বগুড়ার গ্রামাঞ্চলে দেশি মুরগির ডিম ক্রয়ের ফেরিওয়ালাদের হাঁকডাক আর শোনা যায় না। আগে একটি ডিমের খাঁচা কাঁধে নিয়ে গ্রামাঞ্চলে প্রতিদিন বের হতো ডিম ক্রয়ের ফেরিওয়ালারা। গত এক দশক ধরে এ ধরনের দৃশ্যের অবসান হতে শুরু করে খামারে বিদেশি মুরগির ডিম নামার পর থেকে।
গত ৬ মাস থেকে বগুড়ার বিভিন্ন উপজেলার গ্রামাঞ্চলে দেশি মুরগির ডিম একেবারেই পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন উপজেলার ডিম ব্যবসায়ীরা। ফলে দেশি মুরগির ডিম খুঁজতে হয়রান হচ্ছেন এলাকাবাসী। পাওয়া গেলেও তা প্রতি হালি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা হতে ৭০ টাকায়। গত কয়েকমাস ধরে দোকানে কোনো হাঁসের ডিমও পাওয়া যাচ্ছে না।
বগুড়া সারিয়াকান্দি উপজেলার সদর ইউনিয়নের পারতিত পরল গ্রামের মুক্তা আক্তার জানান, আমার ছেলে অসুস্থ হয়েছিল। অসুখ সেরে ওঠার পর তাকে দেশি ডিম খাওয়ানোর জন্য বিভিন্ন এলাকা ঘুরে হয়রান হয়েছি। কয়েকজন আত্মীয়ের বাড়িতে খবর পাঠিয়ে মাত্র চারটি ডিম সংগ্রহ করতে পেরেছি। তাও আবার ৬০ টাকা হালিতে।
সোনাতলা উপজেলার পাকুল্লা ইউনিয়নের হুয়াকুয়া গ্রামের দিপালি আক্তার বলেন, আমার দুইটি দেশি মুরগি ডিম দিচ্ছে। ডিমগুলো আমি বিক্রি করি না। আমার নাতি বগুড়া শহরে পড়ালেখা করে, তার কাছে আমি ডিমগুলো পাঠিয়ে দেই।
সারিয়াকান্দি মাছ বাজারের ডিম ব্যবসায়ী শান্ত ডিম ঘরের স্বত্বাধিকারী রাজ্জাক মিয়া জানান, আগে দেশি মুরগির ডিম পাওয়া গেছে। গত ৬ মাস ধরে একেবারেই দেশি মুরগির ডিম খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বাজারে এ ডিমের এত চাহিদা যে, দেশি ডিম যদি পাওয়া যেত, তাহলে ১০০ টাকা হালি হিসেবে বিক্রি করলেও বিক্রি হতো। গত কয়েকমাস ধরে দোকানে শুধুই খামারের বিদেশি মুরগির ডিমই তিনি বিক্রি করেন। বিদেশি মুরগির লাল ডিম তিনি ৩০০ টাকা কেইচ ( ৩০টি ডিমে ১ কেইচ) দরে বিক্রি করছেন।
রাজ্জাক মিয়া বলেন, দেশি মুরগির ডিম তো দূরের কথা, আগে হাঁসের ডিম সচরাচর পাওয়া গেছে। এখন বর্তমানে সেই হাঁসের ডিমও পাওয়া যাচ্ছে না। বগুড়া শহরে দেশি মুরগির ডিম হিসেবে যেসব ডিম বিক্রি হয়, আসলে সেগুলো প্রকৃত দেশি কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। পাকিস্তানি মুরগির ছোট সাদা ডিমগুলো অনেক ব্যবসায়িরা দেশি মুরগির ডিম হিসেবে বিক্রি করছেন।
বগুড়া জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. সাইফুল ইসলাম জানান, শুধু সারিয়াকান্দিতেই নয়, সারা বাংলাদেশেই দেশি মুরগির ডিমের সংকট রয়েছে। একটি দেশি মুরগি বছরে ৫০ থেকে ৬০টি ডিম দেয়, অপরদিকে বিদেশি মুরগি বছরে ৩০০টির বেশি ডিম দেয়। তাই এটি পালন লাভজনক না হওয়ায় শুধুমাত্র গ্রামের বসতবাড়িতেই পালন করা হয়। আর বসতবাড়ির লোকজনরাই এ ডিম খেয়ে থাকেন। তাই বাজারে দেশি ডিম পাওয়া যাচ্ছে না।
বিডি প্রতিদিন/এমআই