রবিবার, ৮ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

বগুড়ায় ট্রেনে কাটা পড়ে এক বছরে ৬১ জনের মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া

বগুড়ায় ট্রেনে কাটা পড়ে এক বছরে ৬১ জনের মৃত্যু

বগুড়ায় ট্রেনে কাটা পড়ে গত এক বছরে মৃতের সংখ্যা প্রায় ৬১ জন। নানা কারণেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। কেউ অসাবধানতায় হাঁটতে গিয়ে, মোবাইলে সেলফি তুলতে গিয়ে, কানে হেড ফোন লাগিয়ে লাইনের পাশ দিয়ে হাঁটা আবার শীতে ঘনকুয়াশার কারণে মৃত্যু হয়েছে। তবে বেশির ভাগ প্রাণহানি হচ্ছে অসাবধানতা ও অসচেতনতার কারণে। যেটি দিন দিন বেড়েই চলছে। স্টেশন মাস্টার মো. সাজেদুর রহমান সাজু জানান, রেললাইনের পাশ দিয়ে অথবা লাইনের ওপর দিয়ে অসাবধানতায় পায়ে হাঁটা, কানে হেড ফোন লাগিয়ে গান শুনতে শুনতে লাইনের ওপর দিয়ে চলাফেরা করা এবং আশপাশের বিভিন্ন শব্দে ট্রেনের শব্দ শুনতে না পাওয়ার কারণে অনেকেই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। এ ছাড়া যত্রতত্র রেলক্রসিং, তাড়াতাড়ি করে ট্রেন থেকে নামা এবং লাইনের দুই পাশে দোকান ও অবৈধ স্থাপনা রেললাইনের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে শীতের সময় ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যায়। কারণ শীতে কুয়াশার কারণে ট্রেনের লাইন দেখা যায় না তাছাড়া কান-মাথা গরম কাপড়ে ঢাকা থাকে। ট্রেনের হর্ন শুনতে না পেলে দুর্ঘটনা বেড়ে যায়। অনকের চলন্ত ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যার প্রবণতা রয়েছে। তিনি আরও জানান, ট্রেন যখন ৮০-৮৫ কিমি. গতিতে চলে, তখন এটি অন্য গাড়ির মতো ব্রেক করা সম্ভব হয় না। কাজেই ট্রেন তার গতিতেই যাবে। মানুষকে সচেতন হতে হবে। সচেতনতার অভাবেই মারা যাচ্ছে মানুষ। রেললাইন ধরে হাঁটা দ নীয় অপরাধ। লাইনের দুই পাশে ১৪৪ ধারা জারি থাকে। জানা গেছে, বিভিন্ন সময়ে ট্রেনে কাটা পড়ে বগুড়ায় মৃত্যুর ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলছে। এর মধ্যে বেশির ভাগেরই মৃত্যু হচ্ছে মোবাইল ফোন ব্যবহার বা অসাবধানতাবশত চলাফেরার কারণে। গত এক বছরে ২০২২ সালে বগুড়া ও তার আশপাশ এলাকায় ১৮২ কিলোমিটারের রেলপথের মধ্যে ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে ৬১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে গত বুধবার শহরের শহরদিঘি এলাকায় কানে হেড ফোন লাগিয়ে রেললাইনে বসে গান শোনার সময় ট্রেনে কাটা পড়ে তার মৃত্যু হয়। সে বগুড়ার গাবতলী উপজেলার বালিয়াদিঘি দক্ষিণপাড়া গ্রামের মো. খোরশেদ মিয়ার ছেলে সৈকত। প্রতি বছর বগুড়া ও তার আশপাশ এলাকায় ট্রেনে কাটা পড়ে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশা মানুষের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেই চলছে। কারও মাথা কাটা যাচ্ছে আবার কারও হাত-পা কাটা পড়ে মৃত্যু হচ্ছে। এসব দুর্ঘটনায় অপমৃত্যুর মামলা করা হয়। বগুড়া রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ব্রিটিশ সরকারের শাসন আমলের ১৮০ বছর আগের পুরনো আইন দিয়েই এখনো চলছে রেল। রেললাইনের দুই পাশে ২০ ফুটের মধ্যে নির্দিষ্ট লোক ছাড়া প্রবেশ নিষিদ্ধ। ট্রেনের ছাদে উঠে কিংবা চলন্ত ট্রেনে এক বগি থেকে অন্য বগিতে লাফিয়ে যাওয়ার সময় নিচে পড়ে অনেকে মারা যাচ্ছেন।

এদের মধ্যে শিশু-কিশোররও রয়েছে। সান্তহার রেলওয়ের থানার ইনচার্জ (ওসি) মুক্তার হোসেন জানান, বিভিন্ন সময়ে বগুড়া ও তার আশপাশ এলাকায় রেললাইন থেকে লাশ উদ্ধার হচ্ছে। কখনো ট্রেনে কাটা পড়ে আবার ট্রেনের ধাক্কায় ছিটকে পড়ে মৃত্যু হচ্ছে। গত জানুয়ারি মাসে বগুড়র সান্তাহার, সোনাতলা, আদমদিঘী, জয়পুরহাট ও নাটোরে তাদের থানার আওতায় রেলপথে ট্রেনে কাটা পড়ে ৬১ জনের মৃত্যু হয়েছে।

 

সর্বশেষ খবর