মঙ্গলবার, ৩ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

রংপুর আওয়ামী লীগে শুদ্ধাচার

ভেঙে দেওয়া হয়েছে রংপুর জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি, তৃণমূলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর

রংপুর আওয়ামী লীগে শুদ্ধাচার

রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জামানত হারানোর পর দলীয় সিদ্ধান্তে ভেঙে দেওয়া হয়েছে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি। বিষয়টি রংপুরে গতকাল দিনভর ছিল টক অব দ্য টাউন। কমিটি ভেঙে দেওয়া নিয়ে দলের নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষ একেক ধরনের মন্তব্য করছেন। কেউ বলছেন ভালো হয়েছে। আবার কেউ বলছেন নির্বাচনে হেরে যাওয়ার বিষয়টির দায় কেন্দ্রীয় নেতারাও এড়িয়ে যেতে পারেন না। বিভিন্নজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মনোনয়ন না দিয়ে নির্বাচনী মাঠে একেবারে নতুন অ্যাডভোকেট হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়াকে মনোনয়ন দেওয়ায় দলের মনোনয়নবঞ্চিতরা গাছাড়াভাবে প্রচার-প্রচারণায় অংশগ্রহণ করায় ফল বিপর্যয় হয়েছে। অনেকে নীরব ভূমিকা পালন করেছেন। এ ছাড়া দলে একজন বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় আওয়ামী লীগ সিটি নির্বাচনে জামানত হারিয়েছে। এ কারণে রবিবার সন্ধ্যায় গণভবনে সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভায় রংপুর জেলা ও মহানগর কমিটি ভেঙে দিয়ে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা-কর্মীর সঙ্গে কথা হলে তাদের অনেকেই দলের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, রংপুর জেলা ও মহানগর কমিটি দীর্ঘদিন ধরে একই ব্যক্তি পরিচালনা করায় দলে নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি হয়নি। ফলে দল ঝিমিয়ে পড়েছিল। নতুন কমিটি গঠন হলে দল হয়তো পুনরায় চাঙা হতে পারে। কেউ কেউ বলেন, রসিক নির্বাচনের সময় দলের নেতারা গর্ব করে বলেছিলেন, রংপুর মহানগরে আওয়ামী লীগের ৫০ হাজার কর্মী রয়েছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের প্রার্থী ভোট পেয়েছেন ২২ হাজার। তাহলে দলের নেতা-কর্মীরাই আওয়ামী লীগকে ভোট দেননি। আবার কেউ কেউ বলছেন, প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কেন্দ্র ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তৃণমূল পর্যায়ে নেতা-কর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে প্রার্থী দেওয়া হলে আওয়ামী লীগের এমন অবস্থা হতো না। তাই ফল বিপর্যয়ের জন্য কেন্দ্র্রীয় নেতারাই দায়ী। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, ২০১৭ সালের নির্বাচনে কমপক্ষে ২৫ জন কেন্দ্রীয় নেতা রংপুরে এসে প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিয়েছিলেন। এবার কেন্দ্র থেকে মাত্র তিনজন নেতা এসেছিলেন। তারা নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় তেমন একটা সাড়া জাগাতে পারেননি। কেন্দ্র থেকেই গাছাড়া ভাব ছিল। জানা গেছে, ২০১২ সালে সিটি নির্বাচন দলীয় প্রতীকে না হলেও ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতা প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু বর্তমান মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন।

তবে ২০১৭ সালের নির্বাচনে তিনি জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তফার কাছে হেরে যান। তখনো হেরে যাওয়ার কারণ হিসেবে দলের অনৈক্যকে দায়ী করা হয়েছিল।

আগে রংপুরের মানুষ জাপা চেয়ারম্যান প্রয়াত এইচ এম এরশাদকে খুব একটা মূল্যায়ন করেননি। এরশাদ ক্ষমতায় থাকাকালে কারমাইকেল কলেজের এক অনুষ্ঠানে তিনি যোগ দিতে পারেননি স্থানীয়দের বাধার মুখে। ১৯৯০ সালে এরশাদ যখন জেলে যান তখন ‘রংপুরের ছাওয়াক বাঁচান’ এই স্লোগানকে কাজে লাগিয়ে জাতীয় পার্টির উত্থান হয় রংপুরে। এর পর থেকে একচেটিয়াভাবে রংপুর সদর শাসন করছে জাতীয় পার্টি। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মত, ১৯৯০ সালের পর থেকে রংপুরে আওয়ামী লীগের তেমন নেতা তৈরি হয়নি, যারা দলকে সংগঠিত করে নির্বাচনী বৈতরণী পার করতে পারেন। এ ছাড়া পদ-পদবি নিয়ে দলের মধ্যে দ্বন্দ্ব লেগেই ছিল।

জেলা আওয়ামী লীগের নতুন আহ্বায়ক শাহাদাৎ হোসেন বকুল বলেন, খুব দ্রুত একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হবে। এরপর পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে। তিনি বলেন, দলকে সুসংগঠিত করতে যা যা করা প্রয়োজন তা-ই করা হবে। একই কথা বলেন মহানগরের যুগ্ম-আহ্বায়ক আবুল কাশেম। তিনি বলেন, খুব দ্রুত দলকে সংগঠিত করার কাজ শুরু করা হবে।

উল্লেখ্য, রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার কাছে ১ লাখ ২৬ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া। তিনি নির্বাচনে চতুর্থ হন এবং জামানত হারান।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর