নড়াইল সদর হাসপাতাল চত্বরে প্রায় ৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ২৫০ শয্যার নবম তলা ভবন উদ্বোধন করা হয়েছে ২০২৪ সালের ২৭ এপ্রিল। কিন্তু এখানে শুরু হয়নি চিকিৎসাসেবা বা হাসপাতালের কোনো কার্যক্রম। ফলে কোনো উপকারে আসছে না সুবিশাল নতুন এই ভবন। এদিকে হাসপাতালে শয্যাসংকটে রোগীদের চিকিৎসা নিতে হচ্ছে বারান্দা, সিঁড়িঘর ও করিডরে থেকে। এতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সেবা নিতে আসা রোগীদের।
জেলার প্রায় ৮ লাখ মানুষের ভরসাস্থল এই চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠান। হাসপাতাল সূত্র জানায়, নড়াইল জেলা শহরের ১০০ শয্যার এ হাসপাতালে প্রতিদিন সাড়ে ৪০০ রোগী সেবা নিতে আসেন। এসব রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসক-নার্সদের। জানা যায়, ১০০ শয্যা থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ প্রকল্পে ওই ভবনের নির্মাণকাজ দেড় বছরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের পর সাত বছর কেটে গেলেও সেখানে চালু করা যায়নি নড়াইল জেলা হাসপাতালের কার্যক্রম। লিফট স্থাপন না করায় সুবিশাল এ ভবন এখনো হস্তান্তর করেনি গণপূর্ত বিভাগ। বর্তমানে ১০০ শয্যার হাসপাতালের সেবার মান নিয়ে রয়েছে রোগীদের অসন্তোষ। প্রতিদিনই বাড়ছে জন ভোগান্তি। গণপূর্ত বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, অপারেশন প্ল্যান (ওপি) প্রকল্পের আওতায় ১০০ শয্যার নড়াইল সদর হাসপাতালটিকে ২৫০ শয্যায় উন্নীতকরণে ২০১৮ সালের জুন মাসে ৮ তলা ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয়। যার প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় প্রায় ৬০ কোটি টাকা। কার্যাদেশ অনুযায়ী ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে ভবনের কাজ শেষ করে কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তরের কথা ছিল। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে কয়েক দফা সময় বাড়িয়ে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে শেষ হয় ভবন নির্মাণের মূল কাজ। এদিকে করোনার সময়ে বিশ্বব্যাংকের প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা অর্থায়নে নবম তলায় নতুন প্রকল্পের কাজ শুরু করেন আরেক ঠিকাদার। নবম তলায় থাকছে ১০ শয্যার ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ), ২০ শয্যার আইসোলেশন ওয়ার্ড, কিডনি ডায়ালাইসিস কক্ষ, অপারেশন থিয়েটারসহ প্রশাসনিক অফিস। নবনির্মিত আধুনিক এই ভবনে সিসিইউ, আইসিইউ বিভাগসহ শতাধিক কেবিন আছে। পাশাপাশি পুরুষ ও মহিলা ওয়ার্ডসহ বিভিন্ন ইউনিট, করোনা ও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর আলাদা ওয়ার্ড আছে। এই ভবনে চারটি লিফটের জায়গা আছে। কিন্তু লিফট স্থাপনসহ এখনো হাসপাতালটির নির্মাণকাজ চলছে। চিকিৎসাসেবার উন্নত যন্ত্রপাতির কিছুই স্থাপন হয়নি। এখনো স্থাপন করা হয়নি আইসোলেশন ইউনিট, সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহ, অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার ও লিফট। ভিতরের দরজা, জানালা, ইলেকট্রিক, পানির লাইন স্থাপনসহ আনুষঙ্গিক কাজের অধিকাংশই বাকি। ফলে উদ্বোধন হলেও কোনো উপকারে আসছে না এই সুবিশাল ভবন। জেলা গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মুঃ সরোয়ার হোসেইন জানান, নবনির্মিত নবম তলা ভবনে ইতোমধ্যে লিফট স্থাপনের ৭০ ভাগ কাজ সম্পন্ন করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সরেজমিনে দেখা গেছে, নড়াইল জেলা শহরের ১০০ শয্যার হাসপাতালে প্রতিদিন ৪০০ থেকে সাড়ে ৪০০ রোগী সেবা নিতে আসেন। হাসপাতালে শয্যাসংকটে রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছেন বারান্দা, সিঁড়িঘর ও করিডরে। নড়াইলের সিভিল সার্জন ডা. মো. আবদুর রশিদ বলেন, ‘শুধু লিফট স্থাপন করে গণপূর্ত বিভাগ ভবনটি হস্তান্তর করলেই এটি চালু করা যাবে না। প্রশাসনিক ও লোকবল নিয়োগেরও অনুমোদন লাগবে। এসব প্রক্রিয়া শেষেই কেবল হাসপাতালের কার্যক্রম চালু করা সম্ভব হবে।’ নড়াইল জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. আবদুল গফফার বলেন, ‘লিফট স্থাপনসহ অবকাঠামোগত কিছু কাজ বাকি থাকায় গণপূর্ত বিভাগ নবম তলা ভবনটি অফিশিয়ালি এখনো হস্তান্তর করেনি। আর এটি হস্তান্তরের পর ফার্নিচার কেনা, লোকবল নিয়োগসহ প্রশাসনিক অনুমোদনের প্রয়োজন। এটি চালু করা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।