নতুন মোটরসাইকেল কেনার পর নিজের ড্রাইভিং লাইসেন্স ও গাড়ির কাগজপত্র (কিস্তিতে রেজিস্ট্রেশন) করার জন্য বাংলাদেশ রোড ট্র্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ), খুলনা কার্যালয়ে নিয়ম মেনে আবেদন করতে এসেছিলেন চাকরিজীবী রফিকুল ইসলাম। অফিসে যাওয়ার পরই আশপাশে ঘোরাঘুরি করা কয়েকজন জানায়, এখানে আবেদন করলেই সব পাওয়া যায় না। অফিসের কর্মকর্তারা নানা অজুহাতে সময়ক্ষেপণ করেন। তারাই দ্রুত লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্স ও গাড়ির কাগজপত্র করে দেওয়ার কথা বলে তার কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা নেন। রফিকুল ইসলাম জানান, বাড়তি টাকা নেওয়ার পরও ড্রাইভিং লাইসেন্স ও কাগজপত্র না দিয়ে তাকে দিনের পর দিন ঘোরানো হয়।
জানা যায়, খুলনা বিআরটিএ অফিস ঘিরে দালালচক্র সিন্ডিকেট সক্রিয় রয়েছে। অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও জড়িয়ে পড়েছেন দালালচক্রের সঙ্গে কমিশন বাণিজ্যে। দালালচক্রের ফাঁদে পড়ে ‘দ্রুত ও নির্বিঘ্নে কাগজপত্র প্রদানের প্রলোভনে’ সেবাপ্রত্যাশীরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। অভিযোগ রয়েছে, অফিসের কর্মকর্তারা আবেদনপত্রে নানা ভুল-ভ্রান্তি ধরে সময়ক্ষেপণ করেন। ফলে অধিক টাকার বিনিময়ে দালালদের মাধ্যমে কাজ করাতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হয় সাধারণ মানুষকে। অনেক ক্ষেত্রে বিআরটিএ কর্মকর্তাদের পারসোনাল সহকারী হিসেবে কাজ করে দালালরা।
এদিকে গতকাল খুলনা বিআরটিএ অফিসে র্যাবের অভিযানে ৩০ জন দালাল আটক হয়। এদের মধ্যে ২৫ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ ও জরিমানা করা হয়। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ আল-আমিন জানান, সরকারি এ অফিসকে ঘিরে রয়েছে দালালদের অবাধ বিচরণ। লাইসেন্স করতে আসা সাধারণ মানুষকে বিপাকে ফেলে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। কোনো ব্যক্তি লাইসেন্সের জন্য গেলে কর্মকর্তা কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলার আগেই দালালদের খপ্পরে পড়তে হয়। তিনি বলেন, বিভিন্নভাবে মানুষকে হয়রানি ও উত্ত্যক্ত করার অভিযোগে দ বিধি ১৮৬০ সালের ২৯১ ধারায় গণউপদ্রবের অভিযোগে গ্রেফতার ১৯ জনকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ ও ছয় জনকে ৫৩ হাজার ২০০ টাকা জরিমানা করা হয়। পাঁচজনের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের খালাশ দেওয়া হয়েছে। র্যাব-৬-এর পরিচালক লে. কর্নেল মুহাম্মদ মোসতাক আহমেদ বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ ছিল এখানে লাইসেন্স বা রেজিস্ট্রেশন করতে এসে মানুষ প্রতারিত হচ্ছে। দালালদের মাধ্যমে কাজ করতে গিয়ে নানা ধরনের ভোগান্তিতে পড়ছে। এ কারণে ১৫-২০ দিন ধরে যারা এ কাজ করে তাদের শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের যাচাই-বাছাই করে অভিযানে গ্রেফতার করা হয়।বিআরটিএ খুলনা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক তানভীর আহমেদ জানান, দালালদের দৌরাত্ম্য বন্ধে র্যাবকে অভিযান চালানোর জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল। এ ধরনের অভিযানে সেবার গুণগত মান বজায় রাখা সম্ভব হবে।