৩ জুন, ২০২০ ২০:০০

প্রকৃত পাওনাদারকে খুঁজে বের করে টাকা ফেরত দিলেন ছাত্রলীগ নেতা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকৃত পাওনাদারকে খুঁজে বের করে টাকা ফেরত দিলেন ছাত্রলীগ নেতা

ছাত্রলীগ নেতা দেলোয়ার

মোবাইল নম্বরের একটি ডিজিট ভুল হওয়ায় করোনা মহামারি পরিস্থিতিতে দুর্দশাগ্রস্ত দরিদ্র লাকি আক্তারের টাকা ভুলক্রমে ঢুকে পড়ে সুনামগঞ্জ দোয়ারাবাজার উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ারের 'নগদ' অ্যাকাউন্টে। গত ২৫ মে এ ঘটনা ঘটে।

নিজের নাম সরকারের এই তালিকায় নেই। তাই টাকা পাওয়ার পর থেকে প্রকৃত পাওনাদারকে খুঁজতে শুরু করেন ছাত্রলীগ নেতা দেলোয়ার। সরকারের উচ্চ মহলের সহযোগিতা নিয়ে প্রকৃত সুবিধাভোগীকে খুঁজে বের করে টাকা পৌঁছে দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন দেলোয়ার।

ছাত্রলীগ নেতা দেলোয়ার জানান, প্রথমে তিনি এ নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সঙ্গে কথা বলেন। প্রকৃত পাওনাদারকে খুঁজে বের করতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার কার্যালায়কে জানানোর পাশাপাশি দেলোয়ার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ওয়েবসাইট থেকে মেইল এড্রেস নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউসের সহযোগিতা চেয়ে ই-মেইল করেন।

ড. আহমদ কায়কাউস ই-মেইল পেয়ে তাৎক্ষণিক সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেন। তিনি সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার নেয়ার নির্দেশ দেন এবং সরকারের এই মানবিক সহায়তার টাকা সরকারি কোষাগারে ফেরত আনেন এবং প্রকৃত পাওনাদার লাকি আক্তার কে খুঁজে বের করে তার কাছে টাকা পৌঁছে দেন।

দেলোয়ার হোসেন বলেন, অ্যাকাউন্টে টাকাটা আসার পর থেকে প্রকৃত পাওনাদারকে খুঁজে বের করার তাগিদ থেকে আমি এ চেষ্টা করি। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মহোদয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মহোদয় এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসার সবাই আন্তরিকতার সঙ্গে ব্যবস্থা নিতে দ্রুততম সময়ে প্রকৃত পাওনাদারকে খুঁজে বের টাকাটা পৌঁছে দিয়েছেন।

তিনি বলেন, টাকার পরিমাণটা খুব বেশি নয়। কিন্তু আমার মাথায় শুধু কাজ করেছে যিনি সরকারের মানবিক সহায়তার প্রকৃত হকদার তার কাছে টাকাটা পৌঁছে দিতে হবে। তার কাছে হয়তো টাকাটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

টাকাটা অন্য যে কোন একজন দরিদ্র মানুষকে দান না করে প্রকৃত পাওনাদারকে খুঁজে বের করার তাগিদ অনুভব করার কারণ জানতে চাইলে ছাত্রলীগ কর্মী দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমি যেসব দরিদ্র মানুষকে চিনি তাদের তো আমি নিজে বা অন্যদের সহযোগিতা নিয়ে আড়াই হাজার টাকা দান করে দিতে পারি। কিন্তু সরকারের তালিকায় যে ব্যক্তি আছেন তিনি তো আর টাকাটা পেলেন না। তার প্রয়োজনটা তো আর পূরণ হবে না। হয়তো অন্য কেউ তো তাকে কোন সহযোগিতা দেননি। এসব চিন্তা থেকে প্রকৃত পাওনাদারকে খুঁজে বের করাকে ফরজ মনে করেছি। টাকা ফেরত দিতে পেরে আমি আনন্দিত।

সুনামগঞ্জ জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোনিয়া সুলতানা জানান, দেলোয়ার বিষয়টি জানানোর পর আমি খুঁজে বের করার উদ্যোগ নেই। আমার উপজেলার তালিকায় খুঁজে প্রকৃত পাওনাদারকে খুঁজে পাইনি। পরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সহযোগিতা নিয়ে প্রকৃত পাওনাদার লাকি আক্তারকে খুঁজে বের করা হয়। লাকি আক্তার বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার বাসিন্দা।  

সোনিয়া সুলতানা বলেন, আমাদের যাচাই প্রক্রিয়ার চলমান থাকার সময়ের মধ্যে দেলোয়ার হোসেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মহোদয়কেও জানিয়েছেন। পরে অর্থ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব সাইফুল ইসলামের সহযোগিতায় দেলোয়ার হোসেন সরকারি কোষাগারে টাকা ফেরত দেন। প্রসাসনের পক্ষ থেকে সরকারের মানবিক সহায়তার আড়াই হাজার টাকা প্রকৃত পাওনাদার লাকি আক্তারকে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।

মোবাইল নম্বরের একটি ডিজিট ৫ এর পরিবর্তে টাইপিং ভুলে ৭ হওয়ার এই ভুলটি হয়েছে বলে জানান সোনিয়া সুলতানা।

দেলোয়ারের প্রশংসা করে তিনি বলেন, আমাদের আগামীর সুন্দর বাংলাদেশের জন্য এ রকম প্রতিশ্রুতিবন্ধ দায়িত্বশীল ছেলে-মেয়ে প্রয়োজন।

সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান রিপন বলেন, দেলোয়ার হোসেনের এই মহতি কাজে আমরা ছাত্রলীগ পরিবার গর্বিত।

বিডি প্রতিদিন/আরাফাত

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর