পঞ্চগড়ে এখন তীব্র ঠান্ডায় কাঁপছে জনপথ। সন্ধ্যা থেকে শুরু হয় হাড় কাঁপানো শীত। রাত গভীর হওয়ার সাথে সাথে বেড়ে যাচ্ছে শীতের তীব্রতা। দিনের বেলা উত্তরের হিমেল হাওয়ায় শরীর কেঁপে ওঠে। একমুঠো রোদের অপেক্ষায় থাকে এই জনপদের সাধারণ মানুষ।
রাত আর সকাল বেলায় খড়কুটোর আগুনের উত্তাপ যেন পরম বন্ধু। পানি বরফের মতো ঠান্ডা। অনেকে দুই থেকে তিনদিন গোসলও করে না। তবে প্রকৃতির এই নিদারুণ পরিবর্তনে থেমে নেই শিশুদের আনন্দ। হাড় কাঁপানো শীতও তাদের আনন্দ-উল্লাস থেকে বিরত রাখতে পারেনি।
এরই মধ্যে হাতে এসেছে নতুন বই। পাতা উল্টিয়ে এক ঝলক দেখা হয়ে গেছে। নাকে লেগেছে নতুন বইয়ের গন্ধ। স্কুল ছুটি। বাড়িতে বাড়িতে চলছে নতুন ধানের পিঠা উৎসব। কেউ কেউ চলে গেছে নানা বাড়ি। কেউ কেউ বেড়াতে গেছে অন্য কোথাও। গ্রামের শিশুরা আগের নিয়মেই ভোরবেলা ঘুম থেকে জেগে উঠছে। তারপর সারাদিন খেলাধুলা। অধিকাংশ দরিদ্র শিশুর রয়েছে একটি মাত্র গরম কাপড়। তাই দিয়েই এবারের শীত পাড় করবে তারা।
অনেকে গতবারের শীতের কাপড়েই পার করছে শীতের দিনগুলো। শীতার্ত এসব শিশুদের হাতে কেউ পৌঁছে দেয়নি গরম কাপড়। শীতের বেশির ভাগ সময়ে এই এলাকায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বিরাজ করে। বিশেষ করে তেঁতুলিয়া উপজেলায় বিকট ঠান্ডা বিরাজ করছে।
সোমবার সকালে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সাথে এই উপজেলার ডাক্তারপাড়া গ্রামের ৮ বছর বয়সী শিশু আফির সাথে কথা হয়। আফি জানায়, তার বাবা কৃষি শ্রমিক। গতবছর একটা সোয়েটার কিনেছিলো ভজনপুর হাটে। এবছর কেনেনি। সে বলে তার ঠান্ডা লাগে না। ঠান্ডার কথা বললে বাড়ি থেকে তাকে খেলতে দিতে দেবে না।
ঠান্ডা গায়ে মাখতে মাখতে অনেক শিশুই আক্রান্ত হচ্ছে শীত জনিত রোগে। হাসপাতালে বাড়ছে শিশু রোগীদের ভিড়। সুধীজনরা বলছেন সরকারি-বেসরকারিভাবে কম্বল দেওয়া হচ্ছে। তাতে রাতের শীত নিবারণ করা যায়। কিন্তু দিনের বেলা শীত নিবারণের ব্যবস্থাও করা দরকার। শিশুদের কথাও ভাববার প্রয়োজন।
নাট্যকর্মী রনী শীল জানান, এই এলাকার শিশুরা শীতকে উপেক্ষা করে আনন্দ করছে এটা ঠিক। কিন্তু তারা কষ্টে আছে। দরিদ্র শিশুদের গরম কাপড়ের প্রয়োজন। এ ব্যাপারে সরকার এবং বিত্তশালীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
জেলা শিশু কর্মকর্তা আকতারুজ্জামান জানান, শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় শিশুরা কষ্টে আছে। বিশেষ করে সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা। তাদের জন্য উদ্যোগ প্রয়োজন।
বিডি প্রতিদিন/এমআই