সোমবার, ৬ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

হুমকিতে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড রপ্তানি

♦ ডিপো থেকে ফেরত গেছে ১৫ কনটেইনার ♦ ৩৪ লাখ ডলারের ক্রয়াদেশ হাতছাড়া হওয়ার শঙ্কা

আজহার মাহমুদ, চট্টগ্রাম

দেশের সম্ভাবনাময় রপ্তানিপণ্য হাইড্রোজেন পারঅক্সাইডের রপ্তানি বন্ধের উপক্রম হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে এই রাসায়নিক কেনার ব্যাপারে বিদেশি ক্রেতাদের আগ্রহ বাড়লেও কাস্টমসের পদক্ষেপ পণ্যটির রপ্তানিতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কাস্টমসের নির্দেশে চিটাগং কনটেইনার ট্রান্সপোর্টেশন কোম্পানি লিমিটেডের (সিসিটিসিএল) রাসায়নিক পণ্য রাখার কার্যক্রম বন্ধের পর এমন পরিস্থিতি হয়েছে। চট্টগ্রামে রপ্তানিপণ্য রাখার ২০টি ডিপো রয়েছে। রপ্তানির আগে এসব ডিপোতে কাস্টমস পণ্যের শুল্কায়ন করে। এর মধ্যে শুধু সিসিটিসিএল ডিপোতে রাসায়নিক পণ্য রাখা যেত। কিন্তু বিকল্প ডিপোর ব্যবস্থা না করে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি কাস্টমস সিসিটিসিএলে রাসায়নিক দ্রব্য রাখা বন্ধ করে দেয়। বন্ধের পক্ষে বিপজ্জনক রাসায়নিক সংরক্ষণ ও ওঠানামায় নিয়ম না মানা, অগ্নিনির্বাপক সনদ হালনাগাদ না থাকাসহ বেশ কয়েকটি কারণ দেখায় কাস্টমস। রপ্তানিকারকরা বলছেন, এই সিদ্ধান্তের ফলে পণ্যটির রপ্তানি বন্ধের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। রপ্তানির পথে থাকা ১ লাখ ২০ হাজার ডলারের ১৫ কনটেইনার হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড ইতোমধ্যে রপ্তানিকারকদের কাছে ফেরত গেছে। দ্রুত ডিপোর ব্যবস্থা না হলে ৩৪ লাখ ডলারের ক্রয়াদেশ যে কোনো সময় বাতিল হতে পারে। ক্রেতারা মুখ ফিরিয়ে অন্য দেশে গেলে নতুন করে ক্রয়াদেশ পেতে আবার অনেক ঝামেলা হবে। এ বিষয়ে সিসিটিসিএল-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবু বক্কর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা ১৬ বছর ধরে রাসায়নিক রাখি। বিএম ডিপোতে বিস্ফোরণের পর আর কেউ এই পণ্য রাখে না। কাস্টমসের সঙ্গে কথা বলে আমরা সব নিয়ম মেনে পণ্য রাখি। আলাদা জায়গা আছে, ফায়ার লাইসেন্স হালনাগাদ আছে। দুর্ঘটনা মোকাবিলার প্রস্তুতি আছে। এত দিন কোনো সমস্যা হয়নি। কোনো ঘাটতি থাকলে পূরণ করে নিতাম। কিন্তু কাস্টমস সিসিটিসিএল এবং অন্য ডিপোগুলোকেও পণ্যটি রাখতে নিষেধ করেছে। এতে আমাদের চেয়ে দেশের ক্ষতি বেশি। এই সংকটের মধ্যে বেশকিছু ডলার হাতছাড়া হচ্ছে।’ বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশন (বিকডা) সূত্র জানিয়েছে, গত বছরের ৪ জুন বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণের পর এই পণ্যের রপ্তানি দুই মাস বন্ধ ছিল। ৯ জুন সিঙ্গাপুর বন্দর কর্তৃপক্ষ সব শিপিং লাইনকে নিরাপত্তা ও স্থান সংকটের অজুহাতে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড পরিবহন করতে নিষেধ করে। সেই নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেওয়ার পর এখন দেশীয় কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞার কারণে পণ্যটির রপ্তানি বন্ধের পথে। বিশ্বে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইডের বাজার প্রায় ১০০ কোটি ডলারের। বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস, দক্ষিণ কোরিয়া এই পণ্যের শীর্ষ রপ্তানিকারক। বাংলাদেশ রপ্তানিতে ১৭তম স্থানে আছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১ কোটি ৯২ লাখ ডলার, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১ কোটি ৬৬ লাখ ডলার, ২০২০-২১ অর্থবছরে ১ কোটি ৯০ লাখ ডলার, ২০২১-২২ অর্থবছরে ২ কোটি ৪৭ লাখ ডলার এবং চলতি অর্থবছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রথম ছয় মাসে ১ কোটি ৮২ লাখ ডলারের হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড রপ্তানি করে বাংলাদেশ। দেশের ১১টি কারখানায় পণ্যটি উৎপাদিত হয়। এসব পণ্য দেশের চাহিদা মিটিয়ে ভিয়েতনাম, চীন, ভারত, কোরিয়া, পাকিস্তানসহ ১২টি দেশে রপ্তানি করে ছয়টি প্রতিষ্ঠান আল-রাজি কেমিক্যাল কমপ্লেক্স, সামুদা কেমিক্যাল কমপ্লেক্স, এসএম কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ, তাসনিম কেমিক্যাল কমপ্লেক্স, এইচপি কেমিক্যালস লিমিটেড ও ইনফেনিয়া কেমিক্যাল। সামুদা কেমিক্যালের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মামুনুল ইসলাম জানান, দিন দিন পণ্যটির অর্ডার বাড়ছে। কিন্তু ক্রেতাদের অর্ডার থাকার পরও ডিপোর অভাবে পণ্যটি সরবরাহ করা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে সরকার উদ্যোগী না হলে পণ্যটির রপ্তানির পরিমাণ একেবারেই কমে যাবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর