আধিপত্য বিস্তার ও গ্রামে ফেরাকে কেন্দ্র করে নরসিংদী রায়পুরার বাশঁগাড়ী ও মির্জাচরে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে দুইজন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে কমপক্ষে ১০ জন। এদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে নূরুল নামে একজনকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে এলাকা দু’টিতে উত্তেজনা বিরাজ করছে। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে।
নিহতদের মধ্যে একজন রুবেল মিয়া (৩২), তিনি রায়পুরার মির্জাচরের মানিক মিয়ার ছেলে। রুবেল মির্জাচরের সাবেক চেয়ারম্যান ফারুকুল ইসলামের চাচাতো ভাই। নিহত অপরজন হলেন মির্জাচর গ্রামের বাবুল মিয়ার ছেলে মামুন মিয়া (৩০), সে মির্জাচর ইউনিয়নের নব-নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান জাফর ইকবাল মানিক সমর্থক।
আজ রবিবার সকালে রায়পুরার দুর্গম চরাঞ্চল বাশঁগাড়ী ও মির্জাচর ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে। নিহত রুবেল মিয়া (৩২) রায়পুরার মির্জাচরের মানিক মিয়ার ছেলে। সে মির্জাচরের সাবেক চেয়ারম্যান ফারুকুল ইসলামের চাচাতো ভাই। গুলিবিদ্ধ ব্যক্তির নাম নূরুল হক (১৯), তিনি বাশঁগাড়ী গ্রামের সাধন মিয়ার ছেলে। তারা দু’জনই নরসিংদী রায়পুরার বাশঁগাড়ী ইউনিয়নের সদ্য সাবেক আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান আশ্রাফুল হকের সমর্থক।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, এলাকার আধিপত্য নিয়ে নরসিংদী রায়পুরার বাশঁগাড়ী ইউনিয়নের সদ্য সাবেক আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান আশ্রাফুল হকের সাথে বাশঁগাড়ী ইউনিয়নের নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান জাকির হোসেন রাতুলের দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। দ্বন্দ্বের জের ধরে তাদের মধ্যে একাধিক বার হামলা-পাল্টা-হামলা ও মামলার ঘটনা ঘটে। ওই সব হামলায় একাধিক লোক নিহত ও প্রায় ৩ শতাধিক মানুষ আহত হয়।
এরই মধ্যে ২য় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পায় তৎকালিন চেয়ারম্যান আশ্রাফুল হক। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে সতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নেয় জাকির হোসেন রাতুল। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব আরো তীব্র হয়। এদিকে নির্বাচনী বৈতরনী পার হতে নির্বাচনের দিন ভোর রাত থেকেই কেন্দ্র দখলের চেষ্টা চালায়। এরই জের ধরে রাত ৩টার দিকে নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান জাকির হোসেন রাতুল এর সমর্থকরা দেশি-বিদেশি অস্ত্র-সস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী চেয়ারম্যান আশ্রাফুল হকের সমর্থকদের উপর হামলা চালায়। ওই সময় উভয় পক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বেঁধে যায়। সংঘর্ষে নির্বাচনের দিন সকালে নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান রাতুলের ২ সমর্থক ও আশ্রাফুলের এক সমর্থকসহ তিনজন নিহত হয়। আহত হয় কমপক্ষে শতাধিক মানুষ। ১১ নভেম্বর নির্বাচনে সতন্ত্র প্রার্থী জাকির হোসেন রাতুল বিজয়ী হওয়ার পর এলাকা ছাড়া হয়ে পড়ে সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান আশ্রাফুল হক ও তার সমর্থকরা। এদিকে নির্বাচনে নৌকা প্রতিকের চেয়ারম্যান প্রার্থীর পরাজয়ের পর মির্জাচর ইউনিয়নের ফারুকুল ইসলাম ও তার সমর্থকরাও গ্রাম ছাড়া হয়ে পড়েন।
প্রায় আড়াই মাস গ্রাম ছাড়া থাকার পর বাশঁগাড়ী ও মির্জাচরের নৌকা প্রতিকের লোকজন সম্মিলিত হয়। পরে রবিবার সকালে প্রথমে তারা আশ্রাফুল হক ও তার সমর্থকদের নিয়ে বাশঁগাড়ী গ্রামে ফেরেন। এতে বাধা দেয় বাশঁগাড়ীর বর্তমান চেয়ারম্যান রাতুল সমর্থকরা। এনিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এতে একজন গুলিবিদ্ধসহ আরো ৫ জন আহত হয়।
পরে আশ্রাফুল হক ও তার সমর্থকরা গ্রামে ফেরার পর তাদের সহায়তা নিয়ে মির্জাচর ইউনিয়নের ফারুকুল ইসলামের সমর্থকরা মির্জাচর গ্রামে ফেরেন। ওই সময় মির্জাচরের নব-নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান জাফর ইকবাল মানিক সমর্থকরা বাধা দেয়। এসময় উভয় পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে ফারুকুল ইসলামের চাচাতো ভাই রুবেল মিয়া গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়। আহত হয় অরো ৫ জন।
পরে মির্জাচর ইউপি চেয়ারম্যান জাফর ইকবাল মানিক সমর্থকদের বাধা মুখে ফারুকুল সমর্থকরা গ্রামে ডুকতে পারেনি। খবর পেয়ে রায়পুরা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। মির্জাচর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ফারুকুল ইসলাম বলেন, বাশঁগাড়ীর সাবেক চেয়ারম্যান আশ্রাফুলের লোকজনকে গ্রামে তুলে দিতে মির্জাচর থেকে লোকজন বাশঁগাড়ী যায়। সেখানে তাদের ধাওয়া দিয়ে মির্জাচর পাঠালে বাশঁগাড়ীর রাতুল চেয়ারম্যানের হয়ে মির্জাচরের মানিক চেয়ারম্যানের লোকজন তাদের উপর হামলা চালায়। ওই সময় প্রতিপক্ষের ছোড়া গুলিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে আমার চাচাতো ভাই রুবেল মারা যায়।
অভিযোগ অস্বীকার করে মির্জাচর ইউপি চেয়ারম্যান জাফর ইকবাল মানিক সাংবাদিকদের বলেন, মূলত বাশঁগাড়ীর সাবেক চেয়ারম্যান আশ্রাফুল ও মির্জাচরের ফারুকুল ইসলাম এক গ্রুপ। তারা একে অপরকে বরাবরই সহায়তা করে। রবিবার আশ্রাফুলের লোকজনকে গ্রামে তুলে দিতে ফারুকুলের লোকজন লাঠিয়াল হিসেবে বাশঁগাড়ী যায়। সেখানে রাতুল চেয়ারম্যানের লোকজন তাদের বাধা দেয় এবং ধাওয়া দিয়ে মির্জাচর এনে গণ্ডগোল করেন। এতে হতাহত হয়। এখানে আমার কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। তবে এ ঘটনায় আমার ৪-৫ জন লোক আহত হয়েছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) সাহেব আলী পাঠান জানায়, গ্রামে ফেরাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষে একজন নিহত হওয়ার তথ্য পেয়েছি। এই মুহূর্তে এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। পরবর্তী সংহিসতা রোধে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
বিডি-প্রতিদিন/শফিক