ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ফরাসপুর গ্রামে মা ও মেয়েকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় হাসপাতালে দগ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন আরও ২ জন।
সোমবার দিবাগত রাত ২টার দিকে পেট্রল ঢেলে আগুনে ধরিয়ে দিলে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- মা তাসলিমা খাতুন (৪০) ও দেড় বছরের মেয়ে তাসমিয়া।
দগ্ধরা হলেন- তাসলিমা খাতুনের স্বামী নজরুল ইসলাম ওরফে চাঁদ আলী ও তার অপর মেয়ে উর্মি খাতুন (২০)। তাদের ঝিনাইদহ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে চাঁদ আলীর শরীরের ৯৫ শতাংশ পুড়ে গেছে।
এদিকে মা-মেয়ের মর্মান্তিকভাবে পুড়িয়ে হত্যার খবর পেয়ে মঙ্গলবার সকালে স্থানীয় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার, ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজবাহার আলী শেখ, কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনোয়ার হোসেন মোল্লাহ ও ওসি আনোয়ার হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তারা আসামীদের গ্রেফতার করে হত্যার সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করা হবে বলে গ্রামবাসীদের আশ্বাস দেন।
কালীগঞ্জ থানার ওসি আনোয়ার হোসেন জানান, রাতের খাবার খেয়ে নজরুল ইসলামসহ পরিবারের সবাই ঘুমিয়ে ছিল। সোমবার দিবাগত ২টার দিকে কে বা কারা তার ঘরে পাল্লাবিহীন জানালা দিয়ে পেট্রল ছুড়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। নিমিষের মধ্যে খাটের উপর ঘুমিয়ে থাকা মা তাসলিমা খাতুন আর তাঁর বুকের মধ্যে ঘুমিয়ে থাকা শিশু তাসমিয়ার শরীরে আগুন ধরে যায়। এসময় পাশেই ঘুমিয়ে থাকা বড় মেয়ে ঊর্মি খাতুন জেগে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেও সামান্য দগ্ধ হন। তাদের চিৎকারে প্রতিবেশীরা এগিয়ে এসে আগুন নিভিয়ে মা ও মেয়েকে দ্রুত কালীগঞ্জ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ভোর রাতেই তাঁদের যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি ঘটলে তাদেরকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। পথিমধ্যে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে পৌঁছানোর পর মা-মেয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
অগ্নিদগ্ধ নজরুল ইসলামের ভাই সোহেল আলী জানান, তাদের বড় মেয়ে ঊর্মি খাতুনকে ৪ বছর আগে যশোর লেবুতলা ইউনিয়নের আগ্রাইল গ্রামের মৃত বাবুল হোসেনের ছেলে কামাল হোসেনের সাথে বিয়ে হয়। লেদমিস্ত্রি কামাল ঊর্মিকে নিয়ে ঢাকায় থাকতেন। নানা কারণে তাদের মধ্যে সম্পর্ক চিড় ধরে। গত ঈদুল আযহার আগে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। পিতা-মাতা খবর পেয়ে ঊর্মিকে বাড়িতে নিয়ে আসে। এরপর জামাইকে দাওয়াত দেওয়া হয়। কিন্তু জামাই কামাল না এসে স্ত্রী ঊর্মিকে পাঠিয়ে দিতে বলেন।
অগ্নিদগ্ধ উর্মির অভিযোগ, গত রবিবার স্বামী কামাল হোসেন তার পিতা নজরুল ইসলামের কাছে ফোন করে যৌতুকের টাকা দাবি করেন। টাকা না দিলে গোটা পরিবার পুড়িয়ে হত্যা করা হবে বলে হুমকি দেন।
কালীগঞ্জের ফরাসপুর গ্রামের কয়েক গ্রামবাসী জানান, ১৩ অক্টোবর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় উর্মির যৌতুকের টাকা চাওয়া নিয়ে উভয় পরিবারের মধ্যে গ্রাম্য সালিশ বসে। সালিশে উর্মিকে শ্বশুর বাড়িতে পাঠানো হবে না বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ সময় জামাই কামাল হোসেনও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। কামালই এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে তাদের ধারণা।
নিয়ামতপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাজেদুল হক জানান, ঘরের জানালা দিয়ে পেট্রল ছুঁড়ে যেভাবে মা-মেয়েকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। এতে করে আমরা হতবাক। দ্রুত ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
বিডি-প্রতিদিন/২০ অক্টোবর, ২০১৫/মাহবুব