সোমবার, ৮ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

বোরোয় স্বপ্নভঙ্গ কৃষকের

বৃষ্টিপাত না হওয়ায় লবণাক্ততার পরিমাণ বেড়ে গেছে। চারা বিবর্ণ ও লালচে হয়ে ধান চিটা হয়ে গেছে

ইমরান এমি, চট্টগ্রাম

বোরোয় স্বপ্নভঙ্গ কৃষকের

চট্টগ্রামে বোরো মৌসুমে ভালো ফলনের আশা করেছিল কৃষক। কিন্তু বৃষ্টি না হওয়ায় সেই স্বপ্ন এখন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। বোরো মৌসুমে বীজতলা থেকে চারা রোপণ ও থোড় বের হওয়া পর্যন্ত জমিতে পানি থাকতে হয়। চলতি মৌসুমে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় কর্ণফুলী নদীর পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ বেড়ে গেছে। ফলে সেচের পানিতে লবণাক্ততা ও ব্লাস্ট রোগে বোরো ধানের ক্ষতি হয়েছে। ধানের চারা বিবর্ণ ও লালচে হয়ে ধান চিটা হয়ে গেছে। আনোয়ারা, পটিয়া, বোয়ালখালী, কর্ণফুলী, বাঁশখালীসহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় এ চিত্র দেখা গেছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপ-পরিচালক ড. অরবিন্দ কুমার রায় বলেন, আমি পটিয়া ও বাঁশখালী উপজেলা সরেজমিন পরিদর্শন করেছি এবং তাতে বিষয়টি লক্ষ্য করেছি। আসলে এ বিষয়টি সমাধানের জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের এগিয়ে আসতে হবে। পাশাপাশি পিডব্লিউডির এখানে কাজ করার সুযোগ আছে। লবণাক্ত পানি বন্ধ ও তা নিষ্কাশন করতে পারলেই এ সমস্যা সৃষ্টি হবে না। চন্দনাইশ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার মুহাম্মদ ইমরান হোসেন বলেন, চন্দনাইশ পৌরসভা ও বরকল ইউনিয়নের বেশ কিছু এলাকায় লবণাক্ত পানির কারণে বোরো চাষে সমস্যা হয়েছে। কৃষকদের এখন থেকে লবণাক্ত পানিতে কোন জাত আবাদ করা যাবে সে বিষয়ে ট্রেনিং করাচ্ছি। আগামীতে যেন কৃষকের লোকসান না হয় তার জন্য লবণপানিতে আবাদযোগ্য জাত চাষ করতে হবে। এর মধ্যে বোরো মৌসুমে বিধান ৪৭, ৬১ ও ৬৭ এবং আমন মৌসুমে বিধান ৪০, ৪১, ৫৩, ৫৪ ও ৭৩ জাতের বীজের চাষ করলে কোনো সমস্যা হবে না এবং উৎপাদন ভালো হবে। সংশ্লিষ্টরা জানান, লবণাক্ত ছাড়াও প্রচন্ড তাপমাত্রায় ধানের পরাগায়ণে বাধাগ্রস্ত হয়ে ধান চিটা হয়ে গেছে। বাংলাদেশে আবাদকৃত ধান ৩৫ ডিগ্রির কম তাপমাত্রায় আবাদযোগ্য। কিন্তু চলতি মৌসুমে তাপমাত্রা ছিল ৩৫ ডিগ্রিরও বেশি। এতে পরাগায়ণে বাধা ও অতিরিক্ত গরমে ধান চিটা হয়ে যাচ্ছে। পরাগায়ণের জন্য ধানের চারায় স্বাদু পানি ছিটানো ও জমিতে ২-৩ ইঞ্চি পানি রাখার পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ।

খাদ্য নিয়ন্ত্রক অধিদফতর চট্টগ্রামের উপ-সহকারী পরিচালক দোলন দেব বলেন, চট্টগ্রাম অঞ্চলে এবার ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ হাজার ৩৫ মেট্রিক টন ও সেদ্ধ চাল সীতাকুন্ড, পটিয়া ও ফটিকছড়ি উপজেলা থেকে সংগ্রহ করার লক্ষ্যমাত্রা ৮০৬ মেট্রিক টন। এবার সরকারিভাবে প্রতি কেজি ধান ৩০ টাকা ও সেদ্ধ চাল ৪৪ টাকা করে সংগ্রহ করা হবে।

এদিকে এ সমস্যার কারণে চাষাবাদে যে ব্যয় হয়েছে তা তুলে আনতে পারবে কি না তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছে কৃষক। এরই মধ্যে সরকারিভাবে কৃষকদের কাছ থেকে ৩৩ টাকা দরে প্রতি কেজি ধান সংগ্রহ করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। কৃষকরা জানান, প্রতি ৪০ শতক (এক কানি) জমির পানি খরচ ২ হাজার ৫০০ টাকা, ধানের বীজ ৩ হাজার টাকা, কীটনাশক ও সার খরচ ৫ হাজার, ধান রোপণ খরচ ৪ হাজার, ধান কাটা ৫ হাজার, ধান মাড়াই ১ হাজার টাকাসহ প্রতি কানিতে ২২ হাজার ৫০০ টাকার মতো ব্যয় হয়েছে। এ মৌসুমে অনাবৃষ্টি ও লবণাক্ততার কারণে ধানের শীষ মরে চিটা হয়ে গেছে। লাভ তো হবে না বরং ক্ষতির সম্মুখীন হবেন বলে জানিয়েছেন তারা।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর