সাত বছর আগে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া থেকে হঠাৎ হারিয়ে যান সন্তেুাষ দেব। এরপর তার আত্মীয়-স্বজনরা বহু জায়গায় খোঁজ করলেও সন্ধান পাননি। দীর্ঘদিন পর সন্তেুাষ দেব নিজ দেশে ফিরে এসে ছেলেকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়লেন। এসময় তার আত্মীয়-স্বজনরাও আনন্দে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এমন আবেগঘন দৃশ্য দেখে আপ্লুত হয়ে পড়েন উপস্থিত অনেকে।
শুক্রবার দুপুরে আখাউড়া সীমান্ত চেকপোস্ট এ দৃশ্য দেখা যায়। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলা থেকে আসেন তিনি। তবে এদিন শুধু সন্তুষ দেব নয়, ভারতে আটকে পড়া আরও চার বাংলাদেশিকে ত্রিপুরার বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশন তাদের পরিবারের সদস্যেদের কাছে হস্তান্তর করেছে।
ভারত থেকে ফেরত আসা পাঁচ বাংলাদেশি হলেন চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার মনিন্দ্র লাল দেবের ছেলে সন্তেুাষ দেব, নারায়ণগঞ্জের খালেক সর্দারের ছেলে বিজয় চুমু, মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরের মৃত কামাল বেপারীর মেয়ে ময়না বেগম, পটুয়াখারী রাঙ্গাবালী এলাকার আফাজ উদ্দিন মৃধার মেয়ে রোজিনা বেগম ও কুমিল্লার চান্দিনার খালেক মিয়ার মেয়ে কুলসুম বেগম। তারা প্রত্যেকেই ৫ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত ভারতে আটকে ছিলেন।
ত্রিপুরায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের সহযোগিতায় ওই পাঁচজনকে বাংলাদেশে ফেরত আনা সম্ভব হয়েছে। দুপুরে আখাউড়া স্থলবন্দরের নো-ম্যান্স ল্যান্ডে তাদের প্রবেশের সময় ত্রিপুরার বাংলাদেশ সহকারী কমিশনার কার্যালয়ের হাইকমিশনার আরিফ মোহাম্মদ, প্রথম সচিব মো. রেজাউল হক, প্রথম সচিব ও দূতালয় প্রধান এস এম আসাদুজ্জামান, আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুমানা আক্তার, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. সাইফুল ইসলাম, বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের কর্মসূচি প্রধান শরিফুল ইসলাম, স্বেচ্ছাসেবক সৈয়দ খায়রুল আলম, ইমিগ্রেশন পুলিশ ইনচার্জ সাব ইন্সপেক্টর আবু বক্করসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
দীর্ঘ দিন পর হারিয়ে যাওয়া স্বজনকে ফিরে পেয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন সবার পরিবারের লোকজন। এসময় একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়লে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
ভারত থেকে ফেরত আসা সন্তোষ দেবের ছেলে অন্তু দেব বলেন, তার আজ থেকে প্রায় ৭ বছর আগে হঠাৎ বাড়ি থেকে নিখোঁজ হন। প্রথমে আমরা ভেবেছিলেন তিনি হয়তো তাদের কোনো আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছেন। কিন্তু বাবা আর বাড়ি ফেরার কোনো নাম নেই। পরে আত্মীয় স্বজনসহ বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ খবর নেওয়া হয়। এতে কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। পরে পুলিশের মাধ্যমে জানতে পারি, বাবা ভারতে আছেন। এতদিন পর বাবাকে ফিরে পেয়ে খুব আনন্দ লাগছে।’
ভারতফেরত কুমিল্লা চান্দিনার কুলসুম বেগমের ভাই আবুল বাশার বলেন, কুলসুম বেগম ২০১৪ সালে হঠাৎ করে স্বামীর বাড়ি কুমিল্লার দুর্গাপুর থেকে নিখোঁজ হয়ে যান। অনেক পরে পুলিশের মাধ্যমে জানতে পারি, কুলসুম বেগম ভারতের আগরতলায় আছে। কিন্তু কীভাবে গেল আমরা বুঝতে পারিনি।
পটুয়াখারী রাঙ্গাবালী এলাকার আফাজ উদ্দিন মৃধার মেয়ে রোজিনা বেগমের ভাই সাহাব উদ্দিন বলেন, আজ থেকে প্রায় ১২ বছর আগে আমার বোন নিখোঁজ হন। খোঁজ খবর করে কোনো সন্ধান না পাওয়ায় আমরা ধরেই নিয়েছিলাম, হয়তো সে আর বেঁচে নেই। গত এক বছর আগে জানতে পারি, বোন ভারতে আছে।
ত্রিপুরার বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনার আরিফ মোহাম্মদ সাংবাদিকদের বলেন, পাঁচ বাংলাদেশিই মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় ত্রিপুরায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হতে আটক হন। পরে আদালতের নির্দেশে আগরতলার মর্ডান সাইক্রিয়াটিক হাসপাতালে তারা চিকিৎসাধীন ছিলেন। তবে তারা কীভাবে ভারতে আসেন, সে ব্যাপারে কিছুই বলতে পারেননি। তাদের অনেকেই এই হাসপাতালে চার থেকে পাঁচ বছর বা আরও বেশি সময় ধরে চিকিৎসাধীন ছিলেন। অবস্থার কিছুটা উন্নতি হওয়ার পর তাদের দেশে ফেরত আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়। ওই হাসপাতালে আরও বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি চিৎিসাধীন আছেন। পর্যায়ক্রমে তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হবে।
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ