আধুনিক সভ্যতার আড়ালে হারিয়ে যাওয়া গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যকে বর্তমান প্রজন্মের সামনে তুলে ধরতে জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার পশ্চিম দেওগ্রামে অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো দুই দিনব্যাপী বিলুপ্তপ্রায় ঐতিহ্যবাহী লাঠি খেলা ও প্রাচীন গ্রামীণ মেলা। মেলায় আশপাশের গ্রাম ছাড়াও দূর দূরান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষের আগমন ঘটে। এ মেলা প্রায় দেড়শ’ বছর থেকে হয়ে আসছে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা।
প্রতিবছর জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার পশ্চিম দেওগ্রামে শারদীয় দুর্গাপূজার পর আয়োজন করা হয় দুই দিনব্যাপী গ্রামীণ মেলা। দেড়শ’ বছর আগে থেকে শুরু হওয়া এ মেলার প্রধান আকর্ষণ ঐতিহ্যবাহী লাঠি খেলা। ঢাক-ঢোলের বাজনায়, গানের তালে তালে যেন এ আনন্দময় আয়োজন। ঢাক-ঢোল আর কাঁসার ঘণ্টার তালে তালে চলে লাঠির কসরত। প্রতিপক্ষের লাঠির আঘাত থেকে নিজেকে রক্ষা ও পাল্টা আঘাত করতে ঝাঁপিয়ে পড়েন লাঠিয়ালরা। তাতে উৎসাহ দিচ্ছেন শতশত দর্শক। মেলাকে ঘিরে জামাই এবং স্বজনদের আপ্যায়ন চলে মেলা সংলগ্ন আশপাশের কয়েক গ্রামে। লাঠি খেলা মূল আকর্ষণ হলেও মেলায় বসে রকমারি মিষ্টির দোকান। যেখানে বিভিন্ন ধরণের মিষ্টি ও চিনির শাহী জিলাপি আকৃষ্ট করে মেলায় আসা দর্শকদের। মেলায় বাঁশ কাঠ ও লোহার তৈরি সংসারের বিভিন্ন সামগ্রী নজর কাড়ে মানুষের। শিশুদের খেলাধুলার জিনিষপত্র এবং কসমেটিক্স এর দোকানও বসে দুইদিনের এ মেলায়। জামাই-মেয়ের পাশাপাশি স্বজনদের আপ্যায়নের রীতি এলাকায় চলে আসছে এ মেলাকে ঘিরেই।
স্থানীয় পশ্চিম দেওগ্রামে হারুনুর রশীদ, মামুদপুর গ্রামের আব্দুল খালেক বলেন আমাদের বাবা দাদারা এই মেলায় এসে ছিল আমরাও এই মেলাতে কেনাকাটা করতে আসি। মেলায় লাঠি খেলা দেখলাম খুব ভালো লাগলো এই দিনের উপক্ষোয় থাকি কারন সবার সঙ্গে এই মেলায় দেখা হয়।
এ মেলাকে ঘিরে আশে পাশের জেলা থেকে অনেক মানুষের সমাগম ঘটে। মেলাতে আসা বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজলার কিচক গ্রামের এমরান হোসেন, দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলা আতাউর রহমান বলেন, লাঠি খেলা মেলা শুধু নাম শোনেছিলাম আজ নিজে এসে মেলা দেখলাম। ঢাক-ঢোল আর কাঁসার ঘণ্টার তালে তালে লাঠি খেলছে লাঠিয়ালরা।
পশ্চিম দেওগ্রামের হাফিজার রহমান, সানোয়ার হোসেন জানান, শুধুমাত্র বাপ-দাদার পুরনো এ ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে তারা বিনা পারিশ্রমিকে এ খেলা চালিয়ে দর্শকদের বিনোদন দিয়ে যাচ্ছেন। তবে আগামী প্রজন্মের কাছে এ খেলা থাকবে কিনা তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেন তারা।
মেলা আয়োজক কমিটির সদস্য মোজ্জামেল হক জানান,এ মেলার বয়স প্রায় দেড়শ’ বছর হবে। সমাজ থেকে মাদক ও অপরাধ দূর করতে আর হারানো ঐতিহ্য ধরে রাখতেই আমাদের এই আয়োজন।
মামুদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মশিউর রহমান জানান, মেলার মূল আর্কষণ লাঠি খেলা। এ মেলাকে ঘিরে আশে পাশের জেলা থেকে অনেক মানুষের সমগম ঘটে। ঐহিত্যবাহী এ মেলাকে টিকিয়ে রাখতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/এএম