টাঙ্গাইলের মধুপুরে চলন্ত বাসে কলেজ ছাত্রী জাকিয়া সুলতানা রুপাকে গণধর্ষণ ও হত্যার মামলায় রাষ্টপক্ষের যুক্তিতর্ক চলছে। বৃহস্পতিবার আসামি পক্ষে যুক্তিতর্কে দিন ধার্য করেছে আদালত।
এদিকে, রুপা হত্যার আসামিদের ফাঁসির দাবিতে আদালত প্রাঙ্গণে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করছে মানবাধিকার আইনজীবী পরিষদ।
বুধবার সকালে টাঙ্গাইল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত বিচারক এবং অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক আবুল মনসুর মিয়া আসামিদের উপস্থিতিতে জাকিয়া সুলতানা রুপাকে গণধর্ষণ ও হত্যার মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে বিচারিক কার্যক্রম শুরু করেন।
আসামিরা হলেন, ছোঁয়া পরিবহনের চালক হাবিবুর ও সুপারভাইজার সফর আলী এবং হেলপার শামীম, আকরাম ও জাহাঙ্গীর।
টাঙ্গাইলের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পিপি একেএম নাছিমুল আখতার জানান, এই মামলা অত্যন্ত স্পর্শকাতর। অজ্ঞাতনামা নারীর লাশ হিসেবে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। পরে পত্র-পত্রিকার খবর দেখে নিহতের ভাই হাফিজুর রহমান মধুপুর থানায় তার বোনের ছবি দেখে শনাক্ত করেন। পরে পুলিশ ছোঁয়া পরিবহনটি জব্দ করেন এবং আসামিদের গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরণ করেন। আসামিরা স্বেচ্ছায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন।
পরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাইয়ুম খান সিদ্দিকী মামলার তদন্ত শেষে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দায়ের করেন। আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে। ৩২ জনকে এই মামলায় স্বাক্ষী মানা হয়। গত ৩ জানুয়ারি বাদীকে দিয়ে স্বাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। পরবর্তীতে এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা, চিকিৎসক, ১৬৪ ধারার জবানবন্দি গ্রহণকারী ৪ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, সুরতহাল রিপোর্ট ও জব্দ তালিকা সর্বমোট ২৭ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষী প্রদান করেন। আসামি পক্ষের আইনজীবী তাদের জেরা করেন।
পিপি আরও জানান, যে সাক্ষ্য প্রমাণে রাষ্ট্রপক্ষ এই মামলা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। তিনি আসামিদের সর্বচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দাবি করেন। পরে বেলা পৌনে ১২টার দিকে যুক্তিতর্ক শেষ হয়। পরে আদালত আসামি পক্ষের যুক্তিতর্কের জন্য বৃস্পতিবার দিন ধার্য করেন।
এদিকে, আসামিদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, মানবাধিকার আইনজীবী পরিষদ সভাপতি অ্যাডভোকেট এস আকবর খান, মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আতাউর রহমান আজাদ, অ্যাডভোকেট গোলাম মোস্তফা, ওয়াজেদ আলী ও নিহত রূপার ভাই হাফিজুর রহমান প্রমুখ।
এসময় বক্তারা এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত ৫ আসামির দ্রুত ফাঁসির দাবি করেন এবং দ্রুত বিচার কাজ শেষ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
উল্লেখ্য, গত ২৫ আগস্ট বগুড়া থেকে ময়মনসিংহ যাওয়ার পথে রুপাকে চলন্ত বাসে গণধর্ষণ করে পরিবহন শ্রমিকরা। বাসেই তাকে হত্যার পর মধুপুর উপজেলায় পঁচিশ মাইল এলাকায় বনের মধ্যে রুপার মরদেহ ফেলে রেখে যায়। এলাকাবাসীর কাছ থেকে খবর পেয়ে পুলিশ ওই রাতেই অজ্ঞাত পরিচয় নারী হিসেবে তার মরদেহ উদ্ধার করে। পরদিন ময়নাতদন্ত শেষে রুপার মরদেহ বেওয়ারিশ হিসেবে টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় গোরস্থানে দাফন করে। এ ঘটনায় পুলিশ বাদি হয়ে মধুপুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করে। পত্রিকায় প্রকাশিত ছবি দেখে তার ভাই হাফিজুর রহমান মধুপুর থানায় গিয়ে ছবির ভিত্তিতে তাকে শনাক্ত করেন।
২৮ আগস্ট এ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে ময়মনসিংহ-বগুড়া সড়কের ছোঁয়া পরিবহনের হেলপার শামীম (২৬), আকরাম (৩৫) ও জাহাঙ্গীর (১৯) এবং চালক হাবিবুর (৪৫) ও সুপারভাইজার সফর আলীকে (৫৫) গ্রেফতার করে পুলিশ। তারা প্রত্যেকেই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। মামলার আসামিরা প্রত্যেকেই এখন টাঙ্গাইল কারাগারে রয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/৩১ জানুয়ারি ২০১৮/এনায়েত করিম