শুক্রবার, ২২ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

ভয়ানক গ্যাং কালচার খুলনায়!

কলেজছাত্র হত্যায় মূল হোতারা গ্রেফতার হয়নি, আরেক যুবককে ছুরিকাঘাতে খুন

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা

ভয়ানক গ্যাং কালচার খুলনায়!

খুলনার ফুলতলা এম এম কলেজের শিক্ষার্থী সৈয়দ আলিফ রোহান হত্যার রেশ না কাটতেই রূপসায় বখাটেদের ছুরিকাঘাতে হৃদয় শেখ (২৪) নামে আরেক যুবক খুন হয়েছেন। ২০ এপ্রিল সন্ধ্যায় তাকে ছুরিকাঘাতের পর মহড়া দিয়ে এলাকা ছাড়ে বখাটেরা। জানা যায়, পাওনা টাকা নিয়ে হৃদয় শেখের খালাতো ভাই লিটন সরদারের সঙ্গে স্থানীয় কয়েকজনের বচসা হয়। এর জেরে লিটনকে মারধরের সময় বাধা দিতে গেলে হৃদয় শেখের বুকে ধারালো গুপ্তি (ছুরি) দিয়ে আঘাত করা হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। রূপসা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন জানান, হামলায় জড়িতদের চিহ্নিত করা গেছে, দুজন গ্রেফতার হয়েছে।

এর আগে ফুলতলা পায়গ্রাম কসবায় স্কুলের ক্রীড়া অনুষ্ঠানে মেয়েদের ইভ টিজিংয়ে বাধা দেওয়ায় ৩১ মার্চ কলেজছাত্র আলিফ রোহানকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। মোটরসাইকেল মহড়া দিয়ে ক্যাম্পাসে ঢুকে ফিল্মিস্টাইলে তারা রোহানকে ঘিরে ধরে ছুরিকাঘাত করে। হত্যায় জড়িত হাসিবুল ইসলাম শান্ত ও শেখ আবু হাসনাতকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ। উপরন্তু মামলা থেকে তাদের বাঁচাতে তদবির শুরু করেছে প্রভাবশালীরা।

জানা যায়, মাদক বেচাকেনায় রাজনৈতিক ও পেশাদার সন্ত্রাসীদের ছত্রচ্ছায়ায় ভয়ানক ‘গ্যাং কালচার’ তৈরি হয়েছে খুলনায়। বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার খুলনার সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট মোমিনুল ইসলাম বলেন, ‘অনেক ক্ষেত্রেই প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতারা কিশোর-তরুণদের ব্যবহার করেন। জোরে হর্ন বাজিয়ে, সাইলেন্সার ছাড়া দ্রুতগতিতে মোটরসাইকেল চালানো, মেয়েদের উত্ত্যক্ত করা- রাজনৈতিক নেতাদের ক্ষমতায় কিশোর গ্যাংগুলো আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে। পুলিশি অভিযানেও গ্যাং কালচার দমানো যাচ্ছে না।’ বিশ্লেষকরা বলছেন, নিম্নবিত্ত বঞ্চিত পরিবারের বখাটেরা এসব গ্রুপে নেতৃত্বে দিচ্ছে। শিক্ষিত, ধনী পরিবারের বেপরোয়া সন্তানরা বস্তি এলাকার মাস্তান ছেলেদের দ্বারা পরিচালিত হয়। যা ভয়ংকর পরিণতি ডেকে আনছে সমাজে। ফুলতলা সদর ইউপি সদস্য ফারুক হোসেন জানান, কলেজছাত্র রোহান হত্যায় জড়িত হাসনাত-শান্ত-দীপ্তর নেতৃত্বে কিশোর গ্যাং মাদক ব্যবসায় জড়িত। তারা ইভ টিজিং করত, বিভিন্ন মোড়ে আড্ডা দিত। এদের মদদদাতাদের আইনের আওতায় আনতে না পারলে গ্যাং কালচার বন্ধ হবে না। জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুব হাসান বলেন, ‘টিভি সিরিয়াল ক্রাইম প্যাট্রল, সিআইডি দেখে তারা ক্রাইমে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। এটা কিশোর-তরুণদের কাছে হাতছানির মতো। এ ক্ষেত্রে অভিভাবক, শিক্ষকদের বড় ভূমিকা রয়েছে। সামাজিক সচেতনতা তৈরিতে মোটিভেশনে পুলিশ কাজ করছে। একসময় পাড়া-মহল্লায় “মুরব্বি” থাকতেন। সবাই মিলে অপরাধ দমনে ভূমিকা নিতেন। এখন এসব দেখা যায় না।’

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর