শনিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা
কমিটি বাণিজ্য

দুই নেতার অডিও ক্লিপে তোলপাড় বরিশাল বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল

বিএনপির বিভিন্ন ইউনিটের নেতৃত্ব পাইয়ে দিতে মোটা অঙ্কের উৎকোচ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে দলের গুরুত্বপূর্ণ পদধারীদের বিরুদ্ধে। বরিশাল জেলার একটি উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির নেতৃত্ব পেতে ৬০ লাখ টাকা খরচ করেছেন এক নেতা। জেলা বিএনপির তৎকালীন আহ্বায়ক ও সদস্যসচিব ছাড়াও এই অর্থ দিয়েছেন কেন্দ্রীয় কমিটির এক সহসাংগঠনিক সম্পাদক, মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব এবং জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদককে। আর্থিক লেনদেনকারী বাকেরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সদ্য সাবেক কমিটির আহ্বায়ক হারুন-অর রশিদ সিকদার ও ওই কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক কামরুজ্জামান মিজানের একান্ত কথোপকথনে পদবাণিজ্যের বিষয়টি উঠে এসেছে। এদিকে বরগুনা, পিরোজপুর ও বরিশাল জেলার (উত্তর) আওতাধীন বিভিন্ন কমিটি গঠনে আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে যুগ্ম মহাসচিব হাবীব উন নবী খান সোহেলকে প্রধান করে দুই সদস্যের কমিটি করেছে কেন্দ্রীয় কমিটি। গত ১৫ নভেম্বর হারুন অর রশিদ সিকদারকে আহ্বায়ক ও মিজানুর রহমান চুন্নুকে সদস্যসচিব করে বাকেরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হয়। এরপর অর্থ খরচের আলোচনা করেন আহ্বায়ক হারুন ও যুগ্ম আহ্বায়ক কামরুজ্জামান মিজান। যার একটি অডিওক্লিপ গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ প্রতিদিনের হাতে আসে।

ক্লিপে শোনা যায়, উপজেলা কমিটি পেতে কত টাকা নেতাদের দিতে হয়েছে তার হিসাব হারুনের কাছে জানতে চান মিজান। হারুন মিজানকে বলেন- তোমার মনে হয় কত কও! মিজান বলেন, আমি একবার শুনছি ২০ লাখ টাকার কথা কইছে। হে (জেলার তৎকালীন সদস্যসচিব) ১০ লাখ আর ওস্তাদের (জেলার তৎকালীন আহ্বায়ক) ১০ লাখ টাকার প্রস্তাব দেছে শুনছি। হারুন বলেন, এই উদবাগটা করছে (হা..র পো হা ..য়) মেবুল্যাহ্! ওস্তাদরে ডাইরেক্ট কইছে ১০ লাখ লই, আমন্যে ৫ আমি ৫। এ কথা তুই কারোরে কইস না আল্লাহর কাছে ঠেকা থাকবি। তখন মিজান বলেন, না কমু না। হারুন বলেন, ১০ লাখের ৫ ওস্তাদরে আর ৫ মেবুলরে দিছি। হেরপর টুকিটাকি তো হিসাব ছাড়া। ধরো জাহিদ (মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব), তসলিম (জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক), ভিপি কালা নান্নু- যেহানে যা লাগে কোনো ত্রুটি করি নাই। তখন মিজান জানতে চান তসলিমরে কি ৫। আমরা কালকে হিসাব করছি- কমিটি পাইতে আপনার ৬০ লাখ টাকা গ্যাছে। আমরা ধরছিলাম মেবুল ভাইরে দেছেন ১০। এহন তো কইলেন ৫। হারুন বলেন, কারও কাছে কবি না তো। মিজান বলেন, না কারও কাছে কমু না। হারুন বলেন, ৫-এর নিচে জাহিদও রাজি হয় নাই। এগুলো লাগছে খালি খালি। নান্টু ওগোফানে আমাগো ঘুরাইছে। আমি তো নান্টু ভাইরে কবজা করছি প্রথম চোডেই। এ পর্যায়ে কেউ গাদ্দারি করবে না বলে ঐকমত্য হয়ে স্থান ত্যাগ করেন তারা।

তবে হারুন অর রশিদ সিকদার নেতৃত্ব পেতে কাউকে টাকা দেওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন।

উপজেলা কমিটি গঠনে অর্থ নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব মীর জাহিদুল কবির বলেন, ওটা জেলার বিষয়। আমি রাজনীতি করি মহানগরে। ওসব মিথ্যা বানোয়াট ভিত্তিহীন।

বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুল হক নান্নু এ বিষয়ে মুঠোফোনে বলেন, ওই কমিটি গঠনে আমার কোনো এখতিয়ার কিংবা ভূমিকা নেই। টাকা নেওয়ার তো প্রশ্নই আসে না।

জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক এএইচএম তসলিম উদ্দিন মুঠোফোন না ধরায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, আমিও এই কথাটা শুনেছি। এর সমাধান রাজনৈতিকভাবে হবে। এ ধরনের কাজ যারা করে তাদের দিয়ে রাজনীতি, আন্দোলন-সংগ্রাম কিছুই হবে না। ইট শুড বি পানিসড্।

শুধু বাকেরগঞ্জ নয়, বরিশাল উত্তর জেলা, বরগুনা ও পিরোজপুরে কমিটি গঠনে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ তদন্তে গত বৃহস্পতিবার দলের যুগ্ম মহাসচিব হাবীব উন নবী খান সোহেলকে প্রধান করে দুই সদস্যের একটি কমিটি গঠিত হয়েছে। কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে বলে বিএনপির অভ্যন্তরীণ এক চিঠিতে জানা গেছে।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর