দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি কমায় রাজস্ব আয় কমেছে। প্রতিবছর রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ার পাশাপাশি রাজস্ব আহরন বাড়লেও আমদানী কমে যাওয়ায় চলতি অর্থবছরের গত চার মাসে স্থলবন্দরে রাজস্ব আহরণ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪৯ কোটি টাকা ঘাটতি রয়েছে বলে জানান কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।
কাস্টম সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) রাজস্ব আহরণে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত ছিল ১৮৭ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। এর বিপরীতে আহরণ হয়েছে ১৩৭কোটি ৫৬ লাখ টাকা। চার মাসে ৪৯ কোটি ৮২ লাখ টাকা ঘাটতি রয়েছে।
এদিকে, গত ২০২১-২২ অর্থবছরে বন্দরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৫৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা। আর পূর্বের লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে চলতি ২০২২-২৩অর্থবছরে ৬০৬ কোটি ২৮লাখ টাকা নির্ধারণ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সেই হিসাবে চলতি অর্থবছরের জুলাই মাসে স্থলবন্দর থেকে ৪২কোটি ৭৪লাখ টাকা রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আহরণ হয়েছে ২৪কোটি ৩৮লাখ টাকা। আগস্টে ৪৯ কোটি ৬ লাখ টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আহরণ হয়েছে ৩৮ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। সেপ্টেম্বর মাসে ৪২ কোটি ১৪ লাখ লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আহরণ হয়েছে ৩৬ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। অক্টোবরে ৫৩ কোটি ৪৪ লাখের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আহরণ হয়েছে ৩৭ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।
দিনাজপুরের হিলি স্থল শুল্ক স্টেশনের উপ-কমিশনার বায়জিদ হোসেন জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩০ ভাগ বাড়িয়ে হিলি স্থলবন্দরের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে এনবিআর। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত এ বন্দর দিয়ে ৪ লাখ ৬৮ হাজার ২৪১ টন পণ্য আমদানি হয়েছে। যেখানে গত অর্থবছরের একইসময়ে ৬ লাখ ৬৪৪ টন পণ্য আমদানি হয়েছিল। এতে গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের চার মাসে বন্দর দিয়ে ১ লাখ ৩২ হাজার ৪০৩ টন পণ্য কম এসেছে। গত বছরের চেয়ে বিভিন্ন কারণে পণ্য আমদানি কমায় স্বাভাবিকভাবেই রাজস্ব আহরণ কমেছে। রাজস্ব আহরণ নির্ভর করে পণ্য আমদানির ওপর। আমদানি বাড়লে রাজস্ব বাড়বে। তবে গতবছরের চেয়ে বাজস্ব আয় বেড়েছে।
হিলি স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানি গ্রুপের সভাপতি হারুন উর রশিদ হারুন জানান, বিভিন্ন কারণে আমদানিতে কিছুটা ছন্দপতন হয়েছে। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে বিলাসবহুল পণ্য যেগুলো আমাদের এখন দরকার নেই সেই পণ্যগুলো নিরুৎসাহিত করে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস যেমন-চাল, পেঁয়াজ, আদা, রসুন কিংবা গো-খাদ্য, মৎস্য খাদ্য এই পণ্যগুলো আমরা শর্তসাপেক্ষে আমদানি করতে পারবো। এরইমধ্যে এই শর্তে এলসি চলমান। আগে যে সব পণ্য বেশি পরিমাণে বাংলাদেশে আসত সেগুলো এখন আসছে না। কারণ অন্যান্য দেশের মতো ভারত বিলাসবহুল পণ্য আমদানিতে নিরুসাহিত করছেন। এরই মধ্যে তারা গম আমদানি বন্ধ করে দিয়েছে, চিনির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
রপ্তানির বিষয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে আমরা বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করতে চাই কিন্তু ভারতীয় ব্যবসায়ীদের অনীহা, সেখানে তাদের কর্তৃপক্ষ না থাকা এবং সেখানে সেটের ব্যবস্থা না থাকা ও উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ অফিস না থাকায় আমরা বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করতে পারছি না। আমরা শুধু আমদানি করে যাচ্ছি কিন্তু রপ্তানি একেবারে নেই বললেই চলে।
তিনি আরও বলেন, হাকিমপুরে একটা পাটকল রয়েছে। সেই পাটের বস্তার ব্যাগ ভারতে রপ্তানি হচ্ছে কিন্তু হিলি দিয়ে হচ্ছে না। ট্রাকে মালগুলো বেনাপোল দিয়ে অথবা সোনামসজিদ দিয়ে রপ্তানি করতে হচ্ছে এতে রপ্তানির খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে। যদি ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এটি আলোচনা করে সমাধান করা যায়, তাহলে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করা সহজ হবে বলে জানান তিনি।
বিডি প্রতিদিন/এএ