সোমবার, ৩০ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

অশান্ত কুষ্টিয়ায় বাড়ছে খুনোখুনি

১ মাসে নয়জনকে হত্যা, উৎকণ্ঠা বাড়ছে জনমনে

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

অশান্ত কুষ্টিয়ায় বাড়ছে খুনোখুনি

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একসময়ের সন্ত্রাসকবলিত রক্তাক্ত জনপদ ছিল কুষ্টিয়া। সবসময় রক্তের হোলি খেলায় মেতে থাকত এ অঞ্চলের চরমপন্থি-সন্ত্রাসীরা। মানুষ খুন ছিল এখানকার নিত্যদিনের চিত্র। আওয়ামী লীগ সরকারের সদিচ্ছা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর পদক্ষেপের কারণে দীর্ঘ প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় ধরে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ছিল এ জেলায়। কিন্তু হঠাৎ করে শান্ত এ জনপদ আবারও যেন অশান্ত হয়ে উঠেছে। একের পর এক হত্যাকান্ডের ঘটনায় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে এই জনপদে। চলতি মে মাসে কুষ্টিয়া জেলায় অন্তত ৯ জন খুন হয়েছেন।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২ মে ঈদের আগের দিন বিকালে কুষ্টিয়া জেলার সবচেয়ে সন্ত্রাসকবলিত ঝাউদিয়া ইউনিয়নের আস্তানগর গ্রামে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের বিবদমান দুই পক্ষের সংঘর্ষে এক পক্ষের তিনজনসহ চারজন নিহত হন। এ ঘটনায় উভয় পক্ষই পরস্পরকে দায়ী করে থানায় মামলা করে। ঈদের দুই দিন পর ৫ মে কুমারখালী উপজেলার গড়াই ব্রিজের নিচ থেকে মাসুদ খাঁ নামে একজনের মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় থানায় প্রথমে অপমৃত্যু মামলা হলেও পরে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে মেলে হত্যার আলামত। ১০ মে ভেড়ামারা উপজেলার  ষোলদাগ গ্রামে জায়গা-জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে খুন হন আবদুল কুদ্দুস। আরেকটি আলোচিত হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে গত ১১ মে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায়। স্থানীয় বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে সন্ত্রাসীরা জাসদ যুবজোট নেতা মাহবুব খান সালামকে কুপিয়ে হত্যা করে। এ ঘটনায় এক ইউপি চেয়ারম্যান, উপজেলা যুবলীগের সভাপতিসহ একই পরিবারের চারজনসহ আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের আসামি করা হয়। ১৮ মে সদর উপজেলার দহকুলা গ্রামে খুন হয় জীবন আহমেদ নামে এক এসএসসি পরীক্ষার্থী। রাতে মোটরসাইকেলে করে বাড়ি থেকে বের হয়ে পরদিন তার মৃতদেহ উদ্ধার হয়। মোটরসাইকেলটি পাওয়া যায় পুকুরপাড়ে।

একই দিনে গভীর রাতে খোকসায় হেলথকেয়ার অ্যান্ড হাসপাতালের কর্মচারী মো. হিরণের মৃতদেহ পাওয়া যায়। বিচারের দাবিতে এলাকাবাসী বিক্ষোভ-সমাবেশ করেছে। ২০ মে শহরের চর মিলপাড়ায় পারিবারিক কলহের জের ধরে মাদকাসক্ত সন্তানের হাতে খুন হন বাবু শেখ নামের হতভাগ্য এক পিতা। ২১ মে সদর উপজেলার ঝাউদিয়া ইউনিয়নের কালিতলা এলাকায় পারিবারিক বিরোধে কুপিয়ে হত্যা করা হয় জসিম নামে একজনকে।  এই হিসাবে মে মাসে কুষ্টিয়ায় খুন হয়েছেন ৯ জন। এর মধ্যে সদর উপজেলাতেই ছয়জন। ভেড়ামারা, দৌলতপুর ও কুমারখালীতে একজন করে। এ ছাড়া খোকসার হিরণের মৃত্যু নিয়ে ধোঁয়াশা এখনো কাটেনি।

একের পর এক খুনের ঘটনা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন জেলার মানুষ। কুষ্টিয়া সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি রফিকুল আলম টুকু বলেন, সম্প্রতি কুষ্টিয়া জেলায় খুনোখুনির ঘটনা অনেক বেড়ে গেছে। যা চরম উদ্বেগজনক বলে আমি মনে করি। কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসগর আলী বলেন, সামাজিক দ্বন্দ্বের কারণেই অধিকাংশ খুনের ঘটনা ঘটছে। খুনোখুনি থামাতে হলে প্রশাসন, রাজনীতিবিদ, জনপ্রতিনিধি ও সামাজিক নেতাদের এক কাতারে দাঁড়াতে হবে। কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মো. খাইরুল আলম এসব হত্যাকান্ডকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, যে কোনো মূল্যে জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো রাখার জন্য পুলিশের সব ইউনিটকে আরও বেশি তৎপর হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জনসাধারণকে পুলিশের প্রতি আস্থা রাখার আহ্বান জানান জেলা পুলিশের এই শীর্ষ কর্মকর্তা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর