাদ্দাম হোসাইন। সোমবার রাতে কোম্পানির অফিসে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। র‌্যাব বলছে, কোম্পানিটি অনলাইনে মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) কার্যক্রম পরিচালনা করে অতি মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে গ্রাহকদের ২ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে বাড্ডা থানায় মামলা করা হয়েছে। র‌্যাব-৩ এর অতিরিক্ত এসপি (মিডিয়া) বীণা রানী দাস জানান, কোম্পানিটির ইপিসিলাইট.কম ও ইপিসিপ্রোবিডি.কম নামে দুটি ই-কমার্স ওয়েবসাইটের মাধ্যমে গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিল। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কোম্পানির অফিসে অভিযান চালিয়ে এমডি, চেয়ারম্যানসহ তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়।

ওই অফিস থেকে বিপুল পরিমাণ হলুদ, মরিচ, ধনিয়া, বিরিয়ানি ও খিচুড়ির গুঁড়া মসলা, চটকদার বিজ্ঞাপনের কপি, কোম্পানিটির নিত্য পণ্যের প্যাকেজ মূল্যসহ তালিকা, ইপিসি গ্লোবাল লিমিটেডের ল্যান্ড প্রজেক্টের চটকদার বিজ্ঞাপনের কপি, আমানত আদায়ের মুড়ি বই, কম্পিউটার ও ছয়টি মোবাইল জব্দ করা হয়।

গ্রেফতারদের ই-কমার্স আইটি নামে একটি ট্রেড লাইসেন্স রয়েছে। ওই লাইসেন্সের আড়ালে তারা এমএলএম ব্যবসা অনুসরণ করে ইপিসি কোম্পানি লিমিটেডের মোড়কে বিএসটিআইয়ের অনুমোদনহীন নিম্নমানের বিভিন্ন গুঁড়া মসলা, দারুচিনি, এলাচি, কিশমিশ, লবণ, টুথ ব্রাশ-চায়না, সেভ ওয়েট গ্রোথ-ন্যাচারাল প্রোটিন পাউডার, ক্যালসিয়াম+ডি (ক্যাপসুল), ওমেগা৩-৬-৯ (ক্যাপসুল), ক্যালসিয়াম ডি (ক্যাপসুল), ডিক্টামনি-এন্টিবায়োটিক ক্রিম, সেভ টক্সিন ফাশ (হারবাল শরবত), এরাবিয়ান ঘাওয়া কফি, সেভ প্রোটিন প্লাস (প্রোটিন ফুড), ড্রিম ভ্যালি (লিকুইড ডিটারজেন্ট), বাথিং জেল (গোসলের লিকুইড সাবান), পানির ফিল্টারসহ ২১ ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয় বিক্রয়ের জন্য চটকদার বিজ্ঞাপন প্রচার করে গ্রাহকদের আকৃষ্ট করে। বাস্তবে এসব পণ্যের কোনো মজুদ তাদের কাছে নেই। গ্রাহকদের বিশ্বাস অর্জন এবং প্রতারণার উদ্দেশ্যেই এসব চটকদার বিজ্ঞাপন প্রচার করা হতো।

এ ছাড়াও ওই প্রতিষ্ঠানের দুটি ই-কমার্স ওয়েবসাইট প্রতারণার আরেকটি অভিনব ফাঁদ। কোনো গ্রাহক ১ হাজার ৩৫০ টাকা বিনিয়োগ করলে ওই ওয়েবসাইটে তার নামে একটি অ্যাকাউন্ট খোলা হতো এবং প্রতিদিন ১৫ টাকা হারে লভ্যাংশ তার হিসাবে জমা হতো। ওই গ্রাহককে একটি পিন নম্বর দেওয়া হয়, যাতে সেই গ্রাহক নিজেই তার লেনদেনের তথ্য দেখতে পারেন। এভাবে ৫০০ টাকা লভ্যাংশ জমা হলে কোনো গ্রাহক তার জমা উত্তোলন করতে পারতেন। এই প্রলোভনে পড়ে একজন গ্রাহক তার নিকট আত্মীয়দের ওই কোম্পানিতে বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত করে এবং নিজেও অধিক লাভের আশায় ২০০-৩০০ অ্যাকাউন্ট খুলত। কিন্তু লভ্যাংশ উত্তোলনের সময় ওই টাকা থেকে ১০ শতাংশ অফেরতযোগ্য চার্জ এবং কেনাকাটার জন্য আরও ১০ শতাংশ লভ্যাংশ কর্তন করা হতো। এভাবে গ্রাহক যখন তাদের প্রতারণা বুঝতে পেরে আমানত ফেরত চায়, তখন তারা সেই গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট ওয়েবসাইট থেকে মুছে দিত এবং তার সব আমানত জমার বিষয়টি অস্বীকার করত।

র‌্যাব কর্মকর্তা আরও বলেন, গ্রেফতাররা একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র। এমডি শাহিন ও চেয়ারম্যান জুয়েল আগে একটি ব্যক্তি মালিকানাধীন কোম্পানিতে সেলস ম্যানেজার ও সাদ্দাম কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন। কাজের সূত্রে তাদের একে অপরের সঙ্গে পরিচয় হয়। তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি পাস। স্বল্প সময়ে বিনাপুঁজিতে অধিক অর্থ উপার্জনের উদ্দেশ্যে তারা উক্ত প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছিল। তারা পরস্পর যোগসাজশে সাধারণ মানুষের বিশ্বাস অর্জন করে তাদের অতি মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে ব্যবসার অবাস্তব লভ্যাংশের আশ্বাস দিয়ে তাদের কোম্পানিতে বিনিয়োগ করতে প্রলুব্ধ করত। পরবর্তীতে ব্যবসার লোকসানের অজুহাতে তাদের লভ্যাংশ ও আসল পরিশোধ করতে অনীহা প্রকাশ করত। এভাবে ওই চক্র লাইসেন্স ছাড়া এমএলএম কার্যক্রম পরিচালনা করে চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে মাত্র ছয় মাসের মধ্যে ১০ হাজার গ্রাহকের ২ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর