টেকনাফ সীমান্তে রোহিঙ্গা পাচার করার দায়ে ১৩ দালালকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করা হয়েছে। মঙ্গলবার সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গা পাচারের দায়ে ১টি ট্রলারসহ ১৩ দালালকে আটক করে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়। সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের কক্সবাজার কারাগারে প্রেরণের জন্য থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
টেকনাফ মডেল থানার ওসি মাইন উদ্দীন খান জানান, মঙ্গলবার বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের আইসি পরিদর্শক কাঞ্চন কান্তি দাশের নেতৃত্বে একদল পুলিশ বাহারছড়া বিভিন্ন ঘাট ব্যবহার করে রোহিঙ্গা পাচারের দায়ে ৬ দালালকে আটক করে। আটককৃতরা হল, বাহারছড়া শামলাপুর লামার বাজার এলাকার সাইফুল ইসলামের ছেলে জিয়াউর রহমান (১৯), বড় ডেইল এলাকার মোঃ হোসনের ছেলে মোঃ সাদেক (১৯), একই এলাকার মোজাহের মিয়ার ছেলে আব্দুল খালেক (২০), জাহাজপুরা এলাকার মৃত গোলাম আকবরের ছেলে নবী হোসন (৩৫), নোয়াখালী পাড়া এলাকার মৃত আবুল কাশিমের ছেলে মোঃ সেলিম (৩৫) ও হোয়াইক্যং কম্বনিয়া এলাকার মোঃ সৈয়দের ছেলে হেলাল উদ্দীন (১৯)।
এছাড়া একইদিন ভোরে সাবরাং খুরেরমূখ বিজিবির অস্থায়ী ক্যাম্পের হাবিলদার তোফাজ্জল হোসনের নেতৃত্বে একদল বিজিবি সদস্য রোহিঙ্গা পাচার করার দায়ে ৩ দালালকে আটক করে। আটককৃতরা হল, সাবরাং মুন্ডার ডেইল এলাকার মোঃ জাফরের ছেলে মোঃ শহিদ উল্লাহ (২৮), আলীর ডেইল এলাকার মৃত আব্দু শরীফের ছেলে আবুল কালাম (৪০) ও হাবিরছড়া এলাকার মৃত ইসলামের ছেলে মোঃ হোসেন (৫০)।
ওইদিন ভোর রাতে কোস্টগার্ড শাহপরী ষ্টেশন কমান্ডার লেফট্যানেন্ট ফয়সালের নেতৃত্বে একদল কোস্টর্গাড সদস্য শাহপরীর দ্বীপ এলাকা দিয়ে রোহিঙ্গা পাচারের সহযোগীতায় একটি ট্রলারসহ ৪ দালালকে আটক করে। আটককৃতরা হল, সাবরাং শাহপরীর দ্বীপ উত্তরপাড়া এলাকার মোহাম্মদ হোসেনের ছেলে নুরুল ইসলাম (৩০), একই এলাকার মৃত আব্দু শুক্কুরের ছেলে শফি উল্লাহ (২৫), মোহাম্মদ কালুর ছেলে এনায়েত উল্লাহ (২৩), আব্দুল গফুরের ছেলে মোহাম্মদ রজক (৩০)। পরে আটক দালালদের বিরুদ্ধে নিবাহী ম্যাজিষ্ট্রেট প্রণয় চাকমার নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করা হয়েছে বলে জানায় সংশ্লিষ্টরা।
অপরদিকে স্থানীয় সূত্রে জানা যায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ট্রলারের মালিক ও মাঝিমাল্লারা। টেকনাফ সদরের রাজারছড়া ঘাটে হাবিরছড়া এলাকার শাহ আহমদের ট্রলারে রোহিঙ্গা বোঝাই করে বাড়িতে জিম্মি করে রেখে টাকা আদায় করা হয়। রাজারছড়া এলাকার আলতাছুর রহমানের ছেলে আব্দুল গফুরের মালিকাধীন সিরাজ মাঝি, কবির মাঝি ও আব্দুল্লাহ মাঝির নেতৃত্বে ৩টি ট্রলারে করে হাজার হাজার রোহিঙ্গা বোঝাই করে নামিয়ে দেয়া হয়। বাহারছড়া নোয়াখালী পাড়া এলাকার মৃত মীর কাসেমের ছেলে আয়াত উল্লাহর মালিকাধীন ট্রলার ইউনুছ মাঝির নেতৃত্বে রোহিঙ্গা পাচার করা হয়।
রাজারছড়া এলাকার কবির মেম্বার ও ছৈয়দ করিমের ছেলে মৌলভী মোখতার, মৃত হাবিবুর রহমানের ছেলে আয়াজের ট্রলারে এবং লেঙ্গুরবিল এলাকার ফিরুজ মাঝি, নজির মাঝি ও নাজির মাঝির ট্রলারে হাজার রোহিঙ্গা পাচার করা হয়। এছাড়া সাবরাং মুন্ডার ডেইল ঘাটে আব্দুর রহমানের ছেলে সাহেদুর রহমান নিপু, জামাল (মন্ডল পাড়া), মুন্ডার ডেইল এলাকার আব্দুর রহমান, জাফর, ববইল্যা, হেলাল উদ্দিন প্রকাশ হেলা পুতু, ইয়াকুব মাঝি, ভুট্রু মাঝি, রশিদ উল্লাহ মাঝি, শাকের মাঝি করিব আহমদ মাঝির মাছ ধরার ট্রলারে করে মুন্ডা ডেইল ঘাট দিয়ে রোহিঙ্গা পাচার করা হয়।
উল্লেখ্য, গত কয়েক দিনে টেকনাফ, শাহপরীরদ্বীপ ও সেন্টমাটিন এলাকায় পাচার চক্রের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে রোহিঙ্গা পাচারের দায়ে ৯টি ট্রলার জব্দ এবং ৩১ দালালকে আটক করেছে কোস্টগার্ড, বিজিবি ও পুলিশ। পরে আটক দালালদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে বলে জানা যায়। এসময় আটকে রাখা রোহিঙ্গাসহ ছিনতাইকৃত স্বর্ণালংকার উদ্ধার করা হয়। জব্দকৃত ইঞ্জিন চালিত নৌকাগুলো আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানায় সংশ্লিষ্টরা।
বিডি প্রতিদিন/৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭/হিমেল