বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে সবুজ আর সবুজ। দেখে সবার মনে হয় সবুজের বুকে ভর দিয়ে উঁকি মারছে অপরূপ বাংলা। চোখে দেখা আর বাস্তবের মাঝে কত ফারাক তারই উজ্জ্বল প্রমাণ মিলে লামা উপজেলার ফসলের মাঠে দখল করে নেয়া তামাক চাষ দেখে। এ যেন সবুজের মাঝে মরণের হাতছানি।
বিগত বছরের ন্যায় আবারও বান্দরবানের লামা উপজেলায় প্রায় ১৩ হাজার একর ফসলের জমিতে তামাক চাষের আয়োজনে ব্যস্ত টোবাকো কোম্পানিগুলো। দীর্ঘ ২৫ বছর যাবৎ ধান ও ফসলের জমি দখলে নিয়েছে মরণ ব্যাধি ক্যান্সারের প্রধান কারণ তামাক চাষ। বান্দরবানের পার্বত্য জেলার লামা উপজেলা বর্তমানে তামাক চাষের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। ১৯৯১ সাল থেকে তামাক চাষ হয়ে আসছে লামা উপজেলায়।
জানা যায়, আসন্ন মৌসুমে কোম্পানিগুলো সর্বমোট ১৩ হাজার ৩শত একর জমিতে তামাক চাষ আবাদ করেছে। এর মধ্যে ব্রিটিশ আমেরিকান ট্যোবকো কোম্পানি লিমিটেড ৩ হাজার একর, ঢাকা ট্যোবাকো কোম্পানি লিমিটেড ৪ হাজার ৫ শত একর, আবুল খায়ের ট্যোবাকো কোম্পানি লিমিটেড ২ হাজার ৫ শত একর, আলফা ট্যোবাকো কোম্পানি লিমিটেড ৩ শত একর, সমিতি ট্যোবাকো ১ শত, নিউ এজ ট্যোবাকো কোম্পানি লিমিটেড ৩ শত একর ও ব্যক্তিকেন্দ্রিক নিজ উদ্যোগে ২ হাজার ৬ শত একর জমিতে তামাক চাষের আবাদ করেছে চাষীরা।
লামা পৌর এলাকার তামাক চাষী আবুল মিয়া, জমির উদ্দিন, জাফর আলী, কেরামত আলী, চিংহলামং মার্মা, চংক্রাত মুরুংসহ অনেকে বলেন, কৃষি অফিসের সরকারি নিজস্ব জমিতে তামাক চাষ হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট প্রশাসন লোক দেখানো বিরোধীতা করলেও তাদের অব্যবস্থাপনা এবং অবহেলার কারণে চাষীরা তামাক চাষের মহোৎসবে মেতে উঠেছে। বেপরোয়া তামাক চাষের ফলে পরিবেশ ও সমাজের নানা ক্ষতি, সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যহানি ও নেশাগ্রস্থতা দিন দিন বেড়ে চলেছে। সরকারি জমি, নদীর দু’পাড় ও বন বিভাগের রিজার্ভ এলাকায় কিভাবে তামাক চাষ আবাদ হয় তা কারো বোধগম্য নয়।
লামা উপজেলা পরিবেশ রক্ষা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. তৈয়ব আলী জানান, সমগ্র উপজেলা ঘুরে দেখা যায় এক, দুই ও তিন ফসলি জমি সহ সরকারী রিজার্ভ, নদীর দু’পার তামাক চাষের দখলে। সরকার কর্তৃক অত্র উপজেলাকে পর্যটন জোন ঘোষনা করা হলেও তামাক জোন বললে কোন অংশে ভুল হবে না।
মরণ চাষ তামাক নিয়ে লামা উপজেলা কৃষি অফিসার মো. রুস্তম আলীর সাথে আলাপ করলে তিনি বলেন, যেভাবে তামাক চাষের আবাদ বাড়ছে তা যথারীতি ওই জনপদের জন্য হুমকি স্বরূপ। ধান ও শস্য চাষে কৃষকদের ফিরিয়ে আনতে কৃষি অফিস কর্তৃক স্বল্প সুদে কৃষি ঋণ, কৃষি উপকরণ সহজলভ্যসহ নানান পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। কোম্পানিগুলো তামাকের তথ্য প্রদানের ক্ষেত্রে তথ্য গোপনসহ জবাবদিহিতা করতে অনিহা প্রকাশ করে। সরকারি সঠিক নির্দেশনা পেলে তামাক কোম্পানিগুলোর নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে।
বিডি-প্রতিদিন/ ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৫/ রশিদা