মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের খালিয়া গ্রামে মাইশা নামে ৫ মাসের এক কন্যা শিশুর লাশ উদ্ধার হয়েছে। ওই গ্রামের জিয়াউর রহমান ও তহমিনা খাতুন দম্পতির দ্বিতীয় সন্তান মাইশা।
রবিবার সন্ধ্যায় বাড়ির অদূরে একটি খালে ওই শিশুটির ভাসমান মরদেহ খুঁজে পায় স্থানীয়রা। শিশুটির লাশ তড়িঘড়ি করে দাফন করা নিয়ে এলাকায় রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে ওই শিশুর মৃত্যু ঘিরে এলাকায় চলছে নানা আলোচনা। কেউ বলছেন এটি জ্বিন-পরীদের কাজ। কেউ কেউ বলছেন প্রথম কন্যা সন্তানের পর দ্বিতীয়বার পুত্র সন্তান না হয়ে কন্যা সন্তান জন্ম নেয়ায় বেশ ক’দিন ধরে পরিবারে নানা দ্বন্দ্ব চলছিল। এসব কারণেই পরিবারের কেউ তাকে হত্যা করেছে।
শিশুর বাবা জিয়াউর রহমান জানান, আমার স্ত্রী মাগুরা আদর্শ কলেজে বিএ পরীক্ষা দিতে গেলে আমি জমির কাজ শেষ করে বাড়িতে এসে মেয়ে মাইশাকে নিয়ে কাছে রাখি। বিকালে মেয়েকে শীতের কাপড় গায়ে পরিয়ে দিই। পরে সে আমার কোলে ঘুমিয়ে পড়লে তাকে ঘরে শুইয়ে দিয়ে বাড়ির অদূরে বাচ্চাদের ক্রিকেট খেলা দেখতে আসি। মাগরিবের নামাজের সময় জানতে পারি মেয়ে মাইশাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। দ্রুত বাড়িতে এসে তাকে খুঁজতে থাকি। পরে স্থানীয় মসজিদের মাইকের মাধ্যমে মেয়ের নিখোঁজের বিষয়টি গ্রামবাসীদের জানানো হয়। এর কিছুক্ষণ পরই মাইশার লাশ বাড়ির পাশের খালের পানিতে পাওয়া যায়।
শিশুর মা তাহমিনা খাতুন বলেন, ‘আমি বিকালে পরীক্ষা শেষে বাড়ি ফিরে মেয়েকে ঘরে না দেখে শ্বাশুড়ি রেবেকা বেগমের কাছে মেয়ে কোথায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঘরে ঘুমিয়ে আছে। ঘরে গিয়ে মেয়েকে না পেয়ে চিৎকার করলে প্রতিবেশীরা ছুটে আসে এবং সবাই চার দিকে খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে পাশ্ববর্তী খালে মাইশার মরদেহ পাওয়া যায়।
এদিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে এ বিষয়ে পাওয়া গেছে নানা তথ্য।
ফয়সাল আলম নামে এক প্রতিবেশীসহ অনেকে জানান, নিহত শিশুর পরিবার এই ঘটনাকে অশরীরি কোন অপশক্তির কাজ বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে। রাতে পুলিশ এলে তাদের কাছে পরিবারের পক্ষ থেকে কোন অভিযোগ দেয়া হয়নি।
তারা আরও জানান, বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান জিয়াউর রহমানের পরিবারে কোন পুত্রসন্তান না হওয়ায় তার মা রেবেকা বেগম প্রায়ই পুত্রবধূ তাহমিনা বেগমকে বকাঝকা করতেন। এমনকি পুত্রসন্তান লাভের আশায় জিয়াউর রহমানকে আবারও বিয়ে দেয়ার কথা বলতেন তিনি। এ অবস্থায় হাটতে না জানা এ ছোট্ট শিশুটি বেশ খানিকটা দূরবর্তী খালে কিভাবে গেল? তার পেটে কোন পানি ছিল না? খালের পাড়ে পড়ে থাকা শাড়িটি কার? ইত্যাদি বিষয় খতিয়ে দেখার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
এদিকে সন্তান হারিয়ে বারবার অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছেন শিশুটির মা। এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের কাছে কোন কথা বলতে রাজি হননি ওই পরিবারের সদস্যরা।
মাগুরার পুলিশ সুপার খান মোহাম্মদ রেজওয়ান জানান, ঘটনার পর পুলিশ ওই বাড়িতে গেছে। কিন্তু শিশুটির পরিবারের পক্ষ থেকে কোন অভিযোগ না থাকায় এখনও মামলা হয়নি। তবে পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করে দেখে উপযুক্ত আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে।
বিডি প্রতিদিন/কালাম