শিরোনাম
শনিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

পরিবহন শ্রমিকদের কাছে জিম্মি সিলেটবাসী

কথায় কথায় ধর্মঘট, নিজেদের দ্বন্দ্বে সড়ক অবরোধ, প্রশাসন কঠোর হলেই দাবি ওঠে অপসারণের

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

পরিবহন শ্রমিকদের কাছে জিম্মি সিলেটবাসী

সিলেটে নেতাদের ওপর দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে টায়ার পুড়িয়ে রাস্তা অবরোধ করেন পরিবহন শ্রমিকরা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

পান থেকে চুন খসলেই ধর্মঘট! রাতে ঘোষণা দিয়ে ভোর থেকে বিভাগজুড়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ। মোড়ে মোড়ে পিকেটিং। রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সও আটকে দেন তারা। নিজেদের দ্বন্দ্বে এলোপাতাড়ি গাড়ি রেখে বন্ধ করে দেন সড়কে যানবাহন চলাচল। প্রশাসন কঠোর হলে দাবিতে যুক্ত হয় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার অপসারণ। এভাবেই সিলেটবাসীকে জিম্মি করে রেখেছেন পরিবহন শ্রমিকরা। সাধারণ মানুষ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, জনপ্রশাসন ও রাজনীতিবিদ- সবাই যেন অসহায় তাদের কাছে। নিজেদের ‘সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী’ ভেবে পরিবহন শ্রমিক নেতারা জিম্মি করে রেখেছেন সিলেটবাসীকে। তাঁদের দাপটের কাছে প্রশাসনকেও চলতে হচ্ছে ‘নতজানু’ হয়ে। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিরাজ করছে চরম ক্ষোভ।

সিলেটের পুলিশ কমিশনার নিশারুল আরিফের অপসারণসহ ছয় দফা দাবিতে ১৩ সেপ্টেম্বর সিলেট বিভাগে ধর্মঘট পালন করেন পরিবহন শ্রমিকরা। ওইদিন সিলেটের দক্ষিণ সুরমার চন্ডীপুল এলাকায় অ্যাম্বুলেন্স আটকে মারধর ও ছিনতাইর অভিযোগে মামলা করেন জৈন্তাপুর উপজেলার সাহাব উদ্দিন। ১৪ সেপ্টেম্বর দক্ষিণ সুরমা থানায় রেকর্ড হওয়া ওই মামলার আসামি সিলেট জেলা বাস মিনিবাস কোচ মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ময়নুল ইসলাম, জেলা সিএনজিচালিত অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি জাকারিয়া আহমদ, জেলা হিউম্যান হলার চালক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি রুনু মিয়া মঈনসহ আরও ৩০-৪০ জন। পরিবহন শ্রমিক নেতারা ওই মামলা প্রত্যাহারের জন্য পুলিশ কমিশনারকে চাপ দেন। কিন্তু পুলিশ রাজি না হওয়ায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে সিলেট মহানগরের সব সড়কে এলোপাতাড়ি গাড়ি রেখে অবরোধ করেন তারা। কিছুক্ষণের মধ্যে জেলাজুড়ে শুরু হয় পরিবহন শ্রমিকদের অবরোধ। এতে পুরো সিলেট মহানগর অচল হয়ে পড়ে। জেলার বিভিন্ন স্থানে আটকা পড়ে যানবাহন। পরিবহন শ্রমিকদের এমন নৈরাজ্যের পরিপ্রেক্ষিতে রাতে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং আওয়ামী লীগ নেতারা বৈঠক করে মামলার আসামিদের গ্রেফতার না করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়ার আশ্বাস দিলে রাত সাড়ে ১০টার দিকে তারা অবরোধ প্রত্যাহার করেন। এ সাড়ে ৩ ঘণ্টা অবরোধ চলাকালে রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স এমনকি লাশবাহী গাড়িও চলাচল করতে দেননি পরিবহন শ্রমিকরা।

এর আগে ১৩ সেপ্টেম্বর ছয় দফা দাবিতে সিলেট বিভাগজুড়ে পরিবহন ধর্মঘট পালন করেন পরিবহন শ্রমিকরা। গাড়ি ও চালকের কাগজপত্র পরিদর্শন, ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনের কারণে মামলা ও গাড়ি রেকারের অভিযোগে মহানগর পুলিশ কমিশনার নিশারুল আরিফের অপসারণসহ ছয় দফা দাবিতে তারা ওই ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিলেন। দাবির মধ্যে ছিল সিলেট শ্রম আদালতের শ্রমিক প্রতিনিধি নাজমুল আলম রুমেনের অপসারণও। এর আগে তারা বিভিন্ন ট্রাফিক সার্জেন্ট, ট্রাফিকের উপকমিশনার, অতিরিক্ত উপকমিশনারসহ প্রশাসনের বিভিন্ন কর্ত ব্যক্তির অপসারণ দাবিতে ধর্মঘট ডেকে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে রাখেন। প্রতিবারই প্রশাসনকে বৈঠক করে তাদের কাছে ‘নতিস্বীকার’ করে ধর্মঘট প্রত্যাহার করাতে হয়েছে। ১৩ সেপ্টেম্বর পুরো দিন ধর্মঘটের পর বিভাগীয় কমিশনার ও ডিআইজির নেতৃত্বে বৈঠক করে তাদের ধর্মঘট স্থগিত করাতে হয়েছিল।

শ্রমিকদের এ অরাজকতা প্রসঙ্গে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘নিজেদের স্বার্থের বিরুদ্ধে গেলেই ধর্মঘট ডেকে, সড়ক বন্ধ করে পরিবহন শ্রমিকরা মানুষকে জিম্মি করে ফেলছেন। এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।’ সিলেট জেলা বাস মিনিবাস কোচ মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ময়নুল ইসলাম ধর্মঘট প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমরা পুলিশ কমিশনারের অপসারণ দাবিতে আন্দোলন করছি। এতে আক্রোশবশত তিনি শ্রমিকনেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করিয়েছেন।

এ মামলা প্রত্যাহারের দাবি নিয়ে আমাদের কয়েকজন নেতা পুলিশ কমিশনারের কাছে গিয়েছিলেন। পুলিশ কমিশনার তাদের সান্ত্বনা না দিয়ে উল্টো আমাদের বিরুদ্ধে নিজে বাদী হয়ে আরও মামলা করার হুমকি দিয়েছেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করেন।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর