বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় গুরু মহাসাধক বনভান্তে শ্রীমৎ সাধনানন্দ মহাস্থবির ১০তম পরিনির্বাণ বার্ষিকী পালিত হয়েছে রাঙামাটিতে। রবিবার সকালে রাঙামাটি রাজ বনবিহারে মঙ্গল প্রদ্বীপ জ্বালিয়ে বনভান্তের অস্থায়ী বেদীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন তার শীর্ষসহ ভক্তরা। শ্রদ্ধা জানাতে দূর-দূরান্ত থেকে রাঙামাটি রাজ বনবিহারে ছুটে আসে হাজারো পূণ্যার্থী। দিন ব্যাপী চলে ধর্মীয় প্রার্থনা। নানা রঙে তৈরি তোরণ ও বেলুনে সাজানো হয় পুরো রাজ বনবিহার।
একদিকে সাজ সাজ রব। অন্যদিকে সাধু সাধু সার্ধ ধ্বনি। সব মিলে এক অন্যরকম পরিবেশ ছিল চারপাশ। এছাড়া বৌদ্ধ পতাকা উত্তোলন, পঞ্চশীল প্রার্থনা, বুদ্ধপূজা, ত্রিপিটক পূজা, সংঘদান, অষ্টপরিস্কার দান, বুদ্ধমূর্তি দান, প্রদীপ পূজা ধর্মীয় সভাসহ ধর্মীয় শোভাযাত্রা করা হয়। শোভাযাত্রাটি রাজ বনবিহার থেকে শুরু হয়ে প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে আবার বিহারে শেষ হয়। পরে যমচুগ বনাশ্রম ভাবনা কেন্দ্র বিহার পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকে গুনীজনদের দেওয়া হয়েছে সম্মাননা স্মারক।
এসময় রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য বিপুল ত্রিপুরা, বিহার পরিচালনা কমিটির সভাপতি পূর্ণচক্র চাকমা, বিহার পরিচালনা কমিটির অর্থ সম্পাদক প্রদীপ চাকমা, বিহার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রূপক চাকমা, বিহার পরিচালনা কমিটির তথ্য ও প্রচার সম্পাদক প্রভাত চাকমা উপস্থিত ছিলেন।
বনভান্তের অমৃতময় বাণীর উদ্ধৃতি দিয়ে পুণ্যার্থীদের মাঝে ধর্মদেশনা দেন দীঘিনালা বন বিহারের অধ্যক্ষ ভদন্ত শ্রীমৎ শুভবর্ধন মহাস্থবির, ধুতাঙ্গটিলা বিহারের অধ্যক্ষ ভদন্ত শ্রীমৎ দেবধাম্মা মহাস্থবির, সাজেক বনবিহারের বিহার অধ্যক্ষ ভদন্ত শ্রীমৎ ধ্যানমতি ভিক্ষুসহ যমচুগ বনাশ্রম ভাবনা কেন্দ্রের বিহার অধ্যক্ষ কল্যাণজ্যোতি মহাস্থবির প্রমুখ।
অন্যদিকে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় গুরু মহাসাধক বনভান্তে শ্রীমৎ সাধনানন্দ মহাস্থবির ১০তম পরিনির্বাণ বার্ষিকী পালিত হয় নানিয়ার চরের রত্নাংকুর বনবিহারসহ বিভিন্ন শাখা বনবিহারে।
খাগড়াছড়ি পানছড়ি থেকে যমচুগ বনাশ্রম ভাবনা কেন্দ্রে আসা পূণ্যার্থী পহেল চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে সুউচ্চ পাহাড়ে অবস্থিত যমচুগ বনাশ্রম ভাবনা কেন্দ্রে প্রথমবার আসছি বনভান্তকে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে। প্রায় ৫০ মিনিটের মত হেঁটে পাহাড় উঠে বিহারে পৌঁছাতে হয়েছে। কষ্ট হলেও এখানে এসে খুব শান্তি অনুভব করছি।
প্রসঙ্গত, ১৯২০ সালের ৮ জানুয়ারি রাঙামাটি সদরের ১১৫ নম্বর মগবান মৌজার মোরঘোনা নামক গ্রামের বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের প্রধান ধর্মীয় গুরু মহাসাধক বনভান্তে শ্রীমৎ সাধনানন্দ মহাস্থবির জন্ম গ্রহণ করেন। ২০১২ সালের ৩০ জানুয়ারি মহাপরিনির্বাণ লাভ করেন তিনি। বর্তমানে এখনো তার দেহধাতু সংরক্ষিত আছে রাজ বনবিহারে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল