রাঙামাটিতে পাহাড় ধসের ঘটনার পর সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতি ছিল অনেক। করা হবে পুনর্বাসন। হয়তো হবে কোন নিরাপদস্থানে মাথা গুজার ঠাঁই। তাই নতুন করে বাচাঁর স্বপ্নও দেখেছিল পাহাড় ভাঙ্গা নিঃস্ব মানুষগুলো। কিন্তু বাস্তবায়ন হয়নি একটিও। তাই কিছুটা ক্ষোভ আর অজানা শঙ্কা নিয়ে ছাড়তে হচ্ছে আশ্রয়কেন্দ্রের শেষ ঠিকানাও। কিন্তু এসব ক্ষতিগ্রস্ত মানুষগুলো এখন কোথায় থাকবে তা নিয়ে জনমনে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা।
পাহাড় ধসে পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্তদের ছয় হাজার টাকা ও দুই বান্ডিল টিন ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্তদের ৩০ কেজি চাল ও এক হাজার টাকা ত্রাণ সামগ্রী দিয়ে ৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে দেওয়ার নিদের্শ দিয়েছেন রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান।
এতে আবারও আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে ঠিকানাবিহীন মানুষগুলো। স্বামী, সন্তান, পরিবার ও স্বজনহারা মানুষগুলো এখন অনেকটা অনিশ্চয়তার মধ্যে ছাড়ছে আশ্রয়কেন্দ্র। এ নিয়ে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে স্থানীয় সাধারণ মানুষের মধ্যেও।
এ ব্যাপারে স্থানীয় ৬নং ওয়ার্ডের পৌর কাউন্সিলর রবিমোহন চাকমা জানান, ক্ষতিগ্রস্ত মানুষগুলোকে পুনর্বাসনের নামে যে ত্রাণ সামগ্রী দেওয়া হয়েছে তা খুবই সামান্য। এসব ত্রাণ দিয়ে তারা আদৌ গৃহনির্মাণ করতে পারবে কি তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, পাহাড় ধসের ঘটনার পর সরকারের উচ্চ পর্যায়ের বিভিন্ন প্রতিনিধি দল রাঙামাটি ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা ও আশ্রয়কেন্দ্র পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্তদের পুর্ণবাসনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। বলা হয়েছিল, নতুন কোনো নিরাপদস্থানে তাদের পুনর্বাসন করা হবে। কিন্তু পাহাড় ধসের দীর্ঘ তিন মাসেও করা হয়নি পুনর্বাসন। দেওয়া হয়নি নতুন কোন জায়গার ঠিকানা। অনিশ্চয়তার মধ্যে প্রতিশ্রুতি আর আশা নিয়ে দিন পার করছেন এসব ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ। কিন্তু এখন ক্ষতিগ্রস্ত মানুষগুলো শেষ ঠাঁই টুকুও সরকারি বরাদ্দের অভাবে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।
এ ব্যাপারে রাঙামাটি মাড়ি স্টেডিয়ামে আশ্রয় নেয়া সকিনা বেগম অভিযোগ করে বলেন, পাহাড় ধসের ঘটনার পর সরকারের পক্ষ থেকে অনেক বড় বড় কথা বলেছিল। আমাদের পুর্নবাসন করা হবে। জায়গা জমি দেওয়া হবে। ঘর বেঁধে দেওয়া হবে। অনেক স্বপ্ন দেখাইছিল। কিন্তু এখন আবার বলে আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে চলে যেতে। পাহাড়ে চাপা পড়ে আমার বাম হাতটা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখনো ব্যান্ডেজ খোলা হয়নি। ভাঙ্গা হাত নিয়ে এখন আমি বুড়ো বয়সে কোথায় যাব?
মো. জিন্নাত আলী বলেন, শহরের শিমুল তলীতে আমার ঘরটি পাহাড় ধসে বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। ভিটা বাড়ি হারিয়েছি। তিন মাস ধরে আশ্রয়কেন্দ্রে অনেক কষ্টে দিন কাটিয়েছি। কিন্তু তবুও তো একটা মাথা গুজার ঠাঁই ছিল। জেলা প্রশাসন নিষেধ করেছিল আগের জায়গায় নতুন বাড়ি-ঘর তৈরি না করতে। বলেছিল, তারা আমাদের অন্য জায়গায় আমার পুর্নবাসন করবে। কিন্তু এতো দিন পর বলছে আমাদের আশ্রয় কেন্দ্র ছেড়ে দিতে। এখন আমরা কোথায় যাই?
এ অভিযোগের বিষয়ে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক বলেন, আমরা চেষ্টা করেছি তাদের যথাযথ পুনর্বাসন করতে। কিন্তু সে রকম নিরাপদ খাস জমি পাওয়া যায়নি। যে সব জমি আছে সব পাহাড়ে। আমরা চাইলে তাদের পাহাড়ে আবারও বিপদের মুখে ঠেলে দিতে পারি না। আর যেসব সমতল জমি ছিল তাও বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। সরকারের বরাদ্দও শেষ হয়ে গেছে। তাই তাদের আর আশ্রয়কেন্দ্রে রেখে সহায়তা দেওয়া যাচ্ছে না। কোন নিরাপদ জমি পাওয়া গেলে তাদের সেখানে পুনর্বাসন করা হবে।
বিডি প্রতিদিন/৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭/ফারজানা