বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের দুবলার চরের আলোরকোলের রূপার গাং থেকে উদ্ধার হওয়া ৯ ফুট লম্বা একটি মৃত রয়েল বেঙ্গল টাইগারের (বাঘ) ময়নাতদন্ত শরণখোলা রেঞ্জ অফিসে সম্পন্ন হয়েছে। শনিবার দুপুরে সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জ অফিসে পুরুষ এই মৃত বাঘটির ময়নাতদন্ত করেন শরণখোলা উপজেলা প্রাণি কর্মকর্তা ডা. তোফাজ্জল হোসেন। ময়না তদন্তকালে বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণ বিভাগের খুলনা বিভাগীয় রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. লুৎফর পারভেজ উপস্থিত ছিলেন।
তদন্তকালে বাঘটির শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকার ফরেন্সিক ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যে ফরেন্সিক ল্যাব থেকে ময়না তদন্তের রিপোর্ট আসার পরই বাঘটির মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা সম্ভব হবে। গত ৩ বছরের সুন্দরবন থেকে ৩ টি মৃত বাঘ উদ্ধার করেছে বন বিভাগ।
সুন্দরবন বিভাগ জানান, শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সুন্দরবনের স্মার্ট প্রেট্রোলিং টিমের সদস্যরা নিয়মিত টহলকালে তারা রূপার গাংয়ের চরে বিশালাকৃতির এক বাঘটি পড়ে থাকতে দেখেন। পরে বনরক্ষীরা শব্দ করলেও বাঘটি নড়াচলা না করায় কাছে গিয়ে দেখতে পায় বাঘটি চরে মরে পড়ে রয়েছে। উদ্ধারের পর দেখা যায় বাঘটি গায়ে কোন আঘাতের চিহ্ন বা দাঁত-নখ ও চামড়াসহ সকল অঙ্গ-প্রতঙ্গ ঠিক রয়েছে। পরে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ১৬ থেকে ১৭ বছর বয়সের মৃত বাঘটির ময়না তদন্ত করতে রাতেই শরণখোলা রেঞ্জ অফিসে নিয়ে আসে।
এই মৃত বাঘটি উদ্ধারের আগে গত ২০২১ সালের ১৯ মার্চ সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের ধুনছেবাড়িয়া চর থেকে আনুমানিক ১৪ থেকে ১৫ বছর বয়সী ৭ ফুট দৈর্ঘ্যের ও ৩ ফুট উচ্চতার ও একই বছরের ৭ নভেম্বর সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের চুনকুড়ি রাজাখালী খালের পাশ থেকে আরো একটি বাঘের মৃতদেহ উদ্ধার করে বন বিভাগ। তবে, ওইদুটি মৃত বাঘের শরীরে আঘাতের কোন চিহ্ন না মেলায় স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে বলে ময়না তদন্তে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন খুলনা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (সিএফ) মিহির কুমার দো।
বাঘটির ময়না তদন্তকারী শরণখোলা উপজেলা প্রাণি কর্মকর্তা ডা. তোফাজ্জল হোসেনা জানান, একটি বাঘ সাধারণত ১৬ থেকে ১৭ বছর বেঁচে থাকে। ৯ ফিট লম্বা ও ৪ ফুট ৩ ইঞ্চি উচ্চতার প্রাপ্তবয়স্ক মৃত বাঘটির বয়স ১৬ থেকে ১৭ বছর হবে। বাঘটি গায়ে কোনো আঘাতের চিহ্ন বা দাঁত-নখ ও চামড়াসহ সকল অঙ্গ-প্রতঙ্গ ঠিক রয়েছে। ময়না তদন্তকালে মৃত বাঘটির শরীর থেকে বাঘের দাঁত, চামড়া, লিভার, ফুসফুস ও পাকস্থলিসহ বিভিন্ন অর্গানের নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকার কেন্দ্রীয় পশু অনুসন্ধান ও গবেষনা কেন্দ্রের ফরেন্সিক ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যে ময়না তদন্ত রিপোর্টে আসার পরই বাঘ মৃত্যুর আসল রহস্য উদঘাটিত হবে।
সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জ কর্মকর্তা সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মো. শামসুল আরেফিন জানান, শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে দুবলার চরের আলোরকোল এলাকার রূপার গাঙ থেকে স্মার্ট টিমের সদস্যরা বাঘটি দেখতে পেয়ে মৃত বাঘটি উদ্ধার করে। পুরুষ এই মৃত বাঘটির শরীরে কোনো ক্ষতের দাগ পাওয়া যায়নি। ধারনা করা হচ্ছে বয়সজনিত কারণে পুরুষ এই বাঘটি মারা গেছে। বাঘটির মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে শনিবার দুপুরে শরণখোলা রেঞ্জ অফিসে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। ময়না তদন্ত শেষে বাঘটিকে মাটি চাপা দিয়ে রাখা হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল