উজানের ঢল ও বর্ষণে ফেনীতে মুহুরি ও লালমনিরহাটে তিস্তা নদীর পানি বাড়ছে। ফেনীর পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে গতকাল পানি বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। বিপৎসীমা অতিক্রম করলে নীলফামারী, রংপুর, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামে বন্যা দেখা দিতে পারে, বলেন ওই পয়েন্টে পানি পরিমাপক নুরুল ইসলাম। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন নদীপাড়ের বাসিন্দারা। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর- ফেনী : জেলার পরশুরাম ও ফুলগাজীর উপজেলার মুহুরি নদীর পানি হঠাৎ বেড়েছে। এতে এ দুই উপজেলার পশ্চিম অলকা, ঘোয়ালগ্রাম, পশ্চিম অলকা, ধনিকুন্ডা, নোয়াপুর, জঙ্গল ঘোনা, শালধর, মধুগ্রাম, উত্তর শ্রীপুর, দেড়পাড়া, নিলখী, দৌলতপুরগ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এর আগে ৮ জুলাই বেড়িবাঁধের ভেঙে যাওয়া অংশ দিয়ে উজান থেকে নেমে আসা পানি প্রবল চাপে লোকালয়ে ঢুকছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি, একাধিক পাকা রাস্তা। ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছে বহু মানুষ। ভেসে গেছে বাঁধ মেরামতের কাজে ব্যবহৃত ড্রেজার মেশিনের পাইপ ও জিও ব্যাগ। স্থানীয় বাসিন্দারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় পরশুরামে ৬০.৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত মুহুরি নদীর পরশুরাম স্টেশনে পানি সমতলে ৩২১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি বিপৎসীমার ১৭২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও আগামী ৬ ঘণ্টার মধ্যে তা সতর্কসীমায় পৌঁছাতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্র। এর আগে যেসব পরিবার ঘরবাড়ি হারিয়েছিল, তারা হঠাৎ এ বন্যায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে। লালমনিরহাট : উজানের ভারী বর্ষণে জেলায় তিস্তা নদীতে পানি বাড়ছে। দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে গতকাল পানি বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। সকাল ৬টায় সেখানে পানিপ্রবাহ ছিল ৫২ দশমিক ৮ সেন্টিমিটার। বিপৎসীমা ধরা হয় ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার। ওই পয়েন্টের পানি পরিমাপক নুরুল ইসলাম জানান, শনিবার রাত থেকে নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে থাকে। রাতে পানিপ্রবাহ ৫১ দশমিক ৪৫ সেন্টিমিটার ছিল। রবিবার প্রবাহিত হয় ৫২ সেন্টিমিটারে। গতকাল সকাল ৬টায় তা বেড়ে ৫২ দশমিক ০৮ সেন্টিমিটারে প্রবাহিত হয়। তিনি বলেন, বিপৎসীমা অতিক্রম করলে নীলফামারী, রংপুর, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামে বন্যা দেখা দিতে পারে। বিপৎসীমা অতিক্রম করার আগেই বন্যাকবলিত হয় উত্তরের এ ৫ জেলার চরাঞ্চল। হাতিবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারির মহসিন মিয়া বলেন, সকাল থেকে পানি বাড়তেছে।
রাতের মধ্যেই বন্যা দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। তিস্তাপাড়ের কুদ্দুস মিয়া বলেন, উজানে গজলডোবা গেট ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সরকার নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। বর্ষা এলেই থেমে থেমে পানি ছেড়ে দিয়ে আমাদের ভাসিয়ে দেয়। তিস্তা ব্যারেজ কন্ট্রোল রুম ইনচার্জ নুরুল ইসলাম বলেন, সোমবার ভোর থেকে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। পানি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যারেজের ৪৪ গেট খুলে রাখা হয়েছে। যে কোনো সময় বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্পের বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী বলেন, আমরা সতর্ক আছি। চরের মানুষকে আমরা সতর্ক থাকতে বলেছি।