রবিবার, ১ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

হাদিসুর নেই, ঈদ আনন্দও নেই পরিবারে

বরগুনা প্রতিনিধি

ইউক্রেনে রকেট হামলায় নিহত হাদিসুরের বিয়ের কথা ছিল ঈদুল ফিতরের পর। কত পরিকল্পনা ছিল মা-বাবা আর ভাই-বোনদের। কিন্তু নির্মম নিষ্ঠুরতা মেনে নিতে হলো। আনন্দ-উচ্ছ্বাস নিয়ে অন্যান্য বছরের মতো ঈদুল ফিতর এলেও ঈদের আনন্দ নেই ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে বাংলাদেশি জাহাজ ‘এমভি বাংলার সমৃদ্ধি’তে রকেট হামলায় নিহত বরগুনার বেতাগীর নৌ প্রকৌশলী হাদিসুর রহমানের পরিবারে। ঈদের আনন্দে সবাই যখন মাতোয়ারা তখন হাদিসুরের গ্রামের বাড়ি বরগুনার বেতাগী উপজেলার কদমতলায় স্মৃতিচারণা আর মাতম। স্বজনদের আহাজারিতে এখনো শোকে স্তব্ধ গোটা বাড়ি। হাদিসুর নেই। সুনসান গোটা বাড়ি। থেমে থেমে ভেসে আসে আদরের ছেলেহারা এক মায়ের বুক চাপড়ানো আহাজারি। কিছুতেই থামছে না হাদিসুরের মায়ের কান্না। দুই মাস আগে মারা যান হাদিসুর। তবু মাতম কমেনি। বরং ঈদের আগমনী যেন বেদনাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণ। হাদিসুরকে ছাড়া যেন কোনো কিছু কল্পনা করতে পারছে তাঁর পরিবার। আনন্দ-উৎসবে সবকিছুতেই ছিল তাঁর ছোঁয়া। এখন সেই পরিবারে ঈদুল ফিতরে নেই কোনো আনন্দ।

নৌ প্রকৌশলী হাদিসুর ছিলেন বেতাগী সদর ইউনিয়নের নাদেরিয়া মাদরাসার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মো. আবদুর রাজ্জাকের ছেলে। ২ মার্চ ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে আটকে থাকা বাংলাদেশি পণ্যবাহী জাহাজ ‘এভি বাংলার সমৃদ্ধি’ রকেট হামলার শিকার হলে গোলার আঘাতে নিহত হন হাদিসুর রহমান। গ্রামের বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা-মা, বড় এক বোন, ছোট দুই ভাইসহ অসংখ্য আত্মীয়স্বজন রয়েছেন হাদিসুরের। প্রিয় স্বজনকে হারিয়ে এবার বিবর্ণ আর আনন্দহীন ঈদ পালন করবেন তাঁরা।

হাদিসুরের ছোট ভাই গোলাম মাওলা প্রিন্স বলেন, ‘প্রতি বছর ঈদ এলে পরিবারের সবাইকে পছন্দ অনুযায়ী পোশাক কিনে দিত ভাই। এবার ঈদে বাড়ি এসে বিয়ে করার কথা ছিল তার। এবার ঈদে সবাই আছে কিন্তু নেই শুধু আমাদের ভাই হাদিসুর। রমজান মাস চলে গিয়ে ঈদ আসছে। ভাই না থাকায় আনন্দ সব যেন মাটি হয়ে গেছে আমাদের। জানি না কবে আনন্দ ফিরে পাব।’

গতকাল সকালে ঈদ প্রস্তুতি জানতে কদমতলায় হাদিসুরের গ্রামের বাড়ি যান এই প্রতিনিধি। হাদিসুরের কথা মনে করিয়ে দিতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন মা রাশিদা বেগম। শোকার্ত মাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেন স্বজন-পড়শিরা।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে মা বলেন, ‘আমাদের ঈদ আনন্দ হাদিসের সঙ্গেই শেষ হয়ে গেছে। হাদিস ঈদে বাড়ি এলে আমাদের সবার জন্য কেনাকাটা করত। সবার সঙ্গে একসঙ্গে ঈদ করত। এবার ঈদে আমাকে আর কেউ কাপড় কিনে দেবে না। কেউ আর দোয়া চাইবে না।’

তিনি বলেন, ‘হাদিসুরের কুলখানির আগে সাবেক মন্ত্রী বরগুনা-১ আসনের এমপি অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু ১ লাখ টাকা, বরগুনা-২ আসনের এমপি শওকত হাচানুর রহমান রিমন ও বরগুনার পুলিশ সুপার ১৫ হাজার টাকা করে দিয়েছিলেন। তবে ঈদ উপলক্ষে এখনো কেউ কোনো সহযোগিতা আমাদের করেননি। মানসিক বিপর্যস্ত পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কীভাবে আমাদের ঈদ হবে সে চিন্তাই করি এখন।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর