২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ১৭:৩৩

করোনাভাইরাস: ডায়মন্ড প্রিন্সেস নিয়ে বিতর্ক বাড়ছেই

অনলাইন ডেস্ক

করোনাভাইরাস: ডায়মন্ড প্রিন্সেস নিয়ে বিতর্ক বাড়ছেই

জাপানের ইয়োকোহামা বন্দরে কোয়ারেন্টিন করে রাখা জাহাজটি নিয়ে ক্রমবর্ধমান বিতর্কের মধ্যেই জাহাজটির শত শত যাত্রী, যারা করোনাভাইরাস আক্রান্ত হননি, তারা বাড়ি ফিরছেন।

তবে, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় জাপানের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা ও বিতর্ক বাড়ছে।

এর মধ্যে যে জাহাজটিতে শত শত মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, সেই ডায়মন্ড প্রিন্সেস পরিদর্শন করেছেন জাপানের একজন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, তিনি বলেছেন জাহাজের অবস্থা 'ভীষণ বিশৃঙ্খল'।

এদিকে মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, ভাইরাস ঠেকাতে নেয়া ব্যবস্থা 'হয়তো পর্যাপ্ত ছিল না'।

সেই সঙ্গে ডায়মন্ড প্রিন্সেসের যাত্রীরাও বর্ণনা করেছেন, জাহাজে কোয়ারেন্টিন থাকাকালে কী কঠিন পরিস্থিতি পাড়ি দিতে হয়েছে তাদের।

এ পর্যন্ত ডায়মন্ড প্রিন্সেসের অন্তত ৬২১জন যাত্রী এবং ক্রু কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।

বলা হচ্ছে, চীনের বাইরে একক কোনো জায়গায় করোনাভাইরাস সংক্রমিত হবার এটি সর্বোচ্চ সংখ্যা।

জাহাজটিতে মোট তিন হাজার ৭০০ যাত্রী ছিলেন। প্রায় দু সপ্তাহ ধরে জাহাজটি জাপানের ইয়োকোহামা বন্দরে নোঙ্গর করে আছে।

জাহাজের ভেতরে করোনাভাইরাস সংক্রমিত হবার হার বেড়ে যাওয়ায় বেশ কয়েকটি দেশ তাদের নাগরিকদের ইতিমধ্যেই সেখান থেকে সরিয়ে নিয়েছে।

কয়েকদিন আগে কয়েক শত মার্কিন নাগরিককে জাহাজটি থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরিয়ে নেয়া হয়, এবং তাদের সেখানে কোয়ারেন্টিন করা হয়।

জাহাজের ব্রিটিশ যাত্রীদের যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জাহাজেই অবস্থান করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, এবং বলা হয়েছে এ সপ্তাহের শেষ নাগাদ অর্থাৎ রোববারের আগেই তাদের জন্য বিমান পাঠানো হবে।

জাহাজের এক ব্রিটিশ দম্পতি যারা নিয়মিত সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে সাংবাদিকদের জাহাজের খবরাখবর পাঠাচ্ছিলেন, বুধবার জানিয়েছেন, পরীক্ষায় তাদের দুজনারই করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং যুক্তরাজ্য জাহাজটি থেকে নিজেদের যাত্রীদের ফিরিয়ে নেবার পর তাদের নতুন করে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে রাখা হবে।

যাত্রীদের নিয়ে আশঙ্কা
ডায়মন্ড প্রিন্সেসে কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা করার পরও জাহাজটির যাত্রীরা ব্যাপকহারে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ায় বিশেষজ্ঞরা জাহাজটির নেয়া পদক্ষেপের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ কেনটারো আইওয়াটা, যিনি জাপানের কোবি ইউনিভার্সিটির সংক্রামক রোগ বিভাগের একজন অধ্যাপক, তিনি জাহাজটি পরিদর্শন করে বলছেন, জাহাজে যে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল, 'সংক্রমণ ঠেকাতে তা ছিল একেবারেই অপর্যাপ্ত'।

জাহাজটি ঘুরে দেখার পর তিনি ইউটিউবে একটি ভিডিও পোষ্ট করেন, যাতে বলা হয়, তিনি দেখে এসেছেন কর্তৃপক্ষের নেয়া ব্যবস্থায় সংক্রমিত ব্যক্তিদের, যারা সংক্রমিত হননি তাদের থেকে পুরোপুরি আলাদা করতে সক্ষম হয়নি।

দেশটির রোগ নিয়ন্ত্রণ এবং প্রতিরোধ বিভাগ সতর্কতা দিয়ে বলেছে, "কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা হয়ত সংক্রমণ ঠেকানোর জন্য যথাযথ ছিল না। আর কোন উপসর্গ ছাড়াই নতুন করে সংক্রমিত হবার হার দেখে বোঝা যায় ঝুঁকিতে আছেন অনেকেই।"

যদিও জাপানের কর্মকর্তারা বলছেন, বেশিরভাগ যাত্রী আক্রান্ত হয়েছেন কোয়ারেন্টিন হবার আগেই।

যাত্রীরা ফিরছেন
এদিকে ভাইরাসে আক্রান্ত নয় এবং যাদের মধ্যে কোনো উপসর্গও দেখা যায়নি, এরকম ৫০০ যাত্রী বুধবার থেকে ফিরতে শুরু করেছেন।

জাহাজ থেকে নেমে ইয়োকোহামা বন্দরে থাকা কোচ কিংবা ট্যাক্সিতে করে তারা গন্তব্যে রওয়ানা হয়েছেন। তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারবেন এখন।

তবে জাপানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কিছু দিন পর পর তাদের কয়েক দফা স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ডাকা হবে।

যাদের মধ্যে ভাইরাস সংক্রমণের চিহ্ন পাওয়া যায়নি কিন্তু তারা সংক্রমণের শিকার মানুষের সাথে কেবিনে ছিলেন, এমন ব্যক্তিদের অতিরিক্ত কোয়ারেন্টিন করা হবে, কাজেই তারা এখন জাহাজ ছেড়ে বের হতে পারবেন না। ডায়মন্ড প্রিন্সেসে ৫০টিরও বেশি দেশের নাগরিক ছিল।

বিবিসি সংবাদদাতারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন যে এই যাত্রীরা সারাবিশ্বে ভাইরাস ছড়ানোর ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারেন। সূত্র: বিবিসি

বিডি প্রতিদিন/আরাফাত

সর্বশেষ খবর