বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলার আসামি স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। ৫০ দিন কারাবাসের পর আজ মঙ্গলবার বিকেলে হাইকোর্টের নির্দেশে বরগুনা জেলা কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি।
জানা যায়, বেলা ১২টার দিকে জামিনের আদেশের কপি চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পৌঁছনোর পরে বেলা সাড়ে ১২টায় মিন্নির আইনজীবী মাহাবুবুল বারী আসলাম আদালতে জামানত নামা দাখিল করেন। ৩টা ৪৮ মিনিটে চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এম জাহিদ হাসান জামানত নামায় স্বাক্ষরের পর ৩টা ৫৫ মিনিটে কারাগারে জামিনের আদেশের কপি পৌঁছে। ৪টা ৩৩ মিনিটে আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি ৫০ দিন কারাবাসের পরে মুক্তি লাভ করেন।
এসময় জেল গেটে মিন্নির আইনজীবী মাহাবুবুল বারী আসলাম, মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোরসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
আদালতের নির্দেশ থাকায় মিন্নি সাংবাদিকদের সাথে কোনো কথা না বললেও মিন্নির বাবা বলেন, আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আমার মেয়ে মুক্তি পেয়েছে। তিনি মিডিয়া এবং আইনজীবীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, আপনাদের সহযোগিতায় সত্য প্রকাশ হবে। আমার মেয়ে যে ষড়যন্ত্রের শিকার তা প্রমাণিত হবে।
মিন্নি মুক্তি পাওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করে তার আইনজীবী মাহাবুবুল বারী আসলাম বলেন, দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে মিন্নি মুক্তি পাওয়ায় আমরা খুশি হয়েছি। মিন্নি যে ষড়যন্ত্রের শিকার তা আইনের মাধ্যমেই প্রমাণিত হবে।
এদিকে, নির্ধারিত তারিখে (মঙ্গলবার) মিন্নিসহ ১৫ জনকে সিনিয়ার জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। জেলা ও দায়রা জজ আদালত থেকে মামলার মূল নথি ফেরত না আসায় পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্র গ্রহণের উপর কোনো আদেশ দেননি আদালত।
আদালতে প্রবেশ ও বাহিরের সময় উপস্থিত আসামিরা সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য বলেন, সুনম দেবনাথ কোনো আসামি নয়? মিন্নি কোনো ৭ নম্বরে? আমরা সুনম দেবনাথের লোক। মামলার পরবর্তি তারিখ ১৮ সেপ্টেম্বর অভিযোগপত্র গ্রহণের আদেশের জন্য রাখা হয়েছে। আদালত ৬ কিশোর আসামিকে যশোর কিশোর সংশোধনাগার কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজী আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এ আদেশ দিয়েছেন। কিশোর আসামিরা হচ্ছে, রাশিদুল হাসান রিশান ওরফে রিশান ফরাজী (১৭), ওলিউল্লাহ ওরফে অলি (১৬), জয় চন্দ্র সরকার ওরফে চন্দন (১৭), তানভীর হোসেন (১৭), নাজমুল হাসান (১৪) ও আরিয়ান হোসেন শ্রাবন (১৬)। এছাড়া রাতুল শিকদার জয় (১৬) নামে আরও একজনকে আগেই কিশোর সংশোধন কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। এনিয়ে ৭ কিশোরকে যশোর কিশোর সংশোধন কেন্দ্রে পাঠানো হলো।
রিফাত শরীফ হত্যায় চার্জশিটভুক্ত অন্য আসামি রাকিবুল হাসান ওরফে রিফাত ফরাজী (২৩), আল কাইয়ুম ওরফে রাব্বি আকন (২১), রেজোয়ান আলী খান হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয় (২২), মো. হাসান (১৯), আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি (১৯), রাফিউল ইসলাম রাব্বি (২০), মো. সাগর (১৯) ও কামরুল হাসান সায়মুনকে (২১) আদালতে হাজিরা শেষে বেলা ১১টার দিকে বরগুনা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
রিফাত শরীফ হত্যা মামলার ১৪ জন আসামিকে আজ বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজীর আদালতে হাজির করা হয়েছিল। তাদের মধ্যে ৮ জনকে বরগুনা জেলা কারাগার ও ৬ জনকে যশোর কিশোর সংশোধন কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। মামলার পরবর্তী তারিখ ১৮ সেপ্টেম্বর।
রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় ২৪ জনকে দায়ী করে চার্জশীট দাখিল করলেও ৯ জন আসামি এখনো ধরা পরেনি। তারা হচ্ছে- মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত (১৯), মো. মুসা (২২), রাকিবুল হাসান রিফাত হাওলাদার (১৫), আবু আবদুল্লাহ ওরফে রায়হান (১৬), মো. নাইম (১৭), রাকিবুল হাসান নিয়ামত (১৫), সাইয়েদ মারুফ বিল্লাহ ওরফে মহিবুল্লাহ (১৭), মারুফ মল্লিক (১৭) ও প্রিন্স মোল্লা (১৫)।
বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম