আর দশজন শিক্ষার্থীর মত চলমান ইবদেতায়ী শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় বসার কথা ছিল মেধাবী বাকপ্রতিবন্ধী ছাত্রী লিসা আক্তারের। কিন্তু প্রবেশপত্রে মাদ্রাসা সুপারের প্রতারণা ও উপজেলা শিক্ষা অফিসের অবহেলায় অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়া পরীক্ষায় বসা হয়নি তার।
চোখের পানি নিয়ে বাবার সাথে বাড়ী ফিরেছে ওই পরীক্ষার্থী। লিসা আক্তার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার নাগেশ্বরবাড়ী গ্রামের ওয়ালিউর রহমানের মেয়ে। চলমান ইবতেদায়ী সমাপনী পরীক্ষায় নাগেশ্বরবাড়ী মিয়ারদ্দীন দাখিল মাদ্রাসা থেকে বানাগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের কথা ছিল তার। মাদ্রাসা সুপার এবং উপজেলা শিক্ষা অফিসের কারণে প্রবেশপত্রে নাম, পিতার নাম ও মাতার নাম ভুল হলেও তা সংশোধন করে পরীক্ষায় বসার সুযোগ প্রদান করা হয়নি তাকে।
প্রবেশপত্রে লিসা আক্তারের নামের পরিবর্তে মৌরি আক্তার, তার পিতার নাম মোঃ ওয়ালিউর রহমানের পরিবর্তে মোঃ মমিরুল ইসলাম এবং মাতার নাম মোছাঃ লিপি আক্তারের পরিবর্তে মহসিনা বেগম দিয়ে প্রবেশপত্র ইস্যু করা হয়েছে। যেখানে নাগেশ্বরবাড়ী মিয়ারদ্দীন দাখিল মাদ্রাসা সুপার আবু তালেব, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোফাজ্জল হোসেন মন্ডলের স্বাক্ষরের সাথে মৌরি আক্তারের স্বাক্ষর রয়েছে। তবে কে এই মৌরি আক্তার, এটা জানেনা মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ এমনকি উপজেলা শিক্ষা অফিসও পরিচয় দিতে ব্যর্থ।
তবে বিষয়টি আগে থেকেই জানতো মাদ্রাসা সুপারসহ ওই মাদ্রাসার সকল কর্মচারী। এমন অভিযোগ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর বাবা ওয়ালিউর রহমানের। তিনি বলেন, বাকপ্রতিবন্ধী হওয়ার সুযোগ কাজে লাগিয়ে প্রবেশপত্রে লিসার ছবি ব্যবহার করে অন্য শিক্ষার্থীর পরিবর্তে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য আমার মেয়ের হাতে প্রবেশপত্র হাতে ধরিয়ে দেন মাদরাসা পিয়ন এবার উদ্দীন। ২০ টাকাও নিয়েছে প্রবেশপত্র প্রদানের জন্য। এর আগেও পরীক্ষার ফরম পুরণের জন্য ১০০ টাকা প্রদান করা হয়েছে। প্রবেশপত্রে নিজের নামের স্থলে মৌরি আক্তারের নাম দেখে বাড়িতে ইশারায় বাবা ও মাকে বোঝানোর চেষ্টা করে লিসা আক্তার।
বিষয়টি মাদ্রাসা কতৃপক্ষকে জানানো হলেও পরীক্ষায় অংশ নিতে বলেন। পরবর্তীতে বিষয়টি দেখা যাবে। আপাতত পরীক্ষায় অংশ নিতে বলেন লিসাকে। নিজের মেয়ে বাকপ্রতিবন্ধীর সুযোগ নিয়ে একটি বছর নষ্ট করার জন্য মাদ্রাসা সুপারের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন লিসার বাবা ও তার স্বজনেরা।
মাদ্রাসা সুপার আবু তালেব জানান, চলতি সমাপনী পরীক্ষায় তার নামে প্রবেশপত্র ইস্যুর জন্য একাধিকবার যোগাযোগ করেছি উপজেলা শিক্ষা অফিসের সাথে। কিন্তু অফিস বলছে সংশোধন করার কোন সুযোগ নেই। উপজেলা নির্বাহি কমকর্তাকে বিয়ষটি জানানো হলে তিনি ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে পরীক্ষার্থীকে পরীক্ষা থেকে বিরত রাখতে বলেন।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোফাজ্জল হোসেন মন্ডল জানান, পরীক্ষায় ডিআর ফরম অনুসারে প্রবেশপত্র ইস্যূ করা হয়। ছবির সাথে নামের মিল আছে কিনা তা যাচাই করে সুপার স্বাক্ষর করার পর আমি প্রবেশপত্রে স্বাক্ষর করি। এত শিক্ষার্থীর ছবি চিহ্নিত করার সুযোগ নেই। তাছাড়া মাদ্রাসা সুপার সময়মতো বিষয়টি অফিসে জানাতে ব্যর্থতার কারণেই এমনটা হয়েছে। আমাদের এখানে সংশোধনের আর কোন সুযোগ ছিল না।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুর রহমান বলেন, জেএসসি পরীক্ষায় বড় ধরণের ভুলত্রুটি সমাধান করে নেওয়া সম্ভব বোর্ড থেকে। প্রাথমিকের বেলায় তাও। উপজেলা শিক্ষা অফিস এবং মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ একটু আন্তরিকতার সহিত বিষয়টি দেখলেই সম্ভব ছিল। প্রতিবন্ধী বাচ্চাটার পরিণতি দেখে আমিও খুব কষ্ট পেয়েছি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার খায়রুল আলম সুমনের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।উপজেলা চেয়ারম্যান আলী আসলাম জুয়েল বলেন, মেয়েটির পরিবারের লোকজন ঘটনার কথা আমাকে জানিয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।
বিডি-প্রতিদিন/ সিফাত আব্দুল্লাহ