মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির (৪০) একজন ভুয়া চিকিৎসক। শুধু তাই নয়, সে একজন প্রতারক। দীর্ঘ ৫ বছর ধরে শুধু অসুস্থ মানুষের সাথে প্রতারণা করে ক্ষান্ত হয়নি সে। প্রতারণা করে বিয়ে করেছে স্বাস্থ্যখাতের একজন উচ্চ পদস্থ এক কর্মকর্তাকে।
গতকাল মোবাইল কোর্টে এ ভুয়া চিকিৎসককে কারাদণ্ড দেয়া হয়।
জানা গেছে, কক্সবাজারের চকরিয়ার বেসরকারি জমজম হাসপাতালে দীর্ঘ ৫ বছর ধরে মেডিসিনের কনসালটেন্ট হিসেবে রোগী দেখে আসছেন মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির। তিনি ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস (নিনস) নিউরোলজিস্ট ডা. হুমায়ুন কবীর হিমুর বিএমডিসির রেজিস্ট্রেশন ব্যবহার করে প্রতারণা করে আসছিলেন। কিন্তু তার চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে স্থানীয় চিকিৎসকদের মধ্যে সন্দেহ ছিলো আগে থেকেই। কিন্তু কথাবার্তা, চালচলনে বেশ স্মার্ট ছিলেন বলে কেউ সাহস করেননি।
কিন্তু গত বুধবার সকালে উপজেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেস্ট ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. রাহাত উজ জামানের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান জমজম হাসপাতাল থেকে তাকে গ্রেফতার করে। কিন্তু তার দাপট এতটাই বেশি ছিলো যে ভ্রাম্যমাণ আদালতও ভড়কে যায়। পরে স্থানীয় চিকিৎসকরা অনেক খোঁজাখুঁজি করে বিএমডিসি রেজিস্ট্রেশনের আসল চিকিৎসক হুমায়ুন কবীর হিমু-র সাথে যোগাযোগ করলে তার ভুয়ার বিষয়টির সত্যতা মেলে।
জানা গেছে, গ্রেফতারকৃত মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির মুন্সিগঞ্জের সদর উপজেলার টরকীচর টরকী ইসলামপুর এলাকার দিদারুল আলমের ছেলে। অথচ বিএমডিসি রেজিস্ট্রেশনের আসল চিকিৎসককের বাড়ি গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে।
অভিযোগ আছে আটকৃত হুমায়ুন কবিরকে জমজম হাসপাতালের ২০১৯-২০-/২০-২১ অর্থ বছরের হাসপাতালে লাইন্সেস নবায়ন করার জন্য তাকে বিশেষজ্ঞ ডা. দেখিয়ে অনলাইন আবেদন করে।
চকরিয়া স্বাস্থ্য প: প: কর্মকর্তা ডা. শোভন দত্তের কাছে আটকের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জমজম হাসপাতালে হুমায়ুন কবির নামে একজন ভুয়া ডাক্টার দীর্ঘ ৫ বছর ধরে জাল সনদ দিয়ে চাকরি করে রোগিদের সাথে প্রতারণা করে আসছে। সাধারণ রোগীদের এমন অভিযোগের ভিত্তিতে সনদ যাচাই করার জন্য হাসপাতাল থেকে একজন ডাক্টারকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেস্টের সাথে পাঠানো হয়। তারা যাচাই করে দেখতে পায় তার ডাক্তারি সনদ জাল। আটককৃত ভুয়া চিকিৎসকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংলিষ্ট আদালতে পাঠানো হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মোতাবেক জমজম হাসপাতালের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অভিযানের সত্যতা নিশ্চিত করে চকরিয়া উপজেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেস্ট মো: রাহাত উজ জামান বলেন, অভিযুক্ত হুমায়ুন কবির মূলত একজন ভুয়া চিকিৎসক। তার সকল ডিগ্রি ভুয়া। তিনি বিষয়টি গোপন করে একই নামের অপর এক চিকিৎসকের (হুমায়ুন কবির সরকার) কাগজপত্র জালিয়াতি করে দীর্ঘ ৫ বছর ধরে চকরিয়া জমজম হাসপাতালে কর্মরত থেকে চিকিৎসার নামে প্রতারণা করে আসছিল।
এ ব্যাপারে নিনসের নিউরোলজিস্ট ডা. হুমায়ুন কবীর হিমু বলেন, একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককের নাম ব্যবহার করে রোগীদের সাথে প্রতারণা করা অন্যায়। আমি মনে করি তার সাথে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জড়িত। আমি ভুয়া চিকিৎসকের কঠোর শাস্তির পাশাপাশি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের শাস্তিও কামনা করি।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন