বাংলাদেশ ও ভারতসহ বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে। তবে ওমিক্রন নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে সরকারিভাবে ইতিমধ্যেই সাতটি নির্দেশনাও দেওয়া হয়। একই সঙ্গে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের গঠিত কমিটিগুলোকে অধিকতর সক্রিয় করতেও নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু কোথাও কেউ মানছে না সরকারি নির্দেশনা। সর্বত্র দেখা যাচ্ছে নির্দেশনা না মানার দৃশ্য। হাসপাতাল থেকে বিনোদন কেন্দ্র, মার্কেট থেকে যানবাহন এবং সামাজিক অনুষ্ঠান- কোথাও কেউ মানছে না। এমন অবস্থায় করোনার তৃতীয় ঢেউ আবারও আছড়ে পড়ার শঙ্কা তৈরি হবে বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। জানা যায়, ২৬ অক্টোবর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে ভারতে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে করণীয় নিয়ে একটি মিটিং হয়। বৈঠকে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি, শীত মৌসুমে ঠান্ডা, কাশি ও শ্বাসজনিত রোগের প্রবণতা বৃদ্ধির আশঙ্কা করা হয়। কিন্তু দেশের সর্বত্র মাস্ক ব্যবহারে শিথিলতা দেখা দিয়েছে। ফলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আওতায় ইতিমধ্যেই গঠিত সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটিগুলোকে অধিকতর সক্রিয় হতে এবং সঙ্গে সাতটি নির্দেশনা দেওয়া হয়। নির্দেশনার মধ্যে আছে- সর্বস্তরে স্বাস্থ্যবিধি পালন ও মাস্ক ব্যবহারে উদ্বুদ্ধকরণ, হাট-বাজার, চায়ের দোকান বা জনসমাগম হয় এমন স্থানে ভিড় পরিহারের ব্যবস্থা, ভ্যাকসিন গ্রহণে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা, বয়স্কদের ভ্যাকসিন সেন্টারে আসতে সহায়তা করা, স্বাস্থ্যবিধি পালনে প্রচারের ব্যবস্থা করা, সমাবেশ ও সামাজিক অনুষ্ঠান পরিহারে উদ্বুদ্ধ করা এবং করোনা প্রতিরোধে সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা। চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, আমরা প্রতিনিয়তই বলে আসছি, ওমিক্রন নিয়ন্ত্রণে সরকারি নির্দেশনা মানতেই হবে। অন্যথায় এর চরম খেসারত দিতে হবে। কিন্তু লক্ষ্য করা যাচ্ছে অনেক ক্ষেত্রেই সরকারি নির্দেশনা মতে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। এটি সবার জন্যই ক্ষতিকর। সরেজমিন দেখা যায়, মানুষ টিকা নিতে আসেন করোনামুক্ত থাকতে। কিন্তু কেন্দ্রে এসে আরও ঝুঁকি তৈরি করছেন। চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে দেখা যায়, অনেকের মুখে নেই মাস্ক, দাঁড়িয়েছেন একজনের সঙ্গে আরেকজন গা ঘেঁষে। অনেক সময় দীর্ঘ লাইনে হুমড়ি খেয়েও পড়েন। অন্যদিকে, চট্টগ্রামের আউটার স্টেডিয়ামে এখন চলছে বিজয় মেলা। প্রতিদিনই ঢল নামে দর্শনার্থীর। মাঠের উত্তর-দক্ষিণে প্রায় এক কিলোমিটার যানজট এখন প্রতিদিনের চিত্র। এ ছাড়া টানা তিন দিন বন্ধে এখন ঢল নেমেছে সব বিনোদন স্পটে। নগরের পতেঙ্গা সি বিচ, ফয়সলেক, চিড়িয়াখানা, শিশুপার্কসহ সবকটি পর্যটন স্পটে এখন লোকে লোকারণ্য।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চট্টগ্রামে মোট করোনা আক্রান্ত হয় ১ লাখ ২ হাজার ৪৮৯ জন। এর মধ্যে মহানগর এলাকায় ৭৪ হাজার ১৬১ জন এবং উপজেলায় ২৮ হাজার ৩২৮ জন। ইতিমধ্যেই মারা যান ১ হাজার ৩৩২ জন। এর মধ্যে মহানগরে ৭২৩ জন ও উপজেলায় ৬০৯ জন। চট্টগ্রামে সরকারি বেসরকারি ১৪টি ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা চলছে।