কন্যা সন্তান গর্ভে ধারণ করায় স্ত্রীর পেটে লাথি মেরে সন্তান হত্যার অভিযোগ উঠেছে স্বামীর বিরুদ্ধে। একই সাথে যৌতুকের দাবিতে শারীরিক-মানসিক নির্যাতনও করেছে। এ ঘটনায় ৮ মাস আগে মামলা করা হলেও অভিযুক্ত চিকিৎসক স্বামী এখনো গ্রেফতার না হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছে স্ত্রী ও তার স্বজনরা।
অভিযুক্ত স্বামীর নাম চন্দন বণিক। তিনি টাঙ্গাইল পৌর শহরের প্যারাডাইসপাড়া এলাকার বাসিন্দা এবং পেশায় একজন চিকিৎসক। আর ভুক্তভোগীর স্ত্রীর নাম তনুশ্রী রায় এবং তার বাবার বাড়ি সিরাজগঞ্জের তাড়াশ পৌর শহরের ঘোষপাড়া এলাকায়।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, ২০১৮ সালে তনুশ্রী রায়ের সাথে ব্রজ গোপাল বণিকের ছেলে চন্দন বণিকের বিয়ে হয়। বিয়ের সময় নগদ দুই লাখ টাকা ও সাত ভরি স্বর্ণালংকারসহ বাড়ির আসবাবপত্র দেওয়া হয়েছে। বিয়ের ১৫ দিন পর থেকেই আরও তিন লাখ টাকা, আইফোন ও রোলেক্স ঘড়িসহ নানা জিনিসের জন্য স্ত্রীকে চাপ দেয়।
এতে রাজী না হওয়ায় নানাভাবে অত্যাচার-নির্যাতন করতে থাকে। এ অবস্থায় স্ত্রীর পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। গর্ভে কন্যা সন্তান হওয়ায় স্বামী ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। নির্যাতনের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। এ অবস্থায় কন্যা সন্তান গর্ভে থাকায় তার স্ত্রীকে পেটে সজোরে লাথি মারে। জ্ঞান হারানোর পর তাকে টাঙ্গাইলের একটি হাসপাতালে নিয়ে সন্তান গর্ভপাত করানো হয়। এরপর তাকে অসুস্থ অবস্থায় সিরাজগঞ্জে ফেলে রেখে চলে যায়।
স্ত্রী তনুশ্রী জানান, বিয়ের পর থেকেই যৌতুকের জন্য অনেক নির্যাতন করতো। অসুখ হলে ওষুধ খেতে দিতো না। বাবার বাড়ি কারও সাথে মোবাইলে কথা বলতে দিতো না। শাশুড়ি বিবস্ত্র করে গোসল করতে দিতো। আমার কোনো আত্মীয়-স্বজনকে দেখতে যেতে দিতো না।
তিনি বলেন, ছেলে-মেয়ের জন্মগ্রহণ হলো বিধাতার হাতে। এখানো আমার কোনো হাত নেই। কিন্তু আমাকে দোষী সাব্যস্ত করে অনাগত সন্তানকে হত্যা করা হয়েছে। তিনি এমন স্বামীর বিচার দাবি করেছেন।
তনুশ্রীর বড় ভাই বিদ্যুত জানান, চন্দন বণিক আগেই একটা বিয়ে করেছিল। এটা আমাদের কাছে গোপন করে রেখেছিল। বোনের পেটের সন্তানকে হত্যা করে বাড়ির কাছে ফেলে রেখে যাবার চেষ্টা করেছিল। তখন গ্রামবাসী তাদের আটক করেছিল। তারপরেও তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি। এনিয়ে একাধিকবার মিমাংসার চেষ্টা করেছি।
কিন্তু যৌতুকের দাবিতে চন্দন বনিক ও তার বাবা-মা অটল। এ কারণে সুবিচারের জন্য চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি সিরাজগঞ্জ আদালতে মামলা দায়ের করা হয়। আদালত থেকে তাড়াশ উপজেলা সমাজসেবা অফিসারকে তদন্তের ভার দেওয়ার তদন্তপূর্বক প্রতিবেদনও দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইল সদর হাসপাতালে কর্মরত অভিযুক্ত চিকিৎসক চন্দন বণিকের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি মুঠোফোন রিসিভ করেননি।
বিডি প্রতিদিন/এমআই