মৎস্যভান্ডারখ্যাত কিশোরগঞ্জের বিস্তীর্ণ হাওরাঞ্চলসহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় নিষিদ্ধ জাল দিয়ে চলছে মাছ ধরার মহোৎসব। নিষিদ্ধ এসব জালের মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিকর হচ্ছে চায়না দুয়ারি জাল। আগে এসব জাল কিনতে বেগ পোহাতে হলেও বর্তমানে পাওয়া যাচ্ছে হাতের নাগালেই। সংশ্লিষ্ট ও মৎস্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই জালে ছোট-বড় মাছসহ যে কোনো জলজ প্রাণী একবার ঢুকলে আর বের হতে পারে না। জালটি হাওরে ‘চায়না জাল’, ‘ম্যাজিক জাল’ ‘রিং জাল’ নামেও পরিচিত। দৈর্ঘ্য ও মানভেদে একটি চায়না দুয়ারির দাম স্থানীয় বাজারে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা। হালকা ও মিহি বুননের ছোট ফাঁসের এই জালে আটকা পড়ে মারা পড়ছে নানা জাতের পোনামাছও। কম পরিশ্রমে বেশি মাছ ধরতে পারায় জেলেদের কাছে জনপ্রিয় হয় এই জাল। হাওর, খাল-বিল ও নদনদীতে অহরহই চোখে পড়ে এসব জাল। এই জালে ধ্বংস হচ্ছে মাছ, মাছের পোনাসহ সব ধরনের জলজ প্রাণী-উদ্ভিদ, প্রাকৃতিক খাদ্যকণা (প্লাঙ্কটন)। এতে মাছের বংশবিস্তার মারাত্মক হুমকিতে পড়ার আশঙ্কা করছেন মৎস্য বিশেষজ্ঞরা। এই জালের ব্যবহার বন্ধ না হলে অদূর ভবিষ্যতে নতুন প্রজন্ম হয়তো ভুলে যাবে দেশি প্রজাতির বিভিন্ন মাছের নাম, বলছেন তারা।
কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার করাতি গ্রামের বাবুল মিয়া মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। এক সময় টানা জাল, টাক জাল দিয়ে মাছ ধরতেন তিনি। এখন ব্যবহার করছেন নিষিদ্ধ চায়না দুয়ারি জাল। এরপরও আশানুরূপ মাছ মিলছে না। চায়না দুয়ারি জাল নিষিদ্ধ জেনেও এর ব্যবহার প্রসঙ্গে বাবুল মিয়া বলেন, প্রায় সবাই এ জাল দিয়ে মাছ ধরে। বাধ্য হয়ে তিনিও এ জাল কিনে এনেছেন। নিষিদ্ধ এ জালটি হাতের নাগালেই পাওয়া যায়। এ জালের কারণে খাল-বিলে আগের মতো আর মাছ পাওয়া যায় না স্বীকার করে তিনি বলেন, ১০-১২ বছর আগেও বিভিন্ন প্রজাতির যে পরিমাণ মাছ ধরা পড়ত, বর্তমানে তার সিকি ভাগও মিলছে না। একই গ্রামের জেলেবধূ শাহানা আক্তার বলেন, আশপাশের সবাই চায়না দুয়ারি জাল দিয়ে মাছ ধরে। এটা নিয়ে কেউ কিছু বলে না। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম নিষিদ্ধ জালের ব্যবহারের বিষয়টি স্বীকার করে জানান, বর্ষায় হাওরে পানি আসার সঙ্গে সঙ্গেই জেলেরা বেহুঁশ হয়ে মাছ ধরতে নেমে পড়ে। তাদের কোনোভাবেই থামানো যায় না। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। সবাই সচেতন না হলে এর ব্যবহার বন্ধ করা কঠিন।