মঙ্গলবার, ৩ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

মদপানে মৃত্যু বাড়ছে রাজশাহীতে

চোলাই ও অতিরিক্ত পানে আট বছরে ২৭ মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

মদপানে মৃত্যু বাড়ছে রাজশাহীতে

রাজশাহীতে চোলাই ও অতিরিক্ত মদপানে প্রতি বছরই মানুষ মারা যাচ্ছে। গত আট বছরে মদপানে মারা গেছে ২৭ জন। অতিরিক্ত মদপান এসব মৃত্যুর কারণ বলে ধারণা করা হলেও চিকিৎসকরা বলছেন, মূলত মিথাইল অ্যালকোহল পানের কারণে এসব মৃত্যু হচ্ছে।

রাজশাহী মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আলমগীর হোসেন জানান, অ্যালকোহল নেশাজাতীয় দ্রব্য। সহনীয় পরিমাণের বেশি সেবন করলে সমস্যা হওয়াটা স্বাভাবিক। জনস্বাস্থ্যবিদ ডা. চিন্ময় কান্তি বলেন, রাজশাহী অঞ্চলে যাদের মৃত্যু হয়েছে, তার অধিকাংশই মিথাইল অ্যালকোহল পান করে। এ ছাড়া দেশি মদে ‘টক্সিক মেটারিয়ালস’ ব্যবহার করা হয়। যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর।

২০২১ সালের ১ জানুয়ারি মদপান করে ছয়জনের মৃত্যু হয়। তারা হলেন- নগরীর হোসনীগঞ্জের ফয়সাল হোসেন (২৮), বাগমারার শান্তাপাড়ার সজল (২৫), বাকির মোড়ের সাগর (২৫), হেতমখাঁর তুহিন (২৬), কাদিরগঞ্জের মুন আহমেদ (১৮) এবং দড়িখড়বোনার ইশাকুল ইসলাম (২২)। অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয় আরও ১৭ জন। একই বছরের ৮ অক্টোবর বাঘায় জিন্নাত আলী নামে একজনের মৃত্যু হয়। অতিরিক্ত মদপানে ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয় বলে জানা যায়। ওই বছরের ৮ এপ্রিল চারঘাটে চোলাই মদপানে মাহবুর রহমান নামে একজনের মৃত্যু হয়। ২০২২ সালের ২ জানুয়ারি মদপানে আছাদুল ইসলাম (২২) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়। আছাদুল কাটাখালীর সমসাদিপুর এলাকার আকালু মন্ডলের ছেলে। একই ঘটনায় আরও দুই যুবক চিকিৎসাধীন ছিলেন।

পরের দিন ৩ জানুয়ারি ভেজাল মদপানে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) ছাত্র মাসরুর মুহিতের (২৩) মৃত্যু হয়। মুহিত সিরাজগঞ্জের বেলকুচির মুকুন্দগাতি গ্রামের বাসিন্দা। ৯ ফেব্রুয়ারি অ্যালকোহল পানে রজব আলী (৬০) ও জামাল শেখ (৫৫) নামে চাচাতো দুই ভাইয়ের মৃত্যু হয়। রামেক হাসপাতালের একটি সূত্র জানায়, তাদের ‘মিথানল পয়জনিং’-এ মৃত্যু হয়। ২০২০ সালের ৪ নভেম্বর গোদাগাড়ীতে অতিরিক্ত মদপানে সেলিম (৩০) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়। সেলিম গোদাগাড়ী উপজেলার মাটিকাটা গ্রামের নিজাম উদ্দীনের ছেলে। ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই মোহনপুরে চোলাই মদপানে রঞ্জলী (৩৫) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। ২০১৮ সালের ১৩ জানুয়ারি রিতু খাতুন (২০) নামে ডাশমারীর এক কলেজছাত্রীর রহস্যজনক মৃত্যু হয়। পরিবারের সদস্যরা জানায়, অতিরিক্ত মদপানে তার মৃত্যু হয়। ২০১৮ সালের ১৩ অক্টোবর তানোরে অতিরিক্ত মদপানে জসিম টুডু (৩৫) নামে একজনের মৃত্যু হয়। ২০ এপ্রিল তানোরে চোলাই মদ পানে চোনাই হেমরম (৬৫) নামে একজনের মৃত্যু হয়। ২০১৫ সালের ৩ ডিসেম্বর অতিরিক্ত মদপানে বাঘার আড়ানী পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী বাবুল হোসেনের মৃত্যু হয়। ২০১৬ সালের ১৯ জুলাই বিষাক্ত মদপানে গৌরশহরপুর গ্রামের মাহাতাব (৬০), পুলিশ একাডেমির সুইপার কলোনির অনিল (৬৫), জোহর লাল (৭০) ও বধুনী রাণী (৬০) এবং মোক্তারপুরের হেলাল (৫০) নামে চারজনের মৃত্যু হয়। ২০ জুলাই চারঘাটে মদপানে জাহাঙ্গীর আলম (৬০) ও লালন মিয়া (৪০) নামে দুজনের মৃত্যু হয়। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. কফিল উদ্দিন জানান, এসব মৃত্যুর অধিকাংশের ময়নাতদন্ত হয়নি পরিবারের আপত্তি না থাকায়। তবে তিনি যেগুলোর ময়নাতদন্ত করেছেন, তাদের শরীরে অ্যালকোহলের উপস্থিতি পেয়েছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর