নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার তমালতলা মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী তিথি খাতুন। গত মাসে তিনি মোবাইল ফোনে বিকাশ অ্যাকাউন্টে উপবৃত্তির টাকা পেয়েছেন। সম্প্রতি মোবাইল ফোনের ওই নম্বরে অপরিচিত নম্বর থেকে প্রতারক চক্রের কল আসে। শিক্ষাবোর্ডের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে শিক্ষার্থীর নাম, তার বাবা ও মায়ের নাম এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম বলে যাচাই করে।
এসময় শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তির টাকা কম পেয়েছে জানিয়ে বিকাশ অ্যাকাউন্ট পরিবর্তনের কথা বলা হয়। এরপর কৌশলে তার কাছ থেকে ১৭ হাজার ৫০০ টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতারক চক্র। এ ঘটনায় ওই শিক্ষার্থীর মা লিপি বেগম বুধবার বাগাতিপাড়া মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন।
শুধু তিথি খাতুন নয়, প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়ে একই কলেজের আরও চারজন ছাত্রী বিকাশে পাওয়া উপবৃত্তির টাকা খুইয়েছেন। এছাড়াও একই কলেজের তানজিলা খাতুন প্রতারক চক্রের ফোন পেয়েও টাকা হারানোর হাত থেকে রক্ষা পেয়েছেন। এর আগে বাঁশবাড়িয়া ডিগ্রি কলেজের এক শিক্ষার্থীর প্রাপ্ত উপবৃত্তির টাকা প্রতারক চক্র হাতিয়ে নেয়।
ভুক্তভোগী, অভিভাবক ও বিকাশ এজেন্টের কয়েকটি দোকান সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে একটি প্রতারক চক্র বিকাশে জমা হওয়া উপবৃত্তির টাকা কৌশলে হাতিয়ে নিচ্ছে। প্রতারক চক্রটি এলাকার প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের শিকার হিসেবে বেছে নিয়ে প্রতারণা করছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের এসব শিক্ষার্থী সহজ-সরল ও কিছুটা অসচেতন হওয়ায় খুব সহজেই বিকাশ অ্যাকাউন্টের পিন নম্বরসহ বিভিন্ন তথ্য প্রতারকদের দিয়ে দিচ্ছে।
বিকাশ অ্যাকাউন্টে টাকা আসার পর মুঠোফোনের অপরিচিত নম্বর থেকে প্রতারক চক্রের কল আসে। কথার মার-প্যাঁচে কৌশলে গ্রামের সহজ-সরল শিক্ষার্থীদের পিন নম্বর সংগ্রহ করে হাতিয়ে নেয় বিকাশ অ্যাকাউন্টের সব টাকা। এভাবে শিক্ষার্থীদের লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এসব চক্র।
জানা গেছে, গতমাসে সপ্তম, অষ্টম, নবম ও একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বিকাশ অ্যাকাউন্টে উপবৃত্তির টাকা এসেছে। এর মধ্যে একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা উপবৃত্তি ও করোনাকালীন সহায়তা মিলিয়ে সবচেয়ে বেশি টাকা পেয়েছে।
তমালতলা মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মামুনুর রশীদ জানান, বিকাশে জমা হওয়ার পর তার কলেজের উপবৃত্তিপ্রাপ্ত চারজন শিক্ষার্থী প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়েছে বলে তাদের অভিভাকরা জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, অনলাইনের কোন দুর্বলতার কারণে হয়তো উপবৃত্তি সংক্রান্ত এসব তথ্য কোনোভাবে প্রতারক চক্র হাতিয়ে নিচ্ছে। এরপর ওইসব শিক্ষার্থীদের কাছে ফোন করে তাদের ফাঁদে ফেলছে। সেকারণে তিনি সবাইকে সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আহাদ আলী বলেন, প্রতারণার শিকার কয়েকজন শিক্ষার্থীর তথ্য ইতিমধ্যেই ঊর্ধ্বতন বরাবর তিনি পাঠিয়েছেন। তবে কোনো শিক্ষার্থী যাতে প্রতারক চক্রের ফাঁদে পা না দেয়, সে ব্যাপারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের জানানো হচ্ছে, যেন বিষয়টি তারা শিক্ষার্থীদের জানিয়ে দেন।
এ ব্যাপারে বাগাতিপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলাম বলেন, একজন ছাত্রীর অভিভাবক অভিযোগ করেছেন। এছাড়া এ ধরনের আর কোনো অভিযোগ তারা পাননি। পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান।
ইউএনও প্রিয়াংকা দেবী পাল জানান, এ বিষয়ে তিনি কোনো অভিযোগ পাননি। তবে বিকাশ পিন আদান-প্রদানে সবাইকে সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
বিডি প্রতিদিন/এমআই