নাটোরের সিংড়া উপজেলার ইটালী ইউনিয়নের আগ-তিরোইল গ্রামে আওয়ামী লীগের দু'গ্রুপের সংঘর্ষে আব্দুল হান্নান (৪০) নামে এক কর্মী নিহত হয়েছেন। এ সময় হামলাকারীরা অপর পক্ষের প্রায় ৩৫টি বাড়িতে ভাংচুর ও লুটপাট করে। এ ঘটনায় ১৫জন আহত হয়। পুলিশ সংঘর্ষে জড়িত সন্দেহে ১৬জনকে আটক করেছে। আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সিংড়া উপজেলা পরিষদের উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত উপজেলা চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী শফিকুল ইসলাম শফিকের পোষ্টার ছেঁড়াকে কেন্দ্র করে গত সোমবার উভয় পক্ষের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে ইটালী ইউপি চেয়ারম্যান ও সিংড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরিফুর রহমান আরিফের ১০জন সমর্থক আহত হয়। এ ঘটনার জের ধরে বুধবার রাত থেকে এই গ্রামে উত্তেজনা বিরাজ করতে থাকে। বৃহষ্পতিবার সকাল সাতটার দিকে ৫০-৬০ জন বহিরাগত সন্ত্রাসী লাঠি ও দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে গ্রামে গিয়ে হামলা ও ভাংচুর শুরু করে। প্রায় দেড় ঘন্টাব্যাপী এই হামলা ও লুটপাটের সময় বাঁধা দিতে গিয়ে আব্দুল হান্নান (৪০) নামে এক আওয়ামী লীগ কর্মী নিহত ও ১৫ জন আহত হয়। আহতদের মধ্যে জুলহাস (৪০), মোতালেব (৪০), ইয়াছিন (৩৫), সেলিম (৩৩), বাছা বেগম (৬০), মতিজান (৫০)সহ ১০জনকে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ঘটনার পর জড়িত সন্দেহে পুলিশ আগ তিরোইল গ্রাম থেকে ১৬জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সিংড়া থানায় নিয়ে এসেছে। ঘটনার সময় আগ-তিরোইল গ্রামের আব্দুস সাত্তার প্রামনিক, আব্দুস সামাদ, লুলু সর্দার ও হাসানের বাড়িসহ ৩৫টি বাড়িতে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট করে হামলাকারীরা।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবারের হামলাকারীরা ইটালী ইউপি চেয়ারম্যান ও সিংড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরিফুর রহমান আরিফ সমর্থক এবং নিহত ও আহতরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান মৃত জহুরুল ইসলাম বাবুর ছোট ভাই গত ইউপি নির্বাচনে পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম জিন্নার সমর্থক। সংঘর্ষের সময় ধারালো হাসুয়ার আঘাতে নিহত আব্দুল হান্নান (৪০) আগ-তিরোইল গ্রামের মৃত আব্দুল করিমের ছেলে। পরে জেলা শহর থেকে ৩৫কিলোমিটার দূরের নিভৃত পল্লীর এই গ্রামে রাস্তা না থাকায় বাঁশের সাথে বেঁধে কাধে করে লাশ সিংড়া আনা হয়।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম জিন্না বলেছেন, আগের দিন রাতে ইটালী ইউপি চেয়ারম্যান ও সিংড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরিফুর রহমান আরিফ ও তার ছোট ভাই উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লিখন আগ-তিরোইল গ্রামে এসে সোমবারের ঘটনার শোধ নিতে রক্তের বন্যা বইয়ে দেয়ার ঘোষণা দেন। এর জের ধরেই এই হামলার ঘটনা ঘটেছে। তিনি সন্ত্রাসী হামলা ও হত্যার জন্য আরিফুর রহমান আরিফ ও তার ভাই লিখনকে দায়ী করেছেন। তবে ইটালী ইউপি চেয়ারম্যান ও সিংড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরিফুর রহমান আরিফ অভিযোগ অস্বীকার করে এসব ঘটনার সাথে তিনি জড়িত নয় বলে দাবী করেছেন।
সিংড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসির উদ্দিন মন্ডল জানান, নাটোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুন্সি শাহাবুদ্দীনসহ ঘটনাস্থলে বিপুল সংখ্যক পুলিশ রয়েছে। পরিস্থিতি এখন পুলিশের নিয়ন্ত্রনে আছে। নাটোরের পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার মুখার্জী নাটোরের সিংড়া উপজেলায় আওয়ামী লীগের দু'গ্রুপের সংঘর্ষে আব্দুল হান্নান নামে এক কর্মী নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করলেও ৩৫টি বাড়িতে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাটের বিষয়ে বলেছেন, 'এটা তেমন দৃশ্যমান কিছু নয়'।
বিডি-প্রতিদিন/২২ অক্টোবর ২০১৫/ এস আহমেদ