মঙ্গলবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
গবেষণার তথ্য

জলবায়ু পরিবর্তনে বরেন্দ্রভূমিতে নতুন নতুন সংকট তৈরি হচ্ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

তীব্র তাপদাহ, খরা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বরেন্দ্র অঞ্চলে নতুন নতুন সংকট দিনে দিনে বাড়ছে। বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তন খরার কারণে পানি সংকট আরও তীব্র হচ্ছে। পানিকে কেন্দ্র করে বরেন্দ্র অঞ্চলের সমাজব্যবস্থায় সহিংসতা আগের তুলনায় বেড়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এ অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী রেশম শিল্পের ওপরও প্রভাব ফেলেছে। অতিরিক্ত তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং অস্বাভাবিক তাপমাত্রা ওঠানামার কারণে রেশম পলু পোকা পালনে বাধাগ্রস্ত হচ্ছেন পলু পোকা চাষিরা। বেড়েছে তাদের উৎপাদন খরচও। বরেন্দ্র অঞ্চলের অন্যতম লাক্ষা চাষেও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলো লক্ষ্য করা যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও বরেন্দ্রভূমির নয়া সংকট বিষয়ক গবেষণা উপস্থাপন ও নীতি সংলাপে এসব তথ্য জানানো হয়। গবেষণার প্রাথমিক সারসংক্ষেপ ও সার্বিক দিক বিবেচনায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল সকালে রাজশাহীর কাজলায় হেরিটেজ আর্কাইভস বাংলাদেশ মিলনায়তনে এ গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন ও নীতি সংলাপের আয়োজন করে উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক।

গবেষণা উপস্থাপন ও নীতি সংলাপে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব অন্যদিকে মানুষ দৃষ্ট দুর্যোগগুলোও বরেন্দ্র জনগণ এবং এ অঞ্চলের প্রাণবৈচিত্র্যের ক্ষতি ডেকে আনছে। অস্বাভাবিক এবং অনিয়ন্ত্রিত রাসায়নিক কীটনাশকের ব্যবহারের ফলে জনস্বাস্থ্য হুমকির মধ্যে পড়েছে। আবার কীটনাশকের ব্যবহারের ফলে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তারা তাদের ক্ষতি অনুযায়ী পায় না ন্যায্য ক্ষতিপূরণ। গবেষণায় উঠে এসেছে, এ অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তন এবং স্থানীয়ভাবে আবহাওয়া ও খরার কারণে কিছু এলাকায় অনাবাদি জমির পরিমাণ বাড়ছে। আবার পানির অভাবে কৃষকের উৎপাদন খরচ বেড়েছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, খরাপ্রবণ এলাকাগুলোতে ৩০ ভাগ জমি কোনো না কোনোভাবে অনাবাদি থেকে যাচ্ছে। এমনকি কোনো এলাকায় তারও বেশি জমি পরিত্যক্ত থেকে যাচ্ছে। একই সঙ্গে প্রান্তিক কৃষক জমি হারাচ্ছে। সমীক্ষা এলাকায় ১০টি কেসস্টাডির মাধ্যমে দেখা যায় ১৯৭১ সাল থেকে জুন-২০২২ পর্যন্ত গড়ে অন্তত ১০টি পরিবার তার ৭০ ভাগ জমি হারিয়েছেন।

জনগোষ্ঠীর মতামত এবং প্রত্যক্ষ পর্যবেক্ষণসহ গবেষণার তথ্য পর্যালোচনা সাপেক্ষে সংলাপে উপস্থাপন করা হয়েছে, বরেন্দ্র অঞ্চলের যে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে তা অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় অনেক বেশি। বিশেষ করে আবহাওয়া অফিসের তথ্যানুযায়ী দেখা যায়, এ অঞ্চলে গড়ে প্রতি বছর ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বাড়ছে। তীব্র তাপদহ এবং অনাবৃষ্টি বেড়েছে যাচ্ছে। এর ফলে মানুষ নানামুখী ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। প্রান্তিক এবং আদিবাসী মানুষ তার জীবন-জীবিকা হারাচ্ছেন। জীবন-জীবিকার তাগিদে স্থানান্তরিত হচ্ছেন মানুষজন।

গবেষণা উপস্থাপন ও নীতি সংলাপে বরেন্দ্র অঞ্চল ও কার্যকর উন্নয়ন বিষয়ে কথা বলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্যাটেনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক শরিফুল ইসলাম, নদী ও পরিবেশ গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী, বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ রাজশাহীর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এ টি এম মাহফুজুর রহমান ও জাহাঙ্গীর আলম, বাংলাদেশ রেশম গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের সিনিয়র গবেষক আফতাব উদ্দিন, পরিচালক (প্রশাসন) ফরহাদ হোসেন, সেভ দ্য নেচার রাজশাহী চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান, লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ। গবেষণা উপস্থাপন ও নীতি সংলাপে সঞ্চালনা করেন এবং ধারণাপত্র তুলে ধরেন বারসিক বরেন্দ্র অঞ্চল সমন্বয়কারী ও গবেষক শহিদুল ইসলাম।

সর্বশেষ খবর