গোটা বিশ্বে মহাবিপর্যয় নামিয়ে এনেছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। এরই মধ্যে বিশ্বের ১৯২টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে এই ভাইরাস।
ভাইরাসটি চীন থেকে উৎপত্তি হলেও বর্তমানে সেখানে নিয়ন্ত্রণে এসেছে এটি। তবে প্রাণঘাতী করোনা এখন তাণ্ডব চালাচ্ছে ইউরোপজুড়ে।
ইউরোপের ইতালিকে মৃত্যুপুরীতে পরিণত করেছে এই ভাইরাস। দেশটিতে ইতোমধ্যে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৪৭৬ জনে। আক্রান্ত হয়েছে ৫৯ হাজার ১৩৮ জন।
এছাড়াও স্পেন ও ফ্রান্সেও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে করোনাভাইরাস। মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরানেও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে এই ভাইরাস। এরই মধ্যে সেখানে মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ৬৮৫ জনের।
করোনার এই তাণ্ডবের মধ্যে অবিরাম সতর্কতামূলক প্রচার চালানো হচ্ছে বিশ্বজুড়ে। এই পরিস্থিতিতে কী করবেন, আর কী করবেন না— সেগুলো সম্বন্ধে অবগত করা হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। বাংলাদেশেও বিভিন্নভাবে মানুষদের সচেতন করা হচ্ছে।
তা সত্ত্বেও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ছে করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নানা ভুল ধারণা এবং অনেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া সেসব ভুল বার্তায় বিশ্বাস করে ফেলছেন। করোনাভাইরাস নিয়ে এমনই কিছু ভুল ধারণা তুলে ধরা হল।
প্রথমেই জেনে রাখা দরকার, এখনও করোনাভাইরাস প্রতিরোধের কোনও চিকিৎসা বা ওষুধ আবিষ্কার হয়নি। তাই এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়ার কোনও অ্যান্টিবায়োটিক নেই। সবাইকে তাই বাড়িতে বিশ্রামে থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা এবং প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে বলছেন।
অনেকেরই ধারণা বাদুড় থেকেই করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে। সেই আতঙ্ক থেকে মুরগির মাংস খেলেও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আতঙ্ক তৈরি হয়েছে মানুষের মধ্যে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত মুরগির মাংস থেকে এই সংক্রমণ ছড়ানোর কোনও সংযোগসূত্র খুঁজে পাননি গবেষকরা।
করোনা আক্রান্ত বাইরের দেশ থেকে আসা মালপত্রের মাধ্যমেও কি এই অসুখ ছড়াতে পারে? এমন আশঙ্কাও দেখা গেছে মানুষের মধ্যে।
তবে জেনে রাখা ভাল, জড় পদার্থের উপর এই ভাইরাস খুব বেশি সময় সক্রিয় থাকে না। কয়েক ঘণ্টার জন্য সক্রিয় থাকে মাত্র। তাই অহেতুক আতঙ্কিত হওয়ার দরকার নেই।
মিরাকল মিনারেল সলুউশনে এই ভাইরাস মোকাবিলার ক্ষমতা নেই। অনলাইনে মিরাকল মিনারেল সলুউশন বলে যে তরল বিক্রি হচ্ছিল, সেটিতে আসলে বিশুদ্ধ পানির সঙ্গে ২৮ শতাংশ সোডিয়াম ক্লোরাইড মেশানো রয়েছে, যা ক্ষতিকর।
রসুনের অনেক গুণ। রসুনের মধ্যে অর্গানোসালফার রয়েছে, যা হার্ট, মস্তিষ্ক এবং খাদ্যনালী ভাল রাখতে সাহায্য করে। কিন্তু বেশি করে রসুন খেলেই করোনাভাইরাসের সঙ্গে লড়াইয়ের প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলা যাবে না।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, রসুনের অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল কিছু গুণাগুন রয়েছে ঠিকই, কিন্তু রসুনে করোনাভাইরাস মোকাবিলার কোনও প্রমাণ এখনও মেলেনি।
নাক-মুখ-চোখ দিয়েই এই ভাইরাস শরীরে ঢুকছে। তাই বারবারই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে নাক-মুখ-চোখে হাত নিয়ে যেতে নিষেধ করা হচ্ছে এবং বারবার অ্যালকোহল জাতীয় স্যানিটাইজার দিয়ে বা সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার কথা বলা হচ্ছে। সচেতন মানুষ এই নির্দেশিকা মেনেই চলছেন, তার বাইরেও ভুল ধারণার জেরে অতিরিক্ত কিছু সুরক্ষা নিচ্ছেন।
যেমন, নাকে লবণ পানি ঢুকিয়ে নাক পরিষ্কার করছেন, মাউথ ওয়াশ দিয়ে বারবার গড়গড়া করছেন। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, এতে অনেক জীবানুই মারা যেতে পারে, কিন্তু করোনাভাইরাসের কোনও ক্ষতি হবে না। সূত্র: আনন্দবাজার
বিডি প্রতিদিন/কালাম