বুধবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

উপসর্গহীন করোনা রোগী শনাক্তে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থায় নজরদারি

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে উপসর্গহীন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা উপসর্গবিশিষ্ট রোগীর চেয়ে বেশি। আর এ জন্য উপসর্গহীন রোগীদের ওপর নজরদারি বৃদ্ধি করতে ঢাকা শহরের পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থায় নজরদারির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই পদ্ধতি কভিড-১৯-এর সংক্রমণ বৃদ্ধি বা হ্রাসের আগে জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের এর প্রবণতা অনুমান করতে সহায়তা করবে। এ ছাড়া এর সাহায্যে জনস্বাস্থ্য কর্মকর্র্তারা কোন অঞ্চলে কভিড-১৯ এর প্রকোপ বেশি তা ধারণা করতে পারবেন এবং সীমিত পরীক্ষার সংস্থানগুলো সেই অঞ্চলগুলোতে আরও বেশি বরাদ্দ করে পরবর্তী সংক্রমণ রোধ করতে পারবেন। এই পদ্ধতির মাধ্যমে একটি সুনির্দিষ্ট এলাকার জন্য সুনির্দিষ্ট জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়ন করা যাবে এবং সেই এলাকার নাগরিকদের যতটা সম্ভব নিরাপদ রাখা যাবে।

সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের অভিজ্ঞ জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে এক আলোচনা সভায় এই নজরদারি গবেষণা পদ্ধতিটি উপস্থাপন করা হয়। এই নজরদারি পদ্ধতিটি আইসিডিডিআরবি, ইউনিভার্সিটি অব ভার্জিনিয়া (ইউএসএ), ইম্পেরিয়াল কলেজ অব লন্ডন (ইউকে), রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরের উদ্যোগে পরিচালিত হয়। নজরদারি গবেষণা পদ্ধতিটি বিল ও মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন দ্বারা অর্থায়িত। এ পদ্ধতিটি ঢাকার পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থায় সার্স-কোভ-২ এর নজরদারির জন্যে শুরু হলেও পানিতে সার্স-কোভ-২ এর আরএনএ শনাক্ত করার মাধ্যমে কভিড-১৯-এর গতিবিধিও সফলভাবে অনুসরণ করা যাবে। ঢাকার পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থায় সার্স-কোভ-২ এর নজরদারি পদ্ধতি সর্বপ্রথম ২০১৯ সালের জুন মাসে চালু করা হয়। পদ্ধতিটি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৮টি ওয়ার্ডের ৩৩টি এলাকার নালা-নর্দমার ওপর প্রয়োগ করা হয়। প্রাথমিকভাবে এটি পোলিও ভাইরাস, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স জিন এবং অন্যান্য আন্ত্রিক রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণু শনাক্তকরণে সক্ষম। কিন্তু ২০২০ সালে যখন কভিড-৯ মহামারী ছড়িয়ে পড়ে তখন তাৎক্ষণিকভাবে এই পয়ঃনিষ্কাশন নজরদারি পদ্ধতির পরিধি নমুনায় সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের শনাক্তকরণের জন্য প্রসারিত করা হয়। এর পর থেকে প্রতিটি নির্দিষ্ট এলাকা থেকে সাপ্তাহিকভাবে নির্দিষ্ট পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার স্থানে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এতে ভাইরাসের পরিমাণ রিভার্স ট্রান্সক্রিপশন কোয়ান্টিটেটিভ পিসিআর নামে একটি পদ্ধতি ব্যবহার করে পরিমাপ করা হয়। প্রতিটি নমুনা সংগ্রহের স্থানের সঙ্গে সম্পর্কিত এই ভাইরাসের পরিমাণ সেই এলাকার পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা এবং ড্রেন লাইনের তথ্যের সঙ্গে সমন্বয় করা হয়। এভাবে সেই এলাকার সংক্রমিত লোকের সংখ্যা প্রদান করা হয়। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (জনস্বাস্থ্য শাখা) সৈয়দ মজিবুল হক বলেন, পয়ঃনিষ্কাশন নিয়ে এ ধরনের গবেষণা বাংলাদেশে একেবারেই নতুন। আইসিসিডিআরবির জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী ড. রাশিদুল হক বলেন, উপসর্গ না থাকায় অনেক করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি চিকিৎসা করান না।

এতে কর্তৃপক্ষ সংক্রমিত ব্যক্তির মোট সংখ্যা সম্পর্কে সঠিকভাবে তথ্য পায় না। আর এই নজরদারি ব্যবস্থা করোনার প্রাদুর্ভাবকে আরও কার্যকরভাবে মোকাবিলা করতে সাহায্য করবে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, যেহেতু উপসর্গহীন রোগীর সংখ্যা উপসর্গবিশিষ্ট রোগীর চেয়ে বেশি তাই এ ধরনের নজরদারি ব্যবস্থা দেশের জন্য সত্যি উপযোগী।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর