চাষাঢ়ায় নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আজিজুল বারী রাজিবসহ চারজনকে মারধর করলে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে তাদের হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে। শুক্রবার রাতে কলেজ রোড এলাকায় মারধরের এই ঘটনা ঘটে। তবে সেখানে থাকা মহানগর ছাত্রলীগের নেতারা বলছেন, ছিনতাইকালে ওই চারজন স্থানীয়দের হাতে প্রহারের শিকার হয়েছেন। পরে তাদের রক্ষায় খবর দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। অন্যদিকে আহত ছাত্রদল নেতারা বলছেন, ছাত্রলীগাররা পরিকল্পিতভাবে ছিনতাইকারী আখ্যা দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর জখম করেছেন। ওই সময় জাতীয় দৈনিক পত্রিকার দুই সাংবাদিককে লাঞ্ছিত করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে পাল্টাপাল্টি এ অভিযোগ খতিয়ে দেখছে বলে জানিয়েছে ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ।
স্থানীয়রা জানান, সরকারি তোলারাম কলেজের ¯œাতক প্রথম বর্ষের ছাত্র মো. শিহাব (২০) তার সঙ্গে থাকা আরেক সহপাঠী মো. নাঈম হোসেন (২০) কোচিং ক্লাস করে বাড়ি ফেরার সময় ডাকবাংলোর মোড়ে এসে পৌঁছালে কয়েক ব্যক্তি তাদের পথরোধ করে মোবাইল, নগদ টাকাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। বাধা দিলে ছিনতাইকারীরা তাদের ছুরিকাঘাত করে। এতে শিহাবের ডান হাত রক্তাক্ত জখম হয়। এ ছাড়া তার মুখমণ্ডলে আঘাত করলে চোখের চশমা ভেঙে যায়। শিহাবের সাথী বন্ধু নাঈম হোসেনের পিঠে জখম হয়। শিহাবের ১ হাজার ৭০০ টাকা, মোবাইল ফোন (ভিভো ওয়াই ২০) ও গলার ১৪ আনা ওজনের একটি সোনার চেইন ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। তাদের ডাকচিৎকারে স্থানীয় জনতা এগিয়ে এলে তিন ছিনতাইকারী পালিয়ে যায়। স্থানীয়দের সহায়তায় দুই ছিনতাইকারীকে আটক করলে ওই চক্রের অজ্ঞাত ২০-২৫ জন তাদের ছাড়িয়ে নিতে আসে। এ সময় স্থানীয় জনতা ও আশপাশের সাধারণ শিক্ষার্থীরা খবর পেয়ে এগিয়ে এলে তাদের ধাওয়ায় ওই চক্রের সবাই পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে আটক দুই ছিনতাইকারীকে প্রশাসনের কাছে হস্তান্তরের জন্য স্থানীয় থানায় খবর দেওয়া হলে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু, যুবদল নেতা আনোয়ার হোসেন আনু, দুলাল ও মাসুদসহ অজ্ঞাত ২০-২৫ জন আটক ছিনতাইকারীদের ছিনিয়ে নিতে গেলে স্থানীয়দের সঙ্গে তাদের ধস্তাধস্তি হয়।
তবে পুরো অভিযোগটি মিথ্যা ও পরিকল্পিত জানিয়ে আহতরা ছাত্রদল নেতা-কর্মীরা বলেন, শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ‘মোবাইল ছিনতাইকারী’ আখ্যা দিয়ে তিন যুবককে মারধর করা হয়। পরে তাদের একজন মামাতো ভাই ও মহানগর ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আজিজুল বারী রাজিবকে ফোন করে বিষয়টি জানায়। এরপর রাজিব সেখানে ছুটে গেলে তাকেও বেধড়ক মারধর করা হয়। ঘটনা জানতে পেরে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান ও সদস্য সচিব আবুল ইউসুফ খান টিপুর নেতৃত্বে বিএনপি নেতা-কর্মীরা সেখানে গিয়ে রাজিবসহ ওই যুবকদের উদ্ধার করেন এবং তাদের সদর জেনারেল হাসপাতালে পাঠান। রাজিবের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় সেখান থেকে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এ ঘটনার জন্য মহানগর ছাত্রলীগ সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদকে দায়ী করেন আহত রাজিবসহ ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা।
অন্যদিকে ঘটনাস্থলে ছুটে যাওয়া সরকারি তোলারাম কলেজের ভিপি হাবিবুর রহমান রিয়াদ জানান, দুই সাধারণ শিক্ষার্থী ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছে জানার পর আমি ঘটনাস্থলে ছুটে আসি। এসে দেখি দুজন ছিনতাইকারীকে আটক করে স্থানীয় লোকজন পুলিশে খবর দিয়েছে। এর মধ্যে বিএনপির ২০/২৫ জন নেতা-কর্মী জঙ্গি স্টাইলে সেখান থেকে ছিনতাইকারীদের ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে আশপাশের লোকজন তাদের ধাওয়া দেয়। এরপর পুলিশ এসে তাদের নিয়ে যায়।
এ বিষয়ে ফতুল্লা মডেল থানার ওসি নূরে আজম গতকাল বিকালে জানান, এ ঘটনায় থানায় কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি। কোনো ছিনতাইকারী আটক হয়নি। পুরো বিষয়টি আমরা তদন্ত করছি। প্রকৃতভাবে যারা প্রহারের শিকার হয়েছে তারা কারা। আর যারা প্রহার করেছে তারা কারা। বিষয়টি তদন্ত না করে কোনো কিছু বলা যাচ্ছে না।
জাগো নিউজের জেলা প্রতিনিধি মোবাশ্বির শ্রাবণ জানান, ‘মারামারির খবর পেয়ে ডাকবাংলোর সামনে ঘটনার ভিডিও ধারণ করতেই আমার ও আজকের পত্রিকার প্রতিনিধি সাবিতের মুঠোফোন ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়।’